প্রবাসী ছন্দে নাসিমা রুবি (বাংলাদেশ)

একজন ফয়েজ আলী ও জীবনের সরল হিসাব

অধিকাংশ সন্তান সৎ মায়ের কাছে মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার আশা করলেও সৎ বাবাকে যেন মানুষ -ই মনে করে না।

আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে ফয়েজ আলী তার বিধবা মায়ের সাথে ছোট বোনকে নিয়ে মামার বড়ি চলে যায়। ফয়েজ আলীর বাবা মারা যাওয়ায় পিতৃহীন শিশু বাচ্চাদের নিয়ে বিধমা মায়ের আর থাকা হলো না স্বামীর ভিটায়। বাবার বাড়িতে ভাইদের ঘরে আশ্রয় মিললেও এই আশ্রয় যে জীবনের জন্য কতটা বেদনার হবে তা হয়তো বুঝতেই পারেনি ফয়েজের মা।

মা সন্তান মিলিয়ে তিনজনের ভরণ পোষনের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছিলো ফয়েজের তিন মামা। কী এক করুণ হাল! ছেলেমেয়েরা কি খাচ্ছে মা জানে না, মা কি খাচ্ছে ছেলেমেয়ে জানে না। এভাবেই দিন মাস পেরিয়ে কয়েক বছর কেটেছিলো এই তিন মা সন্তানের। একদিন ফয়েজ আলীর মাকে তার ভাইরা অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। ফয়েজ আলীর বয়স তখন তেরো চৌদ্দ হবে।
মায়ের বিয়েতে ভীষণ আঘাত পেয়েছিলো কিশোর ফয়েজ আলী। সেই থেকে মায়ের প্রতি একটু একটু করে ঘেন্না জন্মাতে শুরু। মাকে আর কখনো সম্মানের চোখে দেখেনি।

যুবক হয়ে ফয়েজ আলী তার বাবার ভিটায় ফিরে এলো। বাড়ির কর্তারা বিয়ে দিলো ফয়েজ আলীকে। সংসার সন্তান সবই হলো কিন্তু এক অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় ফয়েজ আলীর সংসার ভেঙে যায়। ফয়েজ আলী দ্বিতীয় বিয়ে করলো স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে, মহিলার একটি বাচ্চাও আছে। ফয়েজ আলী যথেষ্ট সম্মান সহকারে ওই মহিলার সাথে সংসার করে গিয়েছিলো।

দুর্ভাগ্যবশতঃ ফয়েজ আলীর মেয়ের সংসারও ভেঙে যায়। পরে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছিলেন ফয়েজ আলী।

ফয়েজ আলীর সংসার করে যাওয়া স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়েটি সঠিক ছিলো ফয়েজ আলীর কাছে, এমনকি মেয়ের দ্বিতীয় সংসারও সঠিক ছিলো। তার কাছে শুধু জঘন্য ছিলো তার মায়ের দ্বিতীয় সংসার। কী আজব। ফয়েজ আলীর স্ত্রী কন্যার মতোই তো এক ভাগ্যবিড়ম্বিতা নারী ছিলেন তার মা। অথচ মাকে সে দ্বিতীয় বিয়ের কারণে সারাজীবন খারাপই ভাবলো।

কেউ কখনো চায় না তার সংসারটা ভেঙে যাক। কোনো সন্তান এতিম হোক তাও কারো চাওয়া নয়। তারপরও যে সকল হতভাগ্যদের জীবনে নির্মম সত্যটি ঘটে যায় তাদের উচিৎ সৎ বাবা মায়ের প্রতি ন্যূনতম সম্মানবোধ রাখা আর সৎ মা বাবাদেরও হতভাগা সন্তানদের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকা উচিত। তবেই সবগুলো জীবন আলোকময় হতে পারে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।