সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে নীলম সামন্ত (পর্ব – ৬)

ব্রহ্মমুখী সূর্য ও রেবতী রেবতী ঠোঁট
ধ্যান শব্দটি দু অক্ষরের সমন্বয় হলেও এর গর্ভ জাগিয়ে রাখা ‘মনঃসংযোগ’ আদপেই কোন সহজপাচ্য প্রগলভা নয়। অধ্যাত্মবোধে তাই ধ্যানাভ্যাস করতে মন্ত্রের প্রয়োজন। আমরা শূন্যের ভেতর মনঃসংযোগ করতে পারিনা। তেমন অন্ধকারে ফুলও চিনতে পারি না। স্পর্শ দরকার, দরকার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সুডৌল জাগরণ।
দুহাতের কোলে ব্রহ্মকমল রেখে মনে হয়েছিল সৌন্দর্য পর্যায়ে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল ফুল। যেভাবে আমরা সদ্যজাতদের ফুলের মতো দেখি। আসলে মতো বলে কি আদৌ কিছু হয়? নাকি আমরা নিজেদের হিসেবে যেমন তেমন মিল খুঁজে ‘মতো’-র প্রয়োগ জাগিয়ে রাখি৷ জাগিয়ে রাখা অনন্য ক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম। কারণ কোন বাহ্যিক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়না। মস্তিষ্কের ভিতর শিরার ভিতর যদি কিছু জাগিয়ে রাখতেই হয় তা একমাত্র অন্তর আত্মা পারে৷ যেখানে মনঃসংযোগ ক্রিয়াটির ভাবমাধুর্যে প্রতিদিন সকালে একটি করে ফুল ফোটে আর তার আগুনে আলোকিত হয় সভ্যতার আদিভূত।
আমার এই সব ভাবনায় কোন বিজ্ঞান নেই। স্রেফ মনন আছে। আর কল্পনার ঝাড়বাতি৷ বহু সময় গাছের তলায় দাঁড়িয়ে নিজের ছায়া মেপেছি তখন ভাবিওনি সূর্য আগুন ছাড়াও অন্য কিছু হতে পারে বা প্রতিটা অদেখা নক্ষত্রই পরিচিত সূর্য। ব্রহ্মাণ্ডের খেলায় হার জিতের থেকেও যথেচ্ছাচারে ভেসে বেড়ায় নির্বিকার মুখের ধাঁধা। যা স্থানকাল বক্রতায় সময়ের আপেক্ষিকতা দেখিয়ে আলগা করে মা ঠাকুমার ব্যবহার করা উল বোনা কাঁটা৷ কিভাবে যেন ভয়ঙ্কর ভারী জিনিস ওজন কমিয়ে হাল্কা হয়৷ আর আমি সমস্ত চিন্তা ফেলে ফিরে যাই ছেলেবেলায়।
ছেলেবেলা- যেখানে পঞ্চাশ পয়সার বরফ কেনার জন্য গোটা একটা সকাল অপেক্ষা করতে হতো আর তারপর রঙিন ঠোঁট লুকোতে মাথা নিচু করে খেতাম। ঈশ্বর, সময়, শক্তি এদের প্রত্যেকের প্রবল দয়া যে আমরা অনায়াসে খিদে নিবারণ করি৷ আর ঠোঁট থেকে সরিয়ে দিই জন্মাতরের লালারস৷ যা মাকড়শার নয়, মৌমাছির নয় যা ভ্রাম্যমাণ আত্মার৷ সেই আত্মা যা প্রতিটা শরীরে জেগে থাকে নক্ষত্রের ঘুমন্ত দৌড়ের মাঠে।
আমি কি আজও জেগে? নাকি নিজেকে খুঁড়তে খুঁড়তে পৌঁছে যাচ্ছি পৃথিবীর শীতলতম কেন্দ্রে- যেখানে শীতল শীতল কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হয় মৈথুনঋতুর ওষ্ঠ-নাদ।