T3 || সমবেত চিৎকার || বিশেষ সংখ্যায় নব কুমার দে

সমবেত চিৎকার
আসুন আজ একটি রুপকথার গল্প শোনাই।
বহুকাল আগে কাটমানি নামে একটি রাজ্য ছিল এই বঙ্গ প্রদেশে। এই কাটমানি রাজ্যে রানী নিজেই শাসন করতো ।
যেমন ছিল মহাভারতের যুগে, কুন্তি পুত্র কান্তেয়, রাধা পুত্র রাধেয়, তেমন কাটমানি রাজ্যে রানীর স্নেহের পাত্রপাত্রীরা ” শ্রী ” উপাধি পেতেন।
এই রাজ্যের রানীর পরিবারের সদস্যদের গরু পাচার, কয়লা পাচার, শিক্ষা ক্ষেত্রে চুরি, বন দফতরের চুরি, কৃষি ক্ষেত্রে চুরি, জমি দফতরে চুরির বিশেষ অধিকার ছিল।
এবং প্রজারা তাহা সজ্ঞানে মানিয়া লইয়াই দন্ত বিকশিত করিয়া মহারানীর জয় জয়কার করিতেন।
কারণ প্রজারা জানিতেন রানী মাতা খুশি হইলৈই নানা রুপ সম্মান ও উপহারে ভূষিত করিতেন।
তাই সেই রাজ্যের শিল্পীরা যেমন , সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রকর, অভিনয় শিল্পী, সভাকবি সদাই রানীর জয় জয়কার করিয়া কখনও মহানায়ক, মহানায়িকা বা কখনও রানীর কৃত কোনো পদে আসীন হইবার লালসায় চাটুকারিতা করিতেন।
সেই রাজ্যের শিক্ষক শিক্ষিকাদের মহারানী কুকুর সম নিকৃষ্ট মনে করিতেন এবং সময়ে অসময়ে শিক্ষক শিক্ষিকারা যদি তাদের ন্যয্য দাবি লইয়া যাইতেন মহারানী কে প্রশ্ন করিতে মহারানী বিরক্ত হইয়া বলিতেন
” সবসময় ঘেউ ঘেউ করবেন নাতো” এমনই জনশ্রুতি।
গোল বাঁধিলো একদিন চিকিৎসা ক্ষেত্রে।
এক তরুণী চিকিৎসক জানতে পারিলেন, সিনিয়র চিকিৎসকের সহযোগীতায় এই মহারানী আর তার পরিবার চিকিৎসা ক্ষেত্রেও কয়েকশো হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি করেন।
বয়োজ্যেষ্ঠ চিকিৎসক তড়িঘড়ি ওই তরুণী চিকিৎসকের মুখ বন্ধ করিবার জন্য হঠকারিতা বশতঃ খুন করিয়া ফেলিলেন। এবং এই খবর রানী মাকে জানাইলেন।
রানীমা বলিলেন আরে একি করিলেন, আমি মহারানী প্রজাদের চাপে পড়িয়া আমাকে যদি খুনের তদন্ত করিতে হয় তাহলে তো খুনের কারণও দেখাইতে হবে।
ইহা ঠিক হয় নাই।
তোমরা বরং ওই তরুণীকে সদলে ধর্ষণ করো, আঁচড়ে দাও, কামড়ে দাও।
আমার রাজ্যে তো ধর্ষণের জন্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করাই আছে পাঁচ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা। এই তরুণীর বাড়ির লোককে না হয় দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে দেবো।
তাতে তো কয়েক হাজার কোটি টাকার চিকিৎসা দূর্নীতি প্রাজাদের সম্মুখে আসবে না।
আর আমাদের বিচারে যার মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার কথা এমন বহু দুষ্কৃতী রাজ পরিবারের দয়ায় লালিত হচ্ছে। তাদের কাউকে বলে দাও এই ধর্ষণের দায় নিতে।
প্রয়জনে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতেই পারি বিনিময়ে তার পরিবারকে সোনায় মুড়ে দেবো।
প্রজারা খবর পাওয়া মাত্র তরুণী চিকিৎসক খুনের বিচার চাইলেন।
একদিনেই ধরা পড়লো খুনি, এবং সে তৎক্ষণাৎ অপরাধ স্বীকার করে নিলেন।
মহারানী পূর্ব পরিকল্পনা মতো জনসমক্ষে বললেন আমি ধর্ষিতা তরুণীর পরিবারকে দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দেবো এবং আততায়ীকে রাজসভায় বিচার করে মৃত্যুদন্ড দেবো।
কিন্তু এই প্রথমবার মহারানীর পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়ে গর্জে উঠলো মৃতার পরিবার, তারা চিৎকার করে বললো আমার মেয়েকে বিক্রি করবো না।
এই উক্তি সাড়া ফেলে দিলো সমগ্র রাজ্যে।
রাজ্যের কোনো বাবা মা চায় না দশ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে ধর্ষণ হতে দিতে।
একদিন তারা সবাই রাস্তায় নেমে আসলো।
ধনী, গরীব, জাত, ধর্ম, পেশা নির্বিশেষে সবাই রাস্তায় নেমে আসলো, মুষ্টিবদ্ধ করে হাত আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলো।
আকাশ বাতাস আলোড়িত হয়ে দফায় দফায় গর্জে উঠলো এই স্বৈরাচারী রানীর বিরুদ্ধে আপামর জনসাধারণের
সমবেত চিৎকার।