• Uncategorized
  • 0

সাতে পাঁচে কবিতায় প্রদীপ দে

পেত্নীর সাধের পিরিত

আমি হলাম গিয়ে রাত জাগা এক পাখি। আর নামটা খুলে বলতে হবে?
পাঠকেরা খুব গুনী আর অবশ্যই বিচক্ষণ ব্যক্তি।
ঠিক ধরে ফেলেছেন।
সারারাত অনেক বড় অনেক গভীর। কি যে করবো ভেবে কুলকিনারা করে উঠতে পারি না।
আমার স্বভাব কেমন জানেন?
কুটিল এবং জটিল।
কেবলই খুঁতখুঁতে স্বভাবের।
সবেতেই সন্দেহবাতিক।
এটা কোন রোগ নয়।
সব মানসিক!
একদিন মাঝরাত তা প্রায় আড়াইটে হবে, ছাদে পায়চারি মারছি। হাতে জ্বল জ্বলন্ত নেভিকাট। টানছি আর ধোঁয়ার কুন্ডলী ছাড়ছি -এটা আমি ভালোই পারি।
হঠাৎই সো সো করে বাতাস বয়ে গেল। বেশ মিষ্টি বাতাস। গরমকালে একেবারে কোল্ডড্রিঙ্কের মত ডিস্পলে করে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে নেকী সুরে ভৎসনা — আ মলো ব্যাটা আঙুল থেকে আগুনটা ফেল না!
চমকে উঠলাম — মেয়েলি গলা মনে হওয়ায়।
আমিও কম যাইনা। নরম গলায় কাশলাম — কেন রে হতচ্ছাড়ি – মুখপুড়ি!
আর যায় কোথায়। ?
তুইতো এক চোখো -কানা –আগে আগুনটারে ফেল, তারপর আমার আদিখ্যেতা দ্যাখ –কাকে বলে পিরীত!
হাত থেকে সিগারেট খসে গেল। আগুনের ফুলকি নিভে যেতেই কেলো কুচকুচে এক পেত্নীর উদয় হল। একদফা ধেই ধেই নৃেত্য জুঁড়ে দিল আমাকে চারিপাশ বেষ্টিয়ে।
অন্ধকারে ভালো করে ঠাহর করে বুঝলাম সারা শরীর জুঁড়ে সাদা চামড়ার অস্পষ্ট এক প্রলেপ।
ও বুঝে গেল আমি কি দেখছি —
— এই শোন বাঁদর, আমার নাম ছিল ইন্দ্রানী আর এগুলি হলো আমার পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন।
— ওহঃ বুঝেছি। তোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল?
— একদম ঠিক ঠাউরেছিস।
— বল না শুনি একটু —
— অল্পবয়সে প্রেম। সে ছেলে হ্যাবলার আমার সাথে কত পেয়ার! মাঠে -ঘাঠে জঙ্গলে সব ঘুরে শেষে বিয়ে। ততক্ষণে ব্যাটা আমায় ছিবড়ে বানিয়ে ছেড়েছে। তারপরেই ছুঁকছুঁকানি শুরু। প্রথম প্রথম লুকিয়ে চুরিয়ে তারপরে সামনাসামনি। বাঁধা দিতেই মারধোর। শেষে কেরোসিন মেরে জ্বালিয়েই দিল নেশাখোর!
আমি কাঁদো কাঁদো মুখে জানালাম — ছিঃ ছিঃ!
— আর ছিঃ ছিঃ করতে হবেনি! সব ব্যাটার ছা-ই। এই এইরকমই।
পেত্নীর মুখ বেঁকে গেল।
আমি খুশি করার জন্য — না না সবাই এক জাতের নয়। — বললাম।
সাপের মত ফোঁস করে উঠলো সে — চল তো তোর ইস্ত্রীর কাছে নিয়ে চল আমায়, দেখা মুরোদ তোর?
এই ছেড়েছে! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়!
এইবার মানে মানে কেটে পড়াই ভালো।
এইসব ভাবছি। এমন সময়ে পেত্নী আমার একেবারে কাছে চলে আসতে চাইলো — এই চল না আমরা ঘর বাঁধি — আমার যে খুব সাধ জাগে — মরেও যে আয়েশ হল না রে!
আমি বিপদ বুঝে কুঁকড়ে গেলাম — তা কি করে হয়? ঘরে বউ আছে না?
— তাতে কি রে? একটায় কি কিছু মেলে রে?
— না, আমি তো হলাম গিয়ে মানুষ — আর তুই না ভুত?
— তালে কি? মানুষ কি ভুত নয়? আর হতে কত সময় লাগে রে?
বলেই আমার পাছায় এক জোরালো লাথি কষিয়ে দিল পেত্নী।
আমি হুড়মুড় করে ন্যাড়া ছাদ থেকে একবারে নীচে ধপাস!
— কি হলো? কি হলো? — ধড়ফড় করে পাশে শোয়া গিন্নি চেঁচামেচি জুঁড়ে দিল। ছেলে, মেয়েরা দৌড়ে ছুটে চলে এল — কি ব্যাপার? কি ব্যাপার?
আমি খাট থেকে সটান মেঝেতে ছিটকে পড়েছি।
হৈ হৈ ব্যাপার!
এতকিছুর মধ্যেও চালাক বউ মুখ ঝামতা দিয়ে উঠলো — ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কি পেত্নীর সঙ্গে প্রেম পিরিতির ব্যাপার চলছিলো , না কি ?
শেষ ? প্রেম,পিরিত আর ভালোবাসার শেষ নেই!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *