গদ্যের পোডিয়ামে পিয়াংকী – ধারাবাহিক – (ষোড়শ পর্ব)

ওরফে তারাখসা এবং তুমি বালক

আজ পৌষের এগারোতম রাত। দশরাত পার হলে মানুষ নাকি সেই সংসারের হয়ে যায় অথচ আমি পৌষের হতে পারলাম না এই মুহূর্ত অবধি। শীত এল না গায়ে। বরফ পড়ল না। ন্যুনতম, কুয়াশাও জল করে দিল না এতদিনের উপবাস।
অগত্যা, উঠোনে । গাইলাম বেসুরো নজরুলগীতি। ‘শিউলিতলায় ভোরবেলা কুসুম কুড়ায় পল্লীবালা’- অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পল্লীবালা হওয়া যায় না, জানি। তবু আগ্রহ দেখানো ভুল নয় ভেবে নথফুলের মতো লেগে রইলাম পৌষের গায়ে গায়ে।
এখন ডিসেম্বর। পৌষের বুকে শেষ আঁচিল , মৃতপ্রায়। গোপন স্নানের ঘাটে লুকিয়ে রাখছি আপাত বিন্দু। জোয়ার এলে ধুয়ে যাবে পাপ লোভ। নিংড়ে উঠে দাঁড়াব সম্পূর্ণ উলঙ্গে। তুমি সহমত হবে, হয়ত হবে না। আমি জমাব শুক্রিয়া। আদায় করব আলো। প্রথম প্রথম সেই আলো বিক্ষিপ্ত হবে, এক সরলরেখায় এসে মিলবে না। ধৈর্য বাড়বে। এটাই প্রক্রিয়া।

ধৈর্য ধরেছিলাম। দাঁড়িয়েছিলাম সমুদ্রের ধারে, এই বালি উত্তপ্ত লোহিত রক্তকণিকার মতো আগুনেলাল। শেষ পর্যন্ত দুইপ্রান্ত মিলল। স্পর্শক টেনেছিলাম, প্রয়োজন হল না। নিঝুম চরাচর জুড়ে পাইন। বুকের ভিতর উঁচু হয়ে উঠেছে অগুনতি পাইন। পাইনের পাশে বিল। স্বচ্ছ জল। ক্ষয়েছিলাম, সেই উষ্ণতা নিয়েও বুকের বিলে শালুক ফুটছে রোজ। সবুজের সাথে মিশে যাচ্ছে গোলাপি রং।
ভরসা রেখেছিলাম, সমর্পণও। ক্রমশ শীত লাগতে শুরু হল । কুয়াশা ঝাপসাআকাশ বরফ এল ধীরে ধীরে। ভাতে নুন দিলাম , রান্নার পেঁয়াজেও। সব পাবার পরও শেষ-এটুকু জল হল না ।

বুঝলাম, আমার অশ্রু সহজলভ্য হতে রাজি নয়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *