• Uncategorized
  • 0

গ এ গদ্যে পায়েল ঘোষ

উদ্দেশ্য

সকাল ৬:৩০ দিন শুরু, দিনের প্রথম আধঘন্টা শুধু আমার জন্য যাতে সারা দিন টা অন্যের সাহায্যে নিজেকে লিপ্ত রাখতে পারি। ১০মিনিটের মধ্যে ready হয়ে ছাদের উপর ছোটো বাগানের রূপ ও গন্ধে দিনের শুরুটা আজ গল্পের মতো লাগে এটাও যে বাস্তবে সম্ভব কখনও ভাবতে পারিনি। টানা ২০ মিনিট meditation exercise করার পর সময় এসেছে চায়ের কাপের সাথে তৃষ্ণা মেটানোর সঙ্গে দুচোখ ভরে নিজের হাতের তৈরি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা এই ১০ মিনিট আমার দিনের সবচেয়ে অন্য রকম মুহুর্ত যা আমাকে সক্রিয় করে তোলে, প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে শক্তি সঞ্চালন করে।
সকাল ৮টা গেট খুলে কর্ম জগতে পা রাখতেই পাশের বাড়ির কাকিমা বলল কি রে কোথায় চললি? এত সকাল সকাল! আমি বললাম আজ আমাদের NGO র board meeting আছে। আসছি ! পরে কথা হবে। গেট বন্ধ করে এগিয়ে যেতে যেতে শুনলাম পাগলের আবার নাকি meeting, কত ই যে পাগলামি দেখলাম এই জীবনে। এই একটা ছোট কথা মনে করিয়ে দিলো কয়েক বছর আগের সেই পুরনো জীবন। অন্ধকারময় জীবন শুধু হারিয়ে ফেলার হাতছানি , একাকীত্বের হা হা কার , কাজে মনোযোগের অভাব, বিষন্ন মন, বিরক্তি বোধ, শরীরের নড়াচড়া বন্ধ , জীবনের ভালো লাগা বলতে কিছুই নেই সকাল থেকে সন্ধ্যা একটা ছোট ঘরে নিজেকে বন্দী করে রাখা। সম্পর্কের রং গুলো ক্রমশ আবছা ও ভাঙতে বসেছে।আলো দেখলে ভয় হয় অন্ধকারটাই ভালো ভয় করে না জীবনটা অন্ধকারের সাথে মিশে গেছে কিন্তু এই আলো সারাদিনের এত আলো এসব আর সহ্য হয় না । সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারি না অনেক কষ্টে হয়তো কাকভোরে হালকা ক্লান্তি ও ঝিমুনি আসে কিন্তু সেটা ১_২ ঘন্টা ছোট বিরতি জালনা দিয়ে সূর্যের আলো মূখে পড়তেই উঠে পড়া। আবার সেই একাকিত্বময় জীবন কাজ বন্ধ গত ৩ মাস ধরে জমানো টাকা গুলো শেষ হতে বসেছে। মা-বাবা সাথে সম্পর্ক আবছা হতে হতে এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ ঠিক বুঝতে পারি না সম্পর্ক আছে থাকলেও কতটা মাসে একটা ফোন! নাকি দিনে কোন সময় মা-বাবা র কথা মনে পড়বে তার অপেক্ষায় থাকা।এখন আর ফোন টা ও ring হয় না বহু মানুষ দিনের পর দিন ফোন করেছে কিন্তু মানুষের কি দোষ আমিই তো নিজেকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। কিছু ই আজ ভালো লাগে না, আমার জীবনের পছন্দের কাজ গুলো সব ই আজ ইতিহাস। শেষ কবে বাইরে পা রেখেছিলাম মনে পড়ে না। হঠাৎ দুপুরে door bell বাজল হাতে একটা লিফলেট দিয়ে চলে গেল। টেবিলের উপর রেখে আস্তে আস্তে আমার বদ্ধ ঘরে গেলাম, বাইরে বিকেল থেকে মেঘলা পর্দা সরিয়ে দেখলাম ঝড় উঠেছে পচন্ড হাওয়ায় জালনা গুলো খুলছে আর বন্ধ্ হচ্ছে , টেবিলের উপর থেকে কাগজ টা মুখে এসে পড়ল, কাগজ টা ফেলতে গিয়ে দেখলাম লেখা আছে বড় বড় করে চার টে অ্ক্ষর “মনকথা” পুরো কাগজ টা পড়লাম ফোন নম্বর যোগাযোগ করলাম। আগামী ৭দিনের workshop আছে limited seats আছে নিজের নাম registered করলাম কাল থেকে শুরু। আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরে পা রেখেছিলাম প্রায় ১মাস পর। নাম ডাকতেই গিয়ে বসলাম একটা ঘরে,ঘরটা অন্ধকার দরজা- জালনা নেই পাশে কেউ আছে কি না জানি না কাউকে চিনি না কোথায় এসে পড়লাম এর থেকে ভালো নিজের অন্ধকার জগত নিজে অন্তত চিন্ততে পারি। কিছুক্ষন বসে থাকার পর তখন আর ভালো লাগছে না বেরোনোর রাস্তা খুঁজতে শুরু করলাম কিন্তু রাস্তা খুঁজে পেলাম না। সাদা চকচকে একটা জিনিষ চোখে পড়ল উঠে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম দেখলাম একটা বোর্ড চোখে পড়ল লেখা আছে তাতে- বর্তমান অবস্থার কথা প্রকাশ করতে? বর্তমান মন খারাপ লাগার কথা প্রকাশ করতে? গত ৭ দিনের জীবনযাত্রা প্রকাশ করতে বলা হল? এক এক করে সব প্রকাশ করলাম তারপর একটা ছোট আলো জ্বলে উঠলো পাশে একটা চিরকুট রাখা লেখা ছিল কীভাবে নিজেকে দেখতে চাও? লেখাটা পড়ার সাথে সাথেই আলোটা আবার নিভে গেল এই ক্ষনিকের আলোকবিন্দু যেন আবার নতুন করে একটা উপলব্ধি তৈরি করল। চিৎকার করে বললাম আলো জ্বালাতে অন্ধকার ভয় করছে, আমি আলোতে ফিরতে চাই , অনেক আলো দেখতে চাই অন্ধকারটা ভয় করছে , আর ভালো লাগছে না অন্ধকার আলোতে ফিরতে চাই। আমার কথা শেষ হতেই একটা দরজা খুলে গেল এবং একফালি আলো ঘরে ঢুকে এলো। দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়ের ঘরে গেলাম টেবিলের উপর একটা কাগজে লেখা ছিল” তোমার জীবনের আলো- আঁধার রহস্য তোমার হাতের মুঠোয় তুমি কি ভাবে জীবনটা দেখবে সেটা তুমি ভাব? আলো বলতেই – ওই ঘরের সব আলো গুলো একসাথে জ্বলে উঠলো। তাকিয়ে দেখি আমার পাশে অনেক মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে এবং হাততালি দিয়ে আমার সাফল্য কামনা করছে। ওদের মধ্যে থেকে একজন প্রতিনিধি এসে বলল এই যে আপনি আপনার চারপাশে ছোট ছোট মেয়েদের দেখছেন ওদের নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই একটাই পরিচয় ওরা “মনকথা” র সদস্য এরা সবাই Trafficking victim আজ ওরা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে ও অন্যদের বাঁচাতে শিখেছে এই উদ্দেশ্যে নিয়ে ওরা বেঁচে থাকবে আগামীদিনেও। যাদের কিছু ই নেই তারা আজ চেষ্টা করছে এই ভাবে অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরাতে বহু মানুষকে। আপনি ও আমাদের সাথে থাকুন আমরা আপনাকে পেলে অনেক উপকৃত হব। Human trafficking is criminal offense.stopping human trafficking is our mission. আমি অপরাজিতা রায় বর্তমানে মনকথার Assistant teacher পদে নিযুক্ত এখন উওর কলকাতার আদি বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে থাকতে শুরু করেছি কাজ, পরিবারের সদস্য, আমার ছোট project নাম “উদ্দেশ্যে” এই নিয়ে এগিয়ে চলেছি। বাস কন্ডাক্টর ডেকে বললেন আপনার স্টপেজ এসে গেছে । আজ উদ্দেশ্যের প্রথমদিন উদ্দেশ্যের লক্ষ্য সবাই এখান থেকে নতুন করে বাঁচাতে শুরু করবে। আমি এবং আমার টিম আমরা সবাই মিলে অন্ধকার যাত্রীদের আলোয় আসার উদ্দেশ্যে অনুরোধ জানাচ্ছি ও সাফল্যতা কামনা করছি।
” জীবন একটাই কিন্তু উদ্দেশ্য হক অনেক”।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।