গদ্যের পোডিয়ামে পিয়াংকী – ধারাবাহিক – (দশম পর্ব)

ওরফে তারাখসা এবং তুমি বালক

নলিনাক্ষকে বলেছি যে কথা, তা শুধু তাকেই বলা যায়। সে মেঘাবৃত বরাত আমার, সে-ই সম্ভোগরমণ। মেধাবী পুরুষের উদাহরণ দিতে গিয়ে বারবার আমি তাকেই নির্বাসিত করেছি নিজস্ব অতলে। বিষ্ণুর অবতার সেজে সে দাঁড়িয়ে থেকেছে বসন্তের দিনে। ‘ময়ূর হবো’ বলে আঁচল খোলা বুকে জড়িয়ে নিয়েছে দীর্ঘ সময়। হলুদের লালসা সে, আমি তার কাছে ভরাকোটালের মতো নিশ্ছিদ্র ছায়া। সামান্য এই ছোঁয়াখানি পেতে নদী ডিঙিয়েছে সে।

… এভাবেই তো কথার গায়ে বৃষ্টি জমে। সে উবু হয়ে শুলে দেখতে পাই বুকের হাড়পাঁজর অবধি। এই যে প্রতিদিন রঙ্গনের রং বদলায় ম্যান্ডেভিলায় ফুল আসে — ফুলের সাথে প্রজাপতি, প্রজাপতির সাথে দু’আনা ভালো থাকা, এসবই কবিতার উল্লেখযোগ্য পঙক্তি। আমি ইতিহাস সৃষ্টি করতে আসিনি, এসেছি বর্তমানে মগ্ন হতে। বুকের ভিতর বর্তমান। নগরের ফটক, মাঝরাতের রাস্তায় মৃদু আলো, বৃষ্টি থামার পরের দস্যুজীবন এই তো আদতে ভিটেমাটি। মাটি ফুরোয় না কখনো, এটা লক্ষ্য করেছি বলেই সাহস পাই। লেখার সাহস, ভিতরের কথা বলবার সাহস। সৎ সাহসটুকু ছাড়া অন্য কোনো সঞ্চয় নেই।

সঞ্চয় নেই তাতে কী, আক্ষেপ নেই যে! আক্ষেপ অপূর্ণ করে, জন্ম দেয় ক্ষোভ। ক্ষোভ ক্ষতিকর, এর মুণ্ড আছে ধর নেই অথবা ধর আছে মুণ্ড নেই। জহিন খোঁজ ক্ষোভ রাখতে দেয় না আমাকে অথচ এই ক্ষোভ পুষে রেখেছেন যারা তারা অসুস্থ। আমি অসুস্থ নই,নলিনাক্ষ নয়। গ্যালাক্সি রোটেশন হলে আমি আর সে একসাথে পদ্মবনে যাই। তন্নতন্ন করে তুলি কাদামাটি, হাতে হাতে উঠে আসে পদ্মফুল পদ্মপাতা। বসতে ফুল ফোটাই, পাতাও। নলিনাক্ষকে জিজ্ঞেস করা হয়নি পাতা তার পছন্দ কিনা, অথচ এই দু’জনের সংসারে পাতা বাড়ছে,গাছের উচ্চতার মতোই। আজকাল অবশ্য সে আকাশবিলাসি হয়েছে। কথায় কথায় ছাদে যায়, নিজের মাথার সাথে মাপ দেয় সাদা মেঘের। গাছে জল দিতে দিতে তাকে দেখি,কীভাবে কৃতী হতে পারে কেউ।

লোভ করি। স্পর্শঘটিত লোভ নাকি আয়ু বাড়ায়। আমার প্রবল আস্থা আয়ুতে। ফ্রিদা স্বপ্নে আমায় স্বাধীন হতে বলেছিলেন, একজোড়া রাজহাঁস আমার দিকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন জলসমেত, এই রাজহাঁসই নাকি আয়ুকালের উৎস । সেই থেকে বুকের ভিতর ডোবা কেটেছি। বর্ষাতে সেখানে জল পড়ে, থৈথৈ করে আমার আয়ু। জল পেলে আরও বেশি ঝকঝকে হয়ে ওঠে জন্ম।

সে স্বপ্ন আর কখনো দেখিনি আমি, নলিনাক্ষ এসব শুনে, মৃদু হাসে। ওঁর ঠোঁটে লেপ্টে থাকা স্পষ্ট চুম্বন আমাকে আর ফ্রিদার অভাব বুঝতে দেয় না। শূন্য আলো হয়ে ফিরে গেছেন ফ্রিদা, দিয়ে গেছেন একটি নলিনাক্ষ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *