সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ২৪)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান
দুপুরের খাবারটা খেয়ে ঘন্টাখানিক টানটান করে একটু নাক ডেকে নিলেন মিষ্টার তলাপাত্র। স্বামীকে লম্বা হতে দেখে ফুলটুসি সদ্য হ্যান্ডলুম মেলা থেকে কেনা তসরের ঘিয়ে শাড়ির সাথে লাল সুতির ব্লাউজ পড়ে, কপালে একটা বড়ো বেগুনী রঙের টিপ পড়ে সারাটা শরীরে ডিও স্প্রে করে, হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ ঝুলিয়ে ঘর থেকে লম্বা হলেন। বেরোনোর সময় কৌতুহল বশত একবার স্বামীর দরজা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে নিলেন। তলাপাত্র তখন তার পাত্রখানি টইটুম্বুর করে নাক ডেকে চলেছেন।
দৃশ্য দেখে ফুলটুসির বেশ মজা লাগলো। এরকম পেট সর্বস্ব মানুষ নন্দনে যাবেন! নিজের মনে মনে খুব একচোট হাসি হেসে নিয়ে রাস্তায় পা রাখলো কবিত্রি।
আমন্ত্রণ ফুডকোর্টের সামনে তখন আড্ডার বৃত্তটা বেশ জমে উঠেছে। ইতিমধ্যেই একরাউন্ড ফিস ফিঙ্গার আর কফি হয়ে গেছে। তখন যারা এসে পৌঁছোয় নি তারা এখন ছুকছুক করছে।
— আর এক রাউন্ড কফি হবে নাকি গো কবি দিদিভাই?
একটি বছর বাইশের যুবক বেশ ন্যাকান্যাকা গলায় আব্দার করলো। কথাটা যেন ফুলুর কানেই পৌঁছোয় নি, সে তখন অন্য একটি ছেলের সাথে বেশ মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে।
অন্য একটা ছেলে বেশ দৃপ্ত গলায় বলে উঠলো — যা না রে বাবা, উত্তমের থেকে নিয়ে আয় না, দিদিভাই কি কখনও না বলেন, আমরা কজন আছি যেন, একটু গুনে দ্যাখ দেখি, আর শোন, একটা করে কেক নিস দীপকদার দোকান থেকে।
— আমি ভাই আর কিচ্ছু খাবো না, বেলায় খেয়ে উঠেছি কি না!
বলেই ফুলটুসি উঠতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। আরে — ওটা কে? সাদা পাজামার ওপর হলদে রঙা পাঞ্জাবি, এক কাঁধে একটা কাঁধ চাদর, অন্য কাঁধে একটা ঝোলাব্যাগ, কে ওটা? ফুলটুসি ভালো করে দুচোখ কচলে নেয়। উঁহু, ভুল দেখছে না সে, এটা একেবারে আদি ও অকৃত্রিম মিষ্টার তলা — থুরি, নিজেই নিজের জিভে কামড় দেয় ফুলটুসি। নন্দন থ্রির ওপাশের বেঞ্চে বসে আছেন, কবি মিষ্টার তলা–, ধুস, বারবার ভুল হচ্ছে কেন ওর! বসে আছেন কবি রামতনু তলাপাত্র।
ততক্ষণে কবি তলাপাত্র ঝোলাব্যাগ থেকে একটা বই বের করে, বেশ কেৎ মেরে পায়ের ওপর পা তুলে বইটার পাতা ওল্টাচ্ছেন। কিছুক্ষণ বাদেই সেই বেঞ্চে এসে একজন সুবেশী মহিলা এসে বসলেন। তারও কিছুক্ষণ পর বদমাইশটা কি যেন বললো মহিলাটাকে। মহিলাটিও বেশ হেসে হেসে উত্তর দিলেন। ওরা দুজন হেসে হেসে কথা বলছেন। বইটা ব্যাগে ঢুকে গেলো। ওরা দুজনেই উঠে দাঁড়ালেন। ধীরপায়ে রবীন্দ্রসদনের সেকেন্ড গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। ফুলটুসির ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে কলার টেনে ধরে পাষণ্ডটার। খুব করে মুখ করে মহিলাটিকে। ফুলটুসি উঠতে যাবে। এমন সময়ে — কবি দিদিভাই, এই নাও গো, ধরো। কাগজের কাপতো একসাথে দুটো ধরা যায় না। এটার পয়সা দেওয়া হয়ে গেছে, বুঝেছো —
ক্রমশ