অথ শ্রী উপন্যাস কথা-তে প্রদীপ গুপ্ত – ধারাবাহিক – চতুর্থ পর্ব

পশমিনা

কাশ্মীর উপত্যকার দৈনন্দিন সমস্যা, রাজনৈতিক ঘাতপ্রতিঘাত ও প্রেমের এক অনুভূতিশীল জীবনালেখ্য।

— লেকিন বাবুসাব, কভি কভি সুন্দর হোনা ভি গুনাহ হোতি হ্যায়।
যুবকটির দিকে তখন আমার খেয়াল নেই, গাড়ি ধীরেধীরে এগিয়ে চলেছে। আমাদের কোনো তাড়া নেই। সেদিনকার আকাশে কোথাও একছিটে মেঘবিন্দুও নেই, আমরা রোপওয়ের গেট ছাড়িয়ে এগিয়ে চলেছি। আমাদের বাঁদিকে হেলিকপ্টার প্যাড। সেখান থেকে দুটো হেলিকপ্টার পর্যটক বোঝাই করে আকাশ থেকে কাশ্মীরের সৌন্দর্য দেখাচ্ছে।
মাত্র ষোলো হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে পর্যটকেরা আকাশে চক্কোর মারছেন। পনেরো মিনিট পরপর হেলিকপ্টারগুলো উড়ছে আকাশে।
আমার চোখের ডানদিকে বরফে মোড়া ভ্যালি আর বাঁদিকে একটা সরকারী দপ্তর। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে দুজন সশস্ত্র বর্ডার সিকিউরিটির জওয়ান।
— স্যারজি, আপনাদের ওখানে গোলাপবাগ আছে?
—- গোলাপবাগ মানে কি? গোলাপের বাগান?
আমি মনে করার চেষ্টা করি। আমার স্মৃতিতে ব্যারাকপুরে গঙ্গার ঘাটে খুব সুন্দর গোলাপের বাগান দেখেছি, এছাড়া বাকী যেটুকু সেসব সৌখিন বাগানে ফুটে থাকা গোলাপ। এছাড়া তো…
— স্যারজি, ইয়াদ হচ্ছেনা? লেকিন হোগা তো জরুর। আচ্ছা স্যারজি, এক বাত বাঁতাউ?
— হ্যাঁ, একশোবার জিজ্ঞাসা করো, জানলে উত্তর দেবো নইলে…
—- উধার বাগমে যো গুল খিলতি হ্যায়, সেসব গোলাপের গায়ের রঙ কি লাহু কি য্যায়সা?
— রক্তরঙা গোলাপ?
আমি মনে করার চেষ্টা করি, লাল আর রক্তলাল এ দুটো রঙের মধ্যে কতোটা ফারাক।
— স্যারজি এখানকার মেয়েদের রূপ কিন্তু গোলাপকেও হার মানায়।
এ কথাটা যদিও অনেকের মুখ থেকে শুনেছি কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কাশ্মিরী তরুণীকে — হঠাৎ করে মনের আয়নায় ভেসে উঠলো শাহানারার ছবি। যে অপূর্ব স্বর্গীয় রূপের ছটা আমি ওর মুখে দেখেছি তার কাছে গোলাপ তো কোন ছাড়, পৃথিবীতে এমন কোনো সৌন্দর্য নেই যে সৌন্দর্য ওর কাছে এসে মাথা নীচু করে না দাঁড়ায়।
— লেকিন কাশ্মীরমে এয়সা এক ভী গুলাব নহী হ্যায় জিসকা জিসম মে লহুকা…
মুহূর্তে কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো
— এই যে বরফের চাদরে মুড়ে থাকা ভ্যালি দেখছেন স্যারজি আর তিনমাস বাদেই এখানে বরফ ফুঁড়ে উঠে আসবে হাজার হাজার ফুলের চারা।
আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে ওর অসমাপ্ত কথাটা, – কাশ্মীরে এরকম একটা গোলাপও নেই যার হৃদয়ে রক্তরঙা ক্ষতচিহ্ন নেই। ভাবছি কথাটাকে মাঝপথে হারিয়ে যেতে দেবো কি দেবো না, এরকম সময়ে যুবক ড্রাইভার হঠাৎ ব্রেক কষলো।
— স্যারজি, দেখিয়ে কিতনে সারি আদমি নে বরফ মে মস্তি লেতে হ্যায়। চলিয়ে না, বরফ ছু কর দেখিয়ে, এরকম বরফ আপনি কোথাও পাবেন না, ইতনা ঠান্ডি ইতনা ঠান্ডি লেকিন এতো উত্তাপ এর বুকজুড়ে, স্যারজি চলুন আপনার কিছু ছবি তো তুলে দিই, ম্যাডামকে দেখাবেন দেখবেন ম্যাডাম ভি কিতনি খুশ হো যায়গি।
ছেলেটার কথাগুলো কি অগোছালো, এলোমেলো নাকি ও সেরকটা কিছু বলতে চেয়েও মন খুলছে না। আমার কোনটা করা ঠিক হবে বুঝতে পারছিনা, ওর মনে জমিয়ে রাখা পিণ্ডারির বাক্স খুলবো না কি ওর দিক থেকে মন সরিয়ে উপভোগ করবো এই সুন্দর গুলিস্তাঁ!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *