একটি হিমশৈল জলে ভাসে। কিন্তু শোলার মতো ভাসে না। হিমশৈলের যতটুকু জলের উপর থাকে, তার চাইতে অনেক বেশি, প্রায় নয়গুণ লুকিয়ে থাকে জলের নিচে। তাই, হিমশৈলের অগ্রভাগ টুকু দেখে নিচের চেহারার কথা সাধারণ লোকে আন্দাজ পর্যন্ত করতে পারে না। সে সব শুধু জানে অভিজ্ঞ আর পোড় খাওয়া নাবিকেরা। আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে ( ২১ জুলাই ১৮৯৯ – ২ জুলাই ১৯৬১) তাঁর লেখায় যেন সেই হিমশৈল জলে ভাসার ধারণাকে ধরতে চেয়েছেন। তাঁর লেখার ভিতর শব্দ নিয়ে মিতব্যয়িতা আর অনেক না বলা বাণীর কারুকাজ। মার্ক টোয়েনের মতোই তিনিও ঔপন্যাসিক হয়ে ওঠার আগে সংবাদপত্রের রিপোর্টার ছিলেন। ওই যে স্কুলের পড়া সাঙ্গ করেই কানসাস সিটি স্টার কাগজে লেখালেখির কাজ ধরেছিলেন, তখন সম্পাদক তাঁকে ছোট ছোট বাক্যে, ছোট ছোট অনুচ্ছেদে প্রাণচঞ্চল ইংরেজিতে লিখতে বলেছিলেন। সদ্যোতরুণ সাংবাদিকের প্রতি কাগজের সম্পাদকের সুনির্দিষ্ট উপদেশ ছিল, লেখার মধ্যে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ আনতে হবে। হতাশার কোনো জায়গা নেই।যিনি চেয়েছিলেন পুরোদস্তুর সৈনিক হবেন, দৃষ্টিশক্তির সীমাবদ্ধতার জন্য তাঁকে শেষ অবধি অ্যামবুল্যান্স ড্রাইভারের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল। ১৯১৮ সালের জুন মাসে, মানে কৈশোর ঠিক ঠিক কাটিয়ে ওঠার আগেই ইটালিয়ান ফ্রণ্টের আমেরিকান বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, আর সেই প্রথম দিনেই তাঁকে কাজ দেওয়া হয়েছিল জার্মান সাঁজোয়া বাহিনীর গোলার আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ একটি যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া নারীশ্রমিকদের দেহাংশ খুঁজে খুঁজে এনে একটা চেহারা দাঁড় করানোর। ওই অল্প বয়স, আর মেয়েদের ওই অগুন্তি রক্তাক্ত শব, না শব নয়, শবের টুকরো, কোথাও হাত, কোথাও পা, কোথাও বুকের আধখানা, এইভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্তাক্ত প্রত্যঙ্গগুলি খুঁজে খুঁজে এনে একটা গোটা শবদেহ বানাবার চেষ্টা, সে তো বড়ো সোজা কথা নয়।কৈশোর শেষ হবার আগেই এই অভিজ্ঞতার ছায়াপাত তাঁর লেখায় কি পড়ে নি? অস্ত্র এবং যুদ্ধ, তার চেয়েও বড়ো যুদ্ধোন্মাদনা, এ যে কি ভয়ঙ্কর জিনিস, তা যে মানুষ রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন নিরপরাধ মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছে, সেই বুঝতে পারে।
ইশকুল ছেড়েই সাংবাদিকতার কাজ নিলেন। তখনো আঠারো বছর বয়স পূরণ হয় নি। ছটফটে মন। সাংবাদিক তার কাজে মন লাগল না। রেডক্রশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যামবুল্যান্সের ড্রাইভারি করতে করতে ১৯১৮ সালে মারাত্মক ভাবে আহত হলেন। রণাঙ্গনে আর থাকা হল না। কাজ খোয়ানো হতাশা আর চলনসই সেরে উঠবেন কবে সেই উদ্বেগ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হল। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলেন “এ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস।” সে অবশ্য আরো এগারো বছর পরের কথা। আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে (১৮৯৯- ১৯৬১) ছিলেন একজন চিকিৎসক পিতা ও সঙ্গীতবিদ মাতার সন্তান। বাবা মা দুজনেই উচ্চশিক্ষিত ও এলাকায় বিশেষ সম্মানিত ছিলেন।যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু আজও কোনো বিরল ঘটনা নয়, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুই ভয়াবহতম বাস্তব। শারীরিক আঘাত তাঁকে যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য অযোগ্য করে দিয়েছিল।
পায়ে সাংঘাতিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার সময়ে রেডক্রশের একটি নার্সকে ভালবেসে ফেলেছিল বছর আঠারোর তরুণটি। নার্সটির নাম অ্যাগনেস ভন কুরোস্কি। সেই ছেলের স্বপ্ন ছিল ১৯১৯ এর জানুয়ারিতে সে যখন পিতৃভূমি আমেরিকাতে ফিরবে, তখন ওই নার্সকে সে বিয়ে করবে। দুজনে মিলে বাঁধবে সুখের ঘর। কিন্তু অতটুকু বয়সে সে ভাবতে পারেনি, তার থেকে বয়সে সাত বছরের বড়ো মেয়ে তাকে আসলে শুধু স্নেহ আদর ও প্রশ্রয় দিয়ে সেরে উঠবার শক্তি যুগিয়েছে। কিন্তু পঁচিশ বছর বয়সের মেয়ে আঠারো বছর বয়সের বাচ্চা ছেলের সাথে সংসার সমুদ্রে ঝাঁপাতে চায়নি।
অগাধ হাসি আনন্দ আর স্পর্শসুখের মধ্যে মাস দুয়েক যেতে না যেতেই অ্যাগনেস তাকে সহজ ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, সে একজন ইটালিয়ান অফিসারের সঙ্গে পরিণয়ের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভয়ঙ্কর আঘাত লেগেছিল আঠারো বছরের তরুণের বুকে। এই পীড়ন, এই যন্ত্রণা ও বঞ্চনা ছেলেটি কোনোদিন ভুলে যেতে পারেনি।
তাই উত্তর জীবনে একের পর এক নারীকে বিবাহ করা, এবং সেই মেয়েদের পরিত্যাগ করার সর্বনাশা খেলায় মেতে ওঠে সে।
প্রথমে বিয়ে করেন হ্যাডলি রিখার্ডসনকে। ১৯২১ এ বিয়ে, আর ১৯২৭এ ডিভোর্স। ওই ১৯২৭ এই পলিন ফিপার কে বিয়ে করলেন। ১৯৪০ অবধি বিয়ে টিঁকে রইল। তারপর ডিভোর্স। এবার বিয়ে করলেন মার্থা গেলহর্ণকে। ১৯৪০ এ বিয়ে, ১৯৪৫এ ডিভোর্স। এরপর বছর আটচল্লিশ বয়সে ফের বিয়ে করলেন মেরি ওয়েলস হেমিংওয়ে কে। সেটা ১৯৪৬ সাল।
যুদ্ধক্ষেত্রে পাওয়া তাঁর অভিজ্ঞতা সম্ভার মনন ও মেধায় উদ্ভাসিত হয়ে রূপ নিয়েছে এ ফেয়ার ওয়েল টু আর্মস উপন্যাসে। আর ডেথ ইন আফটার নুন নামে একটি নন-ফিকশন বইতেও এসব বিষয় চিত্রিত হয়েছে। নিজের কথা হেমিংওয়ে বলেছেন এভাবে, একটা প্রায় বালক অবস্থায় তুমি যখন যুদ্ধে যাচ্ছ, তখন তোমার ভিতর এক অদ্ভুত মায়া বিভ্রম কাজ করে। তখন তোমার মনে হয়, তুমি মৃত্যুহীন, মরলে মরবে অন্যেরা। তুমি অন্ততঃ নয়। তারপর প্রথমবারের জন্য তুমি যখন গুরুতর আহত হলে, তখন সেই বিভ্রম কেটে যায়। তুমি বুঝতে পার যে, মৃত্যু এসে যে কোনো সময় তোমাকে চুমু খেয়ে যেতে পারে।
যুদ্ধক্ষেত্রে অ্যামবুল্যান্স ড্রাইভার হিসেবে শত্রুপক্ষের গোলায় হেমিংওয়ে যখন আহত হয়েছেন, কিশোর বয়সে দুখানি মজবুত পা একেবারে ক্ষতবিক্ষত, কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না, পা দুটো আবার কোনোদিন পায়ের মতো হয়ে উঠবে কি না, সারা জীবনের জন্য দু পা হারাতে হবে কি না, ডাক্তারদের জিজ্ঞেস করলে তাঁরাও ভাষাগত পার্থক্যের জন্য কিশোরটিকে কিছুই বুঝিয়ে উঠতে পারেন না, সেই সব ভয়ঙ্কর দিনগুলো হেমিংওয়ে তাঁর পাঠককে জানিয়েছেন।
জীবনের প্রথম প্রেমিকা অ্যাগনেস, যিনি তাঁকে স্নেহপূর্ণ প্রশ্রয় দিয়ে যৌবনকে সন্দীপ্ত করে তুলেছিলেন, তিনি ছিলেন হেমিংওয়ের থেকে সাত বছরের বড়ো। আর হেমিংওয়ে প্রথম যাঁকে বিয়ে করলেন, সেই হ্যাডলি রিখার্ডসন ছিলেন তাঁর থেকে আট বছরের বড়ো। নিজের জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি একধরণের ঘৃণা পোষণ করতেন হেমিংওয়ে। সেটাই কি কোনোভাবে বয়সে বড়ো নারীদের প্রতি এক অদ্ভুত টানে তাঁকে বাঁধত?
দ্য ওল্ড ম্যান অ্যাণ্ড দ্য সী হেমিংওয়ের জীবনের সব সেরা উপন্যাস। ১৯৫২ সালে প্রকাশিত এই বইটির জন্য ১৯৫৩ সালে তিনি পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন, আর ১৯৫৪ সালে নোবেল পুরস্কার। এই উপন্যাসে স্যান্টিয়াগো নামে এক প্রৌঢ় অভিজ্ঞ জেলের সঙ্গে এক বিশালাকার মার্লিন মাছের লড়াইয়ের কাহিনি রয়েছে। গোটা উপন্যাসটাই ওই মাছের সাথে জেলের কথা।
চুরাশি দিন ধরে পর পর প্রতিদিন মাছ ধরতে সাগরে নেমেছে স্যান্টিয়াগো, আর প্রত্যেক দিন তাকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে।
পঁচাশিতম দিনে একটা বড়ো সড়ো রাক্ষুসে মার্লিন মাছ স্যান্টিয়াগোর টোপ খেয়েছে। মার্লিন খুব বড়ো প্রজাতির মাছ। হর হামেশা এই মাছের দৈর্ঘ্য পনেরো ষোলো ফুট হয়ে থাকে। এই পেল্লায় সাইজের মাছের নাকের ডগায় থাকে তরোয়ালের মত দীর্ঘ একটি ছুঁচোলো প্রত্যঙ্গ। সাতশো সাড়ে সাতশো ওজন হওয়া একটি মার্লিন মাছের পক্ষে খুব স্বাভাবিক। ওই দানবীয় চেহারার মাছ জলের ভিতরে কেমন দাপটে চলে, সহজেই অনুমেয়।
স্যান্টিয়াগোর টোপ খেয়ে রাক্ষুসে মার্লিন মাছ ডিঙিসুদ্ধ স্যান্টিয়াগোকে ছুটিয়ে মারে। স্যান্টিয়াগোও অভিজ্ঞ মেছো। সে জানে কি করে মাছকে খেলাতে হয়। কিন্তু বেশ টের পাওয়া যায় চুরাশিদিন হাতখালি স্যান্টিয়াগো খানিকটা ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত। তার উপরে তার অনেকটা বয়স হয়েছে। মার্লিন মাছ খুব দক্ষ দৌড়বাজ। জলের ভিতরে তার নিজের এলাকায় ঘণ্টায় পঁয়ত্রিশ ছত্রিশ কিলোমিটার বেগে সে সহজেই দৌড়ায়। ওই রাক্ষুসে ওজন নিয়ে স্যান্টিয়াগোর টোপ গিলে মার্লিন মাছ দৌড়ে বেড়ায়। এভাবেই পার হয়ে যায় দুই দিন দুই রাত্রি। অতো বড়ো পরাক্রান্ত মাছের সঙ্গে এই লাগাতার টানা হেঁচড়ায় স্যান্টিয়াগোও ক্লান্ত অবসন্ন। তবু সে ক্লান্তিহীন। অভিজ্ঞ মৎস্যশিকারী কিছুতেই ধৈর্য হারায় না। একটানা এতক্ষণ স্যান্টিয়াগোর সাথে টক্কর দিতে দিতে মার্লিন মাছটি যেন তার নিছক প্রতিদ্বন্দ্বী আর থাকে না। হয়ে ওঠে যেন একটা সাথী। এমনকি মার্লিন মাছটার এই অদম্য জীবনস্পৃহাকে স্যান্টিয়াগো কুর্ণিশ জানায়। মাছটিকে যেন তারই একটা ভাই ভেবে বসে সে। স্যান্টিয়াগো ভাবে এই সংগ্রামী মাছটির এতটাই সম্মান প্রাপ্য যে একে টুকরো করে বাজারে বিক্রি করা ঠিক হবে না। তৃতীয় দিনেও মার্লিন মাছটি স্যান্টিয়াগোকে নাকানি চোবানি খাওয়াতে থাকে।
ক্লান্ত বিধ্বস্ত স্যান্টিয়াগো নিজের মনেই মাছের সঙ্গে বাগযুদ্ধ করতে থাকে। শেষে একটা বর্শা দিয়ে মার্লিন মাছটাকে সে ঘায়েল করে। তারপর সে মাছটাকে তার ডিঙির একপাশে বেঁধে বাড়ির দিকে পাড়ি দেয়। আর স্বপ্ন দেখতে থাকে যে এতবড়ো মাছটাকে বিক্রি করে সে কতগুলো পয়সা পাবে! কত লোক এই মাছের টুকরো কিনতে আসবে, এই ভাবনায় স্যান্টিয়াগো বিভোর হয়ে থাকে।
এদিকে বর্শার খোঁচায় আহত মার্লিন মাছের রক্তস্রোত হাঙরদের ডাক দিয়েছে। স্যান্টিয়াগো তার হারপুন দিয়ে একটি বিশালাকার মাকো হাঙরকে হত্যা করে। কিন্তু, হারপুনটি তার হাতছাড়া হয়ে যায়। একটি হাঙর মরলেও, পর পর ধেয়ে আসে রক্তলোলুপ হাঙরের দল। স্যান্টিয়াগো তার ডিঙির দাঁড়ের মাথায় তার ছুরিটাকে বেঁধে আরেকটা বর্শা বানিয়ে আরো পাঁচ পাঁচটা হাঙরকে মেরে ফেলে। কিন্তু হাঙরেরা সংখ্যায় অগুন্তি। তারা একের পর এক আসতেই থাকে। আর মার্লিনের মৃত শরীর থেকে মাংস খুবলে খেয়ে যেতে থাকে। শেষকালে মাছটির হাড় কঙ্কাল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। স্যান্টিয়াগোর সমস্ত স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়।
এই দ্য ওল্ডম্যান অ্যাণ্ড দ্য সী তাঁকে অজস্র সম্মান এনে দিয়েছে।
জীবনে বার বার গুরুতর জখম হয়েছেন হেমিংওয়ে। ১৯৫৪ সালে আফ্রিকায় থাকাকালীন দু দুটো বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মাথায় ভাল রকম চোট পান। এতটাই চোট পেয়ে ছিলেন যে খুলি ফাঁক হয়ে মস্তিষ্কের ভিতরের তরল খানিকটা বেরিয়ে গিয়েছিল। এর উপর মেরুদণ্ডের নিচের দিকে কোমরের কাছে দুটো ডিস্ক ভেঙেছিল। কিডনি এবং লিভারে গুরুতর আঘাত লেগেছিল। হাত পা বুক ঠোঁট আগুনে সেকেণ্ড ডিগ্রি বার্ণ হয়েছিল। এই চোটের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে কাগজে কাগজে বিশ্বখ্যাত লেখকের মৃত্যু সংবাদ বেরিয়ে গিয়েছিল। এই ঝক্কির মধ্যে তাঁকে আবার জানাতে হয়েছিল যে তিনি বেঁচে আছেন।
তীব্র শারীরিক আঘাতের যন্ত্রণা ভুলতে মদের নেশায় বুঁদ হলেন হেমিংওয়ে।
এই ১৯৫৪ সালেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হেমিংওয়ে। অসুস্থ বিধ্বস্ত হেমিংওয়ে নানাভাবে নিজের মানসিক শান্তি ও স্বাস্থ্যকে পীড়িত করেছেন। হাইপারটেনশনে ভুগেছেন, প্যারানয়েড হয়ে উঠেছেন। ১৯৬০ সালে মানসিক চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদ্যুতের শক দিতে হয়েছে। এক আধবার নয়, পনেরোবার।
১৯৬১র এপ্রিল মাসে হেমিংওয়ে হাতে বন্দুক তুলে নিয়েছিলেন। এই সময় তাঁর চতুর্থ স্ত্রী মেরি তাঁকে রুদ্র মূর্তিতে বন্দুকধারী অবস্থায় দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করে লোকজন জড়ো করেন। তারা হেমিংওয়েকে ঘুমপাড়ানি ওষুধ প্রয়োগ করে অচেতন করে হাসপাতালে নিয়ে যান। আবার বিদ্যুতের শক থেরাপি চলতে থাকে। হেমিংওয়ের মানসিক স্থিতি ও শান্তি চিরতরে বিনষ্টির দিকে পৌঁছে যায়। ১৯৬১ সালের জুন মাসের ত্রিশ তারিখে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে হেমিংওয়ে তক্কে তক্কে ছিলেন। জুলাই মাসের দুই তারিখে অতি ভোরে আবার বন্দুক হাতে নিয়ে নিজের মাথায় গুলি করে নিজেকে শেষ করে দিয়ে সকল জ্বালা জুড়োন তিনি। হেমিংওয়ের পরিবারে আত্মহত্যার একটা প্রবণতা ছিল। তাঁর বাবা আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর ভাই লেসিস্টার আর বোন উরসুলা, এঁরাও আত্মহত্যা করেছিলেন। হেমিংওয়ে বিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান তাঁর সমস্ত শান্তিকে বিঘ্নিত করে দিয়েছিল। এই জুলাই মাসেই তাঁর আসা, আর চলে যাওয়া। তিনি যেন এক অনন্য স্যান্টিয়াগো, যুদ্ধ করতে করতে যে শেষ পর্যন্ত হেরে যায়।