সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১২)

মজুর, মার্ক্স ও মে দিবস

স‍্যামুয়েল ফিলডন তাঁর মিনিট দশেকের বক্তৃতা একেবারে গুটিয়ে এনেছেন, আর রাতও দশটা বাজতে যায়, ভিড়ও যথেষ্ট পাতলা হয়ে এসেছে, সেই সময় ডেস প্লেইনস থানার অফিসার ইনচার্জ ক‍্যাপটেন জন বনফিল্ড বিশাল একটা পুলিশ বাহিনী নিয়ে মার্চ করতে করতে এসে খুব রূঢ়ভাবে ফিলডনকে ধমক দিয়ে বললেন, অনেক হয়েছে। এবার চুপ করুন। জায়গাটা ফাঁকা করুন।
হঠাৎ করে বলা নেই কওয়া নেই এভাবে কথার মাঝখানে পুলিশের ধমকে রীতিমতো অপমানিত বোধ করে ফিলডন যৎসামান্য প্রতিবাদ করলেন। তারপরই যে গাড়ির মাথায় উঠে বক্তৃতা করছিলেন, সেই গাড়ির মাথা থেকে নেমে পড়লেন। তখন হে মার্কেট স্কোয়ারে মেরেকেটে শ দুই আড়াই লোক দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদেরকে তাড়াতে এসেছে উইনচেস্টার রিপিটার রাইফেল বাগিয়ে ১৭৬ জনের একটা পুলিশ বাহিনী।
এত বিপুল সংখ্যক মারমুখী পুলিশ দেখে স‍্যামুয়েল ফিলডন যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করলেন। এতক্ষণ সব কিছু শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চলার পর একেবারে শেষ মুহূর্তে এ কি বিপত্তি! এমন সময় ভিড়ের ভিতর থেকে কে একটা বোমা ছুঁড়ে দিল।
জিনিসটা ছিল একটা ভঙ্গুর গোছের ধাতব কৌটোর মধ‍্যে ডিনামাইট ভরা একটা হাতে তৈরি ঘরোয়া বোমা। আমেরিকার সাধারণ শান্তিপূর্ণভাবে চলাকালীন সময়ে ওই প্রথম ডিনামাইট চার্জ। কে যে বোমাটা ছুঁড়েছিল, কেউই তা জানে না। ডিনামাইট ভরা বোমার বিস্ফোরণের আকস্মিকতায় পুলিশেরা ঘাবড়ে গেল। ঘাবড়ে গিয়ে তারা দুমদাম গুলি ছুঁড়তে শুরু করে দিল। ব‍্যাপক একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। ভয়ে দিশেহারা পুলিশের গুলিতে পুলিশেরা নিজেরাই মরল সাতজন। আর শ্রমিকদের মধ‍্যে চারজন মারা পড়ল। পুলিশের মধ্যে প্রায় ষাটজন গুরুতর জখম হয়েছিল। কয়েকজন শ্রমিকও জখম হয়েছিল। ইতিহাস বিশেষজ্ঞ পল আভরিশ বলেছেন, বিভিন্ন সূত্র হতে পাওয়া তথ‍্য যাচাই করে দেখা যায়, পুলিশের লোকই প্রথম গুলি ছোঁড়ে, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের গুলিতে নিজেরাই মারা পড়ে। ডেস প্লেইনস থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ ইনসপেকটর জন বনফিল্ড তাঁর রিপোর্টে লিখেছিলেন, তিনি গুলি ছোঁড়া বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর আশঙ্কা ছিল যে, অন্ধকারের মধ‍্যে ঠিক মতো করে কিছু ঠাহর করতে না পেরে পুলিশের হাতেই পুলিশ গুলিবিদ্ধ হবে।
 নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক পুলিশ আধিকারিক চিকাগো ট্রিবিউন কাগজকে জানিয়েছিলেন, যেসব পুলিশ হতাহত হয়েছিল তাদের বেশিরভাগই নিজেদের রিভলভারের গুলিতে মারা পড়েছিল। পরবর্তীকালে পুলিশ ক‍্যাপটেন মাইকেল শ‍্যাক লিখেছিলেন যে, পুলিশের চেয়ে অনেক বেশি শ্রমিক গুলির ঘায়ে আহত হয়েছিল। চিকাগো হেরাল্ড কাগজ একটা ভয়াবহ ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে লিখেছিল, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে প্রায় অর্ধশতাধিক নাগরিককে মৃত ও গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। যাই হোক, চিকাগোর পুলিশ বিভাগের ইতিহাসে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এতগুলি পুলিশ কর্মীর হতাহত হওয়াটা সেই প্রথম।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।