শুদ্ধর মায়ের ঘাড়ের দুপাশে কেমন যেন ছোট্ট গর্ত মতো আর গালের নিচের দিকেও একটা আঁচর ধরনের দাগ খুব চোখে পড়ে। শুদ্ধরা যখন একটু বড় হল মানে বছর ছয়সাত তখন থেকেই মায়ের ঐ দাগের বিষয়ে ওর আর রূপের ভীষন কৌতূহল, ওদের মায়েরই শুধু ওরকম দাগ কেন অন্যদের মায়ের কেন নেই।
মা পদ্মাবতী মৃদু হেসে কথাটা এরিয়ে যান। কিন্তু শুদ্ধ আর রূপ যখন ফাইভ-সিক্সে তখন মাকে একদিন যাকে বলে চেপে ধরল ‘বলতেই হবে’ তখন ওদের মা আর এরিয়ে যেতে না পেরে বললেন সেই ঘটনা।
পদ্মাবতীর যখন ছয়মাস বয়স,তখন ওনার মা সুরভীদেবী ছোট্ট পদ্মাকে নিয়ে গেছেন ওনার বাপের বাড়ী শিবনিবাসে। বর্ধিষ্ণু গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে একটা ছোট্ট নদী তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে। নদীর ওপারে একদম গভীর জঙ্গল। রাতে গোয়াল ঘরের দরজা ভালো করে না আটকানো থাকলে মাঝেমধ্যেই গোয়ালের ছোট বাছুর বা ছাগল হারিয়ে যায়। কোনদিন আর ওগুলোর কোন হদিস মেলে না। তবে অনেক পুরোনো গ্রাম, বহুদিন ধরে মানুষজন এই গ্রামে বাস করছে কোনদিন মানুষজনদের তেমন কিছু বিপদ ঘটেনি, একটু সতর্ক থেকেই নিশ্চিন্তে বাস করে আসছে সকলে। পদ্মাবতীর মা সুরভীদেবীর মাবাবা অনেকদিন আগেই স্বর্গবাসী হয়েছেন। দাদা ষষ্ঠীচরনবাবু এলাকার ধন্বন্তরী ভাক্তার। খুব তার নামযশ। দাদা আর বৌদিই বলতে গেলে সুরভীদেবীকে সন্তান স্নেহে লালন করে বিয়ে দিয়েছেন। ষষ্ঠীচরনবাবুর বড় দালানকোঠার সামনে আর পিছনদিকে লম্বাচওড়া বারান্দা। সন্ধ্যাবেলায় সামনের দিকের বারান্দায় ধন্বন্তরী ডাক্তার বসেন হাতাওয়ালা একটা ইজিচেয়ারে। সেইসময় ওনার কাছে রোগী আসে, এমনি গ্রামের মানুষজন আসে, ওষুধ দেওয়া, রোগী দেখা, গল্প আড্ডা, সন্ধ্যাকালীন চা সবই চলে ঐ বারান্দায় বসে। আর ঠিক সেইসময় পিছনের বারান্দায় রাতের রান্না করেন ষষ্ঠীচরনবাবুর স্ত্রী শিবানীদেবী। একপাশে বাড়ীর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা লন্ঠনের আলো জ্বেলে পড়তে থাকে। বড়দালানের আরএক কোনায় ঢেঁকিতে ধান কোটা চিঁড়ে তৈরী এইসব হয়। বারান্দা থেকে নেমেই উঠোন। ডাক্তারবাবুর বাড়ীতে বেশ কয়েক জন আশ্রিত মানুষ থাকেন। পিছনের বারান্দা থেকে নেমে উঠোনের ডানদিকে তাদের জন্য কয়েকটা মাটির দালান। আর বাঁদিকে প্রথমেই গোয়ালঘর তারপর একটা বড় গন্ধরাজ লেবুর গাছ। উঠোন শেষ হয়েছে পুকুরপাড়ে এসে। পুকুরটা আম জাম নারকেল গাছ দিয়ে ঘেরা, সামনের দিক বাদ দিয়ে পুরো বাড়ীটাই অনেক উঁচু আর শক্ত পাঁচিল দিয়ে ঘেরা যাতে কোন জন্তুজানোয়রই সহজে ঐ পাঁচিল টপকে এপারে আসতে না পারে। সামনে দিয়ে গ্রামের রাস্তা চলে গেছে। ঐ রাস্তা একদিকে মাঝদিয়ার দিকে যাবার বড় রাস্তায় মিশেছে অন্যদিকটা নদীর পাড়ে গিয়ে শেষ হয়েছে।
তখন সবে গ্রামের ঘরে ঘরে সন্ধ্যার শাঁখ বাজা শেষ হয়েছে, মন্দিরে আরতির কাঁসরঘন্টার আওয়াজও প্রায় স্তিমিত। কালীপূজোর পরের প্রথম আমাবস্যা সেদিন, বেশ হিম পরে রাতে। সকাল উঠলেই দেখা যায় দূর্বাঘাসের ডগায় শিশির আর শিউলি ফুলের অপূর্ব আলপনা। শিবানীদেবী সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালিয়ে সারাবাড়ী ধূনো ঘুরিয়ে রান্না চাপিয়েছেন। একটু আগেই গোয়ালঘরে গরুগুলো খুব ডাকছিল। কচি ভালো করে দেখে নিয়ে গোয়ালঘরের দরজা শক্ত করে আটকে দিয়েছে। সুরভীবালা ঘুমন্ত পদ্মাবতীকে দালানের একদিকে নিচু দোলনায় শুইয়ে রেখে বৌদির কাছে বসে শ্বশুরবাড়ীর গল্প করছে। কয়েকহাত দূরেই বাড়ীর ছেলেমেয়েরা লন্ঠনের চারিপাশে বসে দুলে দুলে স্কুলের পড়া তৈরীতে মগ্ন।
গরুগুলো আজ কেমন যেন ছটফট করছে, গোয়ালঘর থেকে ওদের বারবার নরাচরার শব্দ আসছে। শিবানীদেবী কচিকে বললেন আর একবার গোয়ালঘরটা দেখে আসতে।
এমনসময় বিদ্যুতের মতো কিছু বারন্দায় এসে আবার ফিরে নিমেষেই মিশে গেল উঠোনের অন্ধকারে। চারিদিকে একটা বোটকা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। শিবানীদেবী কিযেন ভেবে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখলেন ফাঁকা দোলনাটা জোরে দুলছে। উনি জোরে চিৎকার করতে গিয়েও নিজের মুখ চেপে ধরে সামনের বারান্দার দিকে ছুটলেন। সেখানে পাড়ার অনেক লোকজন বসে আছে, শুধু বললেন পদ্মাকে মনেহয় বাঘে নিয়ে গেল। কোন কথা নয়, শুধু টর্চ জ্বালিয়ে সবাই দেখুন কোনদিকে গেল”। নিজে ঘর থেকে বড়শেলের চর্চ বার করে আনলেন। বোটকা গন্ধটা বাতাসে বেশ প্রকট তারমানে বাঘ আশেপাশেই আছে বেশিদূর যেতে পারেনি তখনও। যারা ঐ সময় বাড়ীতে ছিলেন বাড়ীর চারিদিকে টর্চ ফেলে দেখতে লাগলেন, এমনসময় যেন শিশুর কান্নার শব্দ পাওয়া গেল কাছেই। সেই কান্নার শব্দ লক্ষ্য করে টর্চের আলো ফেলতেই দেখা গেল গন্ধরাজ লেবু গাছের তলায় টর্চের আলোয় দুটো চোখ যেন জ্বলছে, দুই থাবা সামনের মাটিতে রেখে বসে আছে সেই বাঘ আর কাঁথা জড়ানো পদ্মাবতী একদম তার থাবার সামনে, কেমন যেন গুমরে গুমরে কাঁদছে পদ্মা, যেন খুব ভয় অথবা ব্যাথা পেয়েছে।
চারিদিক থেকে টর্চের আলো পড়াতে বাঘটা বোধহয় হতচকিত্ হয়ে পড়েছে কোন রাস্তা দিয়ে বেড়বে ঠিক করতে পারছে না।
ঠিক এইসময় শিবানীদেবী নিজের মনেই বলে উঠলেন “আমার বাড়ীতে এসে সুরভীর এতবড় সর্বনাশ আমি হতে দেব না।”
“সবাই একসাথে বাঘের চোখের উপর আলো ফেলে রাখো বাঘ যেন নড়তে না পারে” বলেই কেমন এক ঘোরের মধ্যে শিবানীদেবী দৌড়ে বাঘের সামনে থেকে কাঁথা সুদ্ধ পদ্মাকে টেনে বুকের মধ্যে জড়িয়ে পিছনের দালানের উপর এসেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। টর্চের আলো এইসময় একটু সরে যেতেই বাঘ একলাফে সব লোকজনদের পাশ দিয়েই সামনের রাস্তায় গিয়ে পড়ে নদীর দিকে উধাও হয়ে গেল।
বাড়ীর মহিলাদের মধ্যে কেউ শিবানীদেবীর চোখেমুখে জল দিতে লাগল আর সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল পদ্মাকে নিয়ে। পদ্মার কাঁথা সরিয়ে দেখা গেল ঘাড়ের দুপাশে দুটো দাঁতের দাগ তবে কাঁথার মধ্যে দিয়ে দাঁতটা বেশী গভীর ক্ষত করতে পারেনি। আর গালের নীচের দিকে একটু আঁচরের দাগ। সব ক্ষতগুলো থেকেই রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে আর ব্যাথায় যন্ত্রনায় পদ্মার কান্না ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। ষষ্ঠীচরনবাবু তারাতারি ভাগ্নীর সবরকম চিকিৎসা করে বোন সুরভীর কোলে দিয়ে ঘুম পারিয়ে কোলের মধ্যেই রাখতে বললেন। এদিকে অনেক চেষ্টা করেও শিবানীদেবীর জ্ঞান আর ফিরছে না। ষষ্ঠীচরনবাবু পরীক্ষা করে দেখে বুঝলেন শিবানীদেবী আর ইহজগতে নেই। প্রচন্ড উত্তেজনার জন্য ওনার হার্টফেল হয়েছে।
কাজকর্ম সব মিটে গেলে সুরভীদেবী সেই যে শ্বশুরবাড়ী রানাঘাটে ফিরে এলেন আর কোনদিনও বাপের বাড়ি শিবনিবাসে গেলেন না। এক অপরাধবোধ কাজ করেছিল ওনার মনে যে বোধহয় ওনার অসচতেনতার কারনেই বৌদি শিবানীদেবীর মৃত্যু ঘটেছিল।
এইঘটনার মাসখানেক পরে নদীর চরে একদিন একটা বাঘকে মরে পরে থাকতে দেখা গেল। গ্রামের লোকরা সব দেখে টেখে বলল ‘এ তো সেই বাঘটাই, কারন ঐ বাঘটাই কেবলমাত্র এই গ্রামে এসে রক্তের স্বাদ পেয়েছে তাই ও বারবার এই গ্রামের দিকে আসত, অতএব এটাই সেই বাঘ, কিন্তু মরল কিভাবে গায়ে তো কোন আঘাতের চিহ্নই নেই?”
বাঘটাকে উল্টেপাল্টে দেখে বোঝাগেল যে মৃত্যুটা বিষক্রিয়ায়। সামনাসামনি না বললেও একটা কথা হাওয়ায় ভেসে বেড়াতে লাগল যে ষষ্ঠীচরনবাবু ওদের রাখাল কচিকে দিয়ে কোন বিষ মাখানো মরা মুরগী কিম্বা ছাগলকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে বাঘটাকে মেরেছেন।
সেইসব ঘটনার পর আজ বহুবছর কেটে গেছে। ষষ্ঠীচরনবাবুও আর বেঁচে নেই। ওনার একমাত্র ছেলে মানে পদ্মবতীর মামাতো দাদা স্বাধীন কলকাতায় কি যেন একটা কাজ করে তাতে নাকী বেশ নাম করেছে আর কলকাতাতেই থাকে।
পুরো গল্পটা শোনার পর শুদ্ধ আর রুপ তো আবদার ধরে বসল যে ওরা মায়ের মামার বাড়ির সেই গ্রাম আর সেই যায়গাটা দেখতে যাবে যেখানে ওদের মাকে বাঘটা থাবার কাছে নিয়ে বসে ছিল। পদ্মাবতী বুঝালেন যে ঐ বাড়িতে এখন কেউই প্রায় থাকেনা, কে জানে বাড়িঘরই আছে কিনা! কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। কিন্তু ছেলেদের একই কথা কিচ্ছু থাকতে হবে না, শুধু জায়গাটা দেখব আর চলে আসব। ছেলেদের জেদের কাছে হার মেনে পদ্মাবতী নিমরাজি হয়ে বললেন “ঠিক আছে তোদের বাবা স্বাধীনদাদার সাথে যোগাযোগ করুক, দাদা যদি যেতে বলেন তবেই যাওয়া হবে”। স্বাধীনবাবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তো সাগ্রহে বোন আর ভাগ্নেদের আমন্ত্রণ জানালেন।
তারপর এক কুয়াশামাখা ভোরে পদ্মাবতী দুই ছেলেকে নিয়ে বেড়িয়ে সকাল দশটার সময় শিবনিবাসের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখে স্বাধীন দাদা আর সেই কচিদাদা গাড়ী নিয়ে পদ্মাবতীদের জন্য অপেক্ষা করছে। দাদা ওদের দেখে খুব খুশী হলেন। বাড়ীতে এসে পদ্মাবতী দেখলেন যেমন বাড়ীর গল্প মায়ের থেকে শুনেছিলেন বাড়ীটা ঠিক সেই রকমই, এমনকি গন্ধরাজ লেবু গাছটা পর্যন্ত যেন একই রকম রয়ে গেছে।
পদ্মাবতীর মনের কথা পড়তে পেরে দাদা বললেন “কচিদাদা পরিবার নিয়ে কয়েক বছর ধরে এখানেই আছে তাই সবকিছু এত পরিষ্কার ঠিক সেই সময়কার মতো যখন তুই এইটুকু ছিলিস”। শুদ্ধ আর রূপ খুব উত্তেজিত ভাবে স্বাধীনমামার সঙ্গেই সব কিছু ঘুরেঘুরে দেখতে লাগল।”
বিকালবেলা যখন পদ্মারা চলে আসবে তখন স্বাধীনদাদা বললেন “আজ থেকে যা, আজ আমাবস্যা, প্রতি আমাবষ্যায় এই বাড়িতে নাকি কি এক আত্মাকে দেখা যায়, গ্রামের প্রায় সবাই ই দেখেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কারোর কোন ক্ষতি সে করেনি। এত বছর পরে যখন এসেছিস দেখেই যা না, ছেলেরাও দেখুক। ওদেরও একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে।” দাদার কথা ফেলতে পারলেননা পদ্মাবতী, থেকেই গেলেন ছেলেদের নিয়ে মামার বাড়ীতে।
সারাদিনের পরে সন্ধ্যার শাঁখ যখন বাড়ীতে বাড়ীতে বেজে উঠেছে, দূরের মন্দির থেকে কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ তখনও থেমে যায়নি সেই সময় দাদা বললেন ” পদ্মা, ছেলেদের নিয়ে ঘরে গিয়ে বোস আর বারান্দার দিকের জানলা দিয়ে দেখ, সেই আত্মার আসবার সময় হয়েছে। কিচ্ছু হবে না কোন ভয় নেই। আমি আছি তোদের সাথে।”
পদ্মাবতী ছোটথেকেই খুব সাহসী কিন্তু তারও আজ কেমন যেন বুকের মধ্যে ঢিবঢিব করতে লাগল। তবুও দাদার কথা মেনে দুই ছেলেকে জরিয়ে ধরে সাহসে ভর করে জানলার কাছে গিয়ে বসলেন।
আমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকার চারদিকে, বারান্দায় ও অন্ধকার, বেশ একটুপরে হঠাৎই যেন একটা হলুদ কালো ডোরাকাটা অবয়ব লাফ দিয়ে বারান্দায় এল আবার নিমেষেই বারান্দা থেকে তরিৎ গতিতে আবার অন্ধকারে মিশে গেল। চারিদিকে বোটকা বিশ্রী একটা গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
পদ্মাবতী কি এক অভিঘাতে স্তব্ধ। শুদ্ধ আর রূপ মায়ের কোলে মূখ গুঁজেছে। একটু পরে কচিদাদা তার পরিবার, স্বাধীনদাদা সবার গলা পাওয়াতে পদ্মাবতী যেন হুঁস ফিরে পেল। ঘরের ভিতর এসে দাদা চেঁচামেচি জুরে দিলেন ” কিরে তোরা সব বাঘের আত্মা দেখে ভয় পেয়েছিলি নাকি? তাহলে তো আমার হাতযশ আছেই বলতে হবে”। “তার মানে কি দাদা”। পদ্মাবতী শুধায়। স্বাধীনবাবু বলতে থাকেন….
বাবা মারা যাবার পর এই বাড়ীটা পুরো ফাঁকা হয়ে গেল। কচিদাদা তার বাড়ীতে গিয়ে থাকত। আর আমি তো আমার কাজ নিয়ে কলকাতায়। ফাঁকা বাড়ি পেয়ে কিছু চোরডাকাত রাতে এখানে আস্তানা গেড়ে থাকে বলে খবর ফেলাম। কচিদাদাকে বলতেই কচিদাদা এখানে থাকতে এল। কিন্তু দুদিনের মধ্যে কচিদাদাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ওরা তাড়িয়ে দিল। আমি এসে কদিন থাকলাম, কারোকে দেখলামও না আর কেউ আমাকে বিরক্তও করল না। আসলে জানতই তো যে আমি দুদিন পরে চলে যাব। কলকাতাতে চলে যেতেই আবার সেই দুষ্ট লোকগুলো বাড়ীতে থাকতে শুরু করেছে জানতে পারলাম। উঁহু এভাবে হবে না। আমার তো কাজ ফেলে গ্রামে বসে থাকাও সম্ভব নয়! ভাবতে থাকলাম বাপঠাকুরদার ভিটে কি করে চোরডাকাতদের হাতে চলে যাওয়া থেকে বাঁচাবো। হঠাৎই একটা কথা মাথায় এল। তোরা হয়ত জানিস না আমি কলকাতায় সিনেমায় থিয়েটারে, বিভিন্ন বড় বড় পার্ক তারপর ব্রিজ মন্দির এসব স্হানে আলোছায়ার কাজ মানে ইংরাজিতে যাকে বলে লাইট অ্যান্ড শেষের কাজ তাই করে থাকি। যেমন ধর থিয়েটারে বা নাটকে ট্রেন আসার দৃশ্য, সমুদ্রের ঢেউ, নদীতে নৌকা চলছে এইরকম, আবার সিনেমায় হয়ত কোন পশুপাখির দৃশ্য এই ধরনের দৃশ্যপট তৈরী করি। এইসব কাজ করতে আমি বিদেশেও গেছি আর অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতাটা এখানে কাজে লাগালাম। এই যে বাঘের আত্মার আসার ব্যপারটা আসলে পুরোটাই একটা আলোছায়ার কাজ। আর ঐযে বাঘের গায়ের গন্ধটা ওটা আমি বিদেশ থেকে আনিয়েছি। প্রতি আমাবস্যার সন্ধ্যার পর কচিদাদা ঐ সিস্টেমের সুইচটা অন করে চারিদিকে বাঘের গায়ের মতো গন্ধটা স্প্রে করে দেয়। ব্যাস..আর কি অনেকেই দেখেছে আর ভয়ে পালিয়েছে। তারপর থেকে কোন চোরডাকাতই আর এই বাড়ীর ত্রিসীমানায় ঘেঁসে না। বাঘ ঘাড় মটকে দেবে তার ভয় নেই! কি বলিস শুদ্ধ …রূপ?” বলেই হো হো করে হেসে ওঠেন ওদের স্বাধীনমামা। শুদ্ধ আর রূপ দৌড়ে গিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরে বলে “মামা ইউ আর জিনিয়াস”। আর মামাও কলকাতায় নিয়ে গিয়ে ওনার করা সব আলোছায়ার কাজগুলি ওদের দেখাবেন বলে কথা দেন।