• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (পর্ব – ৯)

স্টেশন থেকে সরাসরি

২১শে জুন ২০২১
৬ই আষাঢ় ১৪২৮
সোমবার

আষাঢ়মাস।বর্ষা এসে গেছে। সবদিকে ভেজা ভেজা ছোঁয়া। এখন সবুজ আরও গাঢ়, লাল আরও তীব্র, নীল আরও কটকটে।জানালা খোলা। জলের ছাঁটে বিছানা সমেত ভিজে যাচ্ছে সব।এ সময় দূরপাল্লার ট্রেন যদি পাই,যদি ধারের সিট পাই,কানে হেডফোন থাকবে, ধীমি তালে বাজবে সেতার, উল্টোদিকে প্রেমিকের দৃষ্টি।
আসলে আষাঢ় মাসে এসব মনে হয়। মেঘলা দিনে চব্বিশ ঘণ্টা জল বয়ে যায় বুকের ওপর দিয়ে।বিপদসীমার কাছেই দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া দেখি।ট্রেন থেমে থাকে। লাইনে থইথই করে বৃষ্টি।ধারের পাথরগুলো হাত বাড়িয়ে ডাকে।কামরায় তখন উষ্ণতা দেয়া-নেয়া। আমি চুপচাপ বসে থাকি কোণের দিকের একটা সিটে। ট্রেনের বাইরে বৃষ্টি পড়ে, ভেতরের কেউ কেউ হাত দিয়ে লোফালুফি করে সেই বৃষ্টিফোঁটা। আমি দেখি।দেখার আনন্দ, করার থেকে অনেক বেশি।
কাজ শেষ করে বাড়ি আসি কাকভেজা হয়ে, আগে মা অপেক্ষা করত, ফোন করে করে এমন অবস্থা তৈরী করে দিত যে বিরক্ত হতাম, আজ আর মা নেই। কিন্তু আজও কেউ কেউ অপেক্ষা করে।ফোন করে বারবার। অটোর ভাড়া। দরকার হবে বুঝে পার্সে ভরে দেয় ঝনঝনে খুচরো।মুখের দিকে তাকায়, বুঝতে পারে খিদে পেয়েছে,কিনে আনে তন্দুরি আর নানরুটি। মাঝরাত। ধারাবাহিক জমা দেবার দিন শেষ হয়ে আসছে। মনে করিয়ে দেয় আত্মজা। বাবা দাঁড়িয়ে থাকে ঝুলবারান্দায়। বাড়ি ফিরলে বলে,’পম্পিডু রাস্তায় জল কতটা উচ্চতায় বইছে বলতো,আমার সংবাদপত্র এলো না আজও ‘।বাবাকে বোঝাতে পারিনা সমাজের জলতল এখন অনেকটা নিচে।
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভিজি।দু’তরফে দুটো ঘর, সেই কোন যুগে ট্রেন আমায় থামিয়ে দিয়ে নিজে দৌড়ে পালিয়েছে। সেই থেকে আমায় আগলে রেখেছে সে, মাইগ্রেন হলে গুগল সার্চ করেছে নিরাময় খুঁজবে বলে,ঘুমের ওপারে কবিতার যতিচিহ্ন ঠিকঠাক করে দিয়ে গেছে মা,যখনই ডিপ্রেশনের সিঁড়ি বেয়ে খনিতে নেমেছি একটু একটু করে তখনই আমার পালিতবাবা এসে বলেছে, ‘আমার ঋতু তো হারতে শেখেনি, একদিন সে নক্ষত্র ছোঁবে, দশমিক বানাবে দু’আঙুলে’।
এদের সকলকেই আমি বৃষ্টি বলি, এরাই আমার এই কানাকড়ি জন্মের আষাঢ় শ্রাবণ…
আমি পিয়াংকী,আপনাদের সাথে যোগাযোগ আমার বহুদিনের । নিঃশব্দ কামরায় এতক্ষণ আপনারাই ছিলেন আমার সাথে,পরবর্তী স্টেশনে অন্য কোনো রোল অন্য কোনো ক্যামেরা
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।