-“হ্যালো, হ্যাঁ রুপা বলছি… ও আচ্ছা আমরা এক্ষুনি বেরোচ্ছি!”
কোর্টে আজ প্রথম শুনানি। দীর্ঘ আঠারোটা বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সস্ত্রীক রজত সেন। ট্যাক্সিটা দরজার কাছ থেকে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে মিলিয়ে গেলো। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইলো তাদের ষোলো বছরের মিলি। সংসারে দেওয়া সময় নিয়ে দম্পতির মধ্যে কলহ ছিল তুঙ্গে। রোজ রাতে বাড়ি ফিরেই শুরু হতো কোয়ালিটি টাইমের লড়াই। তবুও অশান্তির বাতাবরণের মাঝে ছোট্ট মিলির আদরে ভাটা পড়তে দিতেন না ওনারা। আবার রাত নামলে সেই মেয়ের মুখ চেয়ে অনাবিল সুখে দুজনের হাতে হাত রাখা। তবে আজ ধৈর্য্যের বাঁধ যেনো একেবারে ভেঙে গিয়েছে! তবুও কি আশ্চর্য.. ডিভোর্স ফাইল হাতে দুজনে একই গাড়িতে রওনা হয়েছেন কোর্টে।
ট্রাফিকের লাল আলোর আভায় লালচে ওই শাল গাছেও বাসা বেঁধেছে দুই শালিক।
লাল মানেই তবে বিপদ নয়! মুচকি হাসলেন মিসেস সেন। বসন্তের কলকাতায় দূষণের চেয়েও অনেকটা বেশি স্নিগ্ধতা থাকে। দুপাশের রাস্তা হতে নাম না জানা জংলী ফুলে সাজছে নীল হলদে ট্যাক্সিগুলো..
নিজের অজান্তেই কখন রজতবাবু স্ত্রীর হাত ছুঁয়েছেন, বুঝতে পারলেন না। যাত্রা শেষ; অবশেষে গন্তব্য উপস্থিত। গতিশীল এই বাস ট্রামের শহরে তাদের চলার গতি যেন আজ ক্ষীণ। ভাড়া নিয়ে ট্যাক্সিটা দূরের ভিড়ে মিশে গেছে। চোখের সামনে তাদের বিচ্ছেদের শিলমোহর আদায় করার ঠিকানা!
দুজন দুজনার চোখের দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, দুটো ক্লান্ত চোখ একে ওপরের কাছে যেনো অব্যাহতি চাইলো; তারপর হাঁটা দিলেন…
সন্ধ্যে হয়ে এলো। দলছুট পাখিরাও তাদের অজানা বাসার উদ্দেশ্যে পাখা মেলেছে, রোজকার মতো আজকেও আলোয় ঝলমলিয়ে উঠেছে গোটা শহরটা; গাড়ির কালো ধোঁয়ার সাথে মিশে গেছে নানান স্ট্রিট ফুডের ফ্লেভার।
ট্যাক্সিটা দরজার কাছে এসে দাঁড়ালে হুড়মুড়িয়ে দরজা খোলে মিলি। কান্নায় ভেজা একরাশ প্রশ্নে ঠাসা ছোট্ট চোখ দুটো তাদের দিকে স্থির হয়ে চেয়ে আছে। প্রতিদিনের নিয়মে আজও রাত নেমেছে। মেয়ে চোখ বুজলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রুপা, একরাশ নিস্তব্ধতা.. হঠাৎ নিশ্চুপ রাত্রির চাদর ভেদ করে দুটো পরিচিত হাত আঁকড়ে ধরে তাকে। কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসিয়ে বলে -” কাল আবার ভিক্টোরিয়া যাবে?”