সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ২২)

পদচিহ্ন
ইদানিংকালের পাঁউশি অন্ত্যোদয় অনাথ আশ্রমকে জানতে গেলে বলরাম করণকে যেরকমভাবে তার খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে হবে, ঠিক সেই একইরকমভাবে জানতে হবে পঁচানব্বই সালের আর এক কিশোরী বর্তমানসময়ের যুবতী ময়না করণকেও।
যেসময় বলরামবাবু চোয়াল চেপে ধরে প্রতিজ্ঞা করছেন, তার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতাকে লাল চোখ দেখিয়ে বুকভরা স্বপ্নকে সাকার করে গড়ে তুলতে, ঠিক সেইসময়ে কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলের পদ্মপুকুরের দুই দম্পতির কাছে দত্তক কন্যা হিসেবে বাড়ি থেকে সামান্য যাকিছু জামাকাপড় বইপত্তর ছিলো সেগুলোকে বগলদাবা করে ময়না রওনা দিলো ভবানীপুর। বিষয়টাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বসে যে কোনোও মানুষের বোধক্ষমতা লোপ পাবে।
একদিকে বলরাম করণ তার বাস্তুভিটায় স্থাপনা করছেন স্কুল, বাড়িতে এনে আশ্রয় দিচ্ছেন বাবামাহারা অনাথ শিশুদের, নিজেকে নিজে বসানোর স্বপ্ন দেখছেন পালক পিতার আসনে, সেই বলরামবাবুর বড়ো মেয়ে ময়না তার পিত্রালয় ছেড়ে রওনা হলেন নিজের পিতাকে ছেড়ে অন্য এক পালকপিতার আশ্রয়ে।
ছেলেবেলা থেকেই করণ পরিবারের সদস্য হয়ে ময়না কিছু অধিগত মানবিক শিক্ষা নিয়ে বড় হয়ে উঠছিলো, একইসাথে লক্ষ্য করেছিলো তার বাবাকে, একজন মানুষকে, সেই মানুষটির লড়াইকে, কীভাবে আর্ত, পীড়িত, দুস্থ, অনাথ মানুষের জন্য নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও প্রাণপাত করা যায়, তার জলজ্যান্ত চলচ্ছবি। আর সে সমস্ত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করে তুলছিলো তার শিশুমনের মনোজগৎ। একইসাথে সেই শিশুটির মনও বিকশিত হয়ে উঠছিলো মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ব আর সেবার মানবিক ধর্মে।
ময়না করণ কখনওই খুব একটা উচ্চ মেধার ছাত্রী ছিলেন না। কিন্তু নিজেকে একজন সত্যিকারের সংগঠক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছিলেন নিজের অজান্তেই। সেকারনেই কলকাতা খুব বেশীদিন আটকে রাখতে পারেনি ময়নাকে, সেকেন্ডারি পরীক্ষার শেষেই এসে যোগ দিলেন বাবার কর্মকান্ডে। সদ্য যুবতী ময়না করণ যখন নিজেদের বাড়িতে গড়ে তোলা স্নেহচ্ছায়াতে এসে যোগ দিলেন বাসুদেব বর তখন সেই স্নেহচ্ছায়ার একজন আবাসিক। সম্ভবত তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।
ক্রমশ