• Uncategorized
  • 0

|| আন্তর্জাতিক মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস || লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

জন্ম- ১৯৬৭, বরানগর। বর্তমানে দার্জিলিং জেলার মিরিক মহকুমার উপশাসক ও উপসমাহর্তা পদে আসীন। চাকরীসূত্রে ও দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সমস্যা সমাধানে তাঁর লেখনী সোচ্চার।

আন্তর্জাতিক মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস

গতকাল, আঠাশে মে, শুক্রবার ছিল আন্তর্জাতিক মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা দিবস। মেয়েরা বড় হতে থাকলে একটা সময় তাদের মাসিক শুরু হয়, এবং বয়স গড়ালে মাসিক বন্ধ হয়। মেয়েরা বড় হলে শরীরে কিছু লক্ষ‍্যণীয় পরিবর্তন ঘটে। কিছু বাইরে থেকে বোঝা যায়। কিছু থাকে অভ‍্যন্তরের ব‍্যাপার। বড় হতে থাকলে মেয়েদের গর্ভাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি হয়। এই ডিম তৈরি হয়ে অপেক্ষা করে শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনের জন‍্য। মিলন না হলে আঠাশ দিনে ডিম্বাণু ভেঙে চুরে রক্ত আকারে স্ত্রী জননাঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে আসে। আবার নতুন ডিম্বাণু তৈরি হতে থাকে। আবার শুক্রাণুর সঙ্গে মিলনের অপেক্ষা। যদি মিলন হয়, তাহলে তাকে বলে নিষেক। নিষিক্ত ডিম্বাণু বিকশিত হয়ে ভ্রূণ হয়। তখন সে মায়ের শরীরের ভিতর বিকশিত বিবর্তিত হতে হতে পূর্ণ রূপ পায়। সাধারণভাবে গড়ে দশমাস দশদিন সময়ে মানবশিশু ভূমিষ্ঠ হয়। এর চেয়ে সামান্য কম সময়েও ভূমিষ্ঠ হতে পারে। তাতে বিশেষ উদ্বেগ নেই। তবে অনেকদিন আগে ভূমিষ্ঠ হয়ে গেলে তেমন শিশুর জন্য বাড়তি যত্ন নিতে হয়। সাধারণ ভাবে মানবশিশু মায়ের জন্মদ্বার দিয়ে মাথা বের করে। এটা নরমাল ডেলিভারি। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সিজারিয়ান সেকশন বা মায়ের পেট কেটে শিশুকে বের করে আনতে হয়।
এই হল মানুষের জন্মপ্রক্রিয়া। এই বিষয়ের গোড়ায় আছে মাসিক। মাসিক শুরু না হলে মা গর্ভবতী হতে পারেন না। মাসিক শেষ হলেও তাই। সুতরাং বিশেষ করে মাসিকের সময় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রয়োজন। মাসিককে অনেক পরিবারের লোকজন শরীর খারাপ বলে উল্লেখ করেন। অনেকেই মাসিককে অপবিত্র ভাবেন। এসব‌ই একেবারেই সেকেলে গেঁয়ো ধারণা। সত্যি বলতে গেলে, মাসিক একটা শারীরিক সুস্থতার পরিচায়ক। খুব অসুস্থ, অপুষ্টির শিকার মেয়ের মাসিক না হতে পারে, দেরিতে হতে পারে, অনিয়মিত হতে পারে। সুস্থ সবল পরিশ্রমী হাসিখুশি মেয়ের মাসিক সাধারণভাবে ঠিক ঠাক হয়। হরমোনের গোলযোগের কারণেও মাসিকের সমস্যা হয়। প্রস্রাবের অঙ্গ ও যৌনাঙ্গে সংক্রমণের কারণেও মাসিকের সমস্যা, পেটে ব‍্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সঙ্গে সঙ্গে গাইনি ডাক্তার দেখানো বিধেয়। তুকতাক টোটকা কবিরাজী ইত‍্যাদি সমস্যার সমাধান তো করেই না, সমস‍্যাকে জটিল করে দিয়ে একটা মেয়েকে মরণের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
মাসিক হলে ওই দিনগুলোতে বাড়তি প্রাইভেসি, বাড়তি পুষ্টি মেয়েদের অধিকার। এইসব দিনে মনের কিছু সমস‍্যা হতেও পারে। সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সেই সমস্যা ঠেকানো যায়।
মাসিকের সময় কাজে যাবার জন্য ও স্বাভাবিক থাকার জন্য স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিন পাওয়া মেয়েদের অধিকার। মেয়েদের অভিভাবকদের উচিত সময়মতো স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিন মজুত রাখা। বা বড়ো হতে থাকা মেয়েকে এই ব‍্যাপারে সুনির্দিষ্ট ভাবে আলাদা করে হাতখরচ দেওয়া। জীবাণুমুক্ত স্টেরিলাইজড পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় ও তুলো দিয়ে স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিন বানানো চলে। তবে ভাল ব্রাণ্ডের ন‍্যাপকিন কাজের জন্য বেশি উপযোগী। উচ্চবিদ‍্যালয় বা কলেজে ছাত্রীদের জন‍্য স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিনের সরবরাহ থাকা উচিত। আজকাল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিন যন্ত্র বসানো হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ন‍্যাপকিন সরবরাহ করার দাবিতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এক মেয়ে একবার মাসিকের সময় স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিন না পরে রক্তাক্ত পোশাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘোরাঘুরি করে হ‌ইচ‌ই ফেলে দিয়েছিলেন। এই বিষয়টি সংবাদপত্রে এসেছিল।
মাসিককে সহজ স্বাভাবিক বিষয় ভাবলে মাসিককে নিয়ে ভুলভাল ধারণা কাটবে। সমাজটা একটু প্রাপ্তমনস্ক হবে। স্কুলেই এ ব‍্যাপারে শেখানো দরকার।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।