|| এডওয়ার্ড জেনার: গুটি বসন্তের বিরুদ্ধে যোদ্ধা বিজ্ঞানী || লিখেছেন মৃদুল শ্রীমানী

এডওয়ার্ড জেনার: গুটি বসন্তের বিরুদ্ধে যোদ্ধা বিজ্ঞানী
আজ থেকে ২২৭ বছর আগে, ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে, এমন একটা ১৪ মে তারিখে ব্রিটিশ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার (১৭৪৯ – ১৮২৩) গুটি বসন্ত বা স্মল পক্সের টীকা একটি বালকের উপর প্রয়োগ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। বালকটির নাম ছিল জেমস ফিপস। আট বৎসর বয়সী বালকটি ছিল ডাক্তার জেনারের বাগানের মালির পুত্র। ডাক্তার জেনারের বাড়িতে দুধ দিতে আসত এক গোয়ালিনী। নাম তার সারা নেলমেস। গোয়ালিনী সারা ডাক্তার জেনারকে নিজের হাতের একটি ঘা দেখাতে এসেছিল এবং নিজেই তাঁকে বলেছিল, এই ঘা তেমন কিছু বিপদজনক নয়।
সারা-র একটি গরু, তো গরুর নামটি ছিল ব্লসমস, সেই গরুর দুধের বাঁটে ঘা হয়েছিল, আর সেই ঘা সংক্রমিত হয়েছিল সারার হাতে। লৌকিক অভিজ্ঞতা থেকে সারা গোয়ালিনী জানত এ ঘা বিপজ্জনক নয়, এবং সারা তার এই প্রথাগত জ্ঞান নিঃসঙ্কোচে ডাক্তার জেনারকে বলেছিল। ডাক্তার জেনার সারা নেলমেস এর হাতের ঘা থেকে পুঁজ সংগ্রহ করলেন, এবং আজকের মতো এক ১৪ মে তারিখে বালক জেমস ফিপসের দুটি হাতেই সারার থেকে সংগ্রহ করা পুঁজ দিয়ে টীকা দিলেন।
বালকটির একটু জ্বর হল, একটু শারীরিক অস্বস্তি হল, কিন্তু সারা-র মতো ঘা তার হল না।
কিছুদিন পর ডাক্তার জেনার গুটিবসন্তের পুঁজ সংগ্রহ করে এনে আবার বালকটিকে টীকা দিলেন। কিন্তু এবার আর বালকের তাতে প্রতিক্রিয়া হল না। কিছুদিন পর জেনার পুনরায় ওই বালকের উপর ওই গুটি বসন্তের পুঁজ থেকে তৈরি টীকা দিলেন। এবারেও কিছুই হল না।
আজ আমরা ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনারকে ফাদার অফ ইমিউনোলজি বলি। অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধবিদ্যার তিনি পথিকৃৎ। কিন্তু এটা মনে করা ঠিক হবে না যে, ডাক্তার জেনার এই টীকাকরণ ব্যাপারটি প্রথম চর্চা করেন, বা গো বসন্তের বীজ দিয়ে গুটি বসন্ত ঠেকানোর কৌশলটা প্রথম লক্ষ্য করেন। তাঁর আগেও অনেকে এই নিয়ে চর্চা করেছেন।
পৃথিবীতে বহু আগে থেকেই গুটি বসন্ত বা স্মল পক্স ছিল, এবং মাঝে মাঝেই তা মহামারী আকারে দেখা দিত।
ওই যে গুটি বসন্তের ইংরেজি নাম স্মল পক্স, ওর পক্স কথাটির মানে হল গুটি, বা থলে, যাতে পুঁজ ভরে ওঠে। সিফিলিস অসুখের কারণে যে পুঁজ ভরতি গুটিটা হয়, পকস মানে ধরে নিন গুটি, সেই গুটির সঙ্গে তুলনায় স্মল পক্সের গুটিটা একটু ছোট। তাই স্মল বিশেষণটা এল। তো বলতেই হবে স্মলপক্স ছিল ভয়ানক রোগ, একবার ধরলে গাঁয়ের পর গাঁ উজাড় হয়ে যেত। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর পূর্বে নীল নদীর উর্বর কৃষি অঞ্চলে খ্রিস্টজন্মের দশহাজার বছর আগেও স্মলপক্সের নজির পাওয়া গিয়েছে। আন্দাজ করা হয়, সেখান থেকেই মিশরীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে স্মলপক্স ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। চীন দেশেও স্মলপক্স ছড়িয়ে পড়েছিল। পঞ্চম এবং সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বারে বারে ইউরোপের দেশে দেশে স্মলপক্স মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিল। রাজা রাজড়াদের পর্যন্ত স্মলপক্স রেহাই দিত না। অষ্টাদশ শতকে বছরে প্রায় চার লক্ষ ইউরোপীয় স্মলপক্সের শিকার হয়ে মারা পড়ত। যাদের এই রোগ হত, তাদের মধ্যে কম করে শতকরা কুড়িজন মারা পড়তেনই। অর্থাৎ ন্যূনতম মৃত্যুহার ছিল প্রতি পাঁচজন আক্রান্তদের মধ্যে অন্ততপক্ষে একজন। কখনো কখনো মৃত্যু হার বেড়ে শতকরা ষাটে পৌঁছে যেত। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন মারা পড়তেন। শিশুদের মধ্যে এই রোগ হলে বাঁচার আশা থাকত না বললেই হয়। যারা কোনোমতে বেঁচে যেত তাদের মধ্যে অনেকেই দৃষ্টিশক্তি হারাত। ধরা যেতে পারে এই বেঁচে যাওয়া লোকগুলির মধ্যে প্রতি তিনজনে একজন দৃষ্টিহীন হয়ে বাঁচত। দৃষ্টিহীন করে দিয়ে, মুখ নাক গাল সহ গোটা শরীরে বীভৎস ক্ষতচিহ্ন রেখে যেত স্মলপক্স।
মানবসভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল যে, মানুষ তার চোখ কানকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করে। নিজের মতো করে ভাবে। গোষ্ঠীর কাছে অর্জিত তথ্য আর তা চর্চা করে পাওয়া জ্ঞান রেখে চলে যায়। কে দেখেছে, কে বুঝেছে, তা হারিয়ে যায় কিন্তু ওই জ্ঞানটুকু গোষ্ঠীর মধ্যে টিঁকে থাকে অনেক দিন। মানুষ লক্ষ্য করেছিল, যার একবার স্মলপক্স হয়ে যায়, কোনো গতিকে প্রাণটা বেঁচে গেলে, পরবর্তীকালে তার স্মলপক্স হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যদি দৈবাৎ হয়ও, তাহলে তা বিপজ্জনক চেহারা নেয় না। তাই লোকজন বসন্ত রোগীকে শুশ্রূষা করবার জন্য পূর্বে বসন্ত হয়ে বেঁচে গিয়েছে, এমন লোকজনকে ডাক দিত। এই থেকে একটি প্রথা তৈরি হয়েছিল, মানুষের শরীরে চামড়ার নিচে গুটিবসন্তের বীজ অর্থাৎ পুঁজ প্রবেশ করানো। এই যে নীরোগ মানবশরীরে গুটিবসন্তের বীজ প্রবেশ করানো হত, এর ফলে লোকটির সাময়িক ভাবে কিছুটা অসুস্থতা দেখা দিলেও, অধিকাংশ সময়ে তা মারাত্মক আকার ধারণ করত না। খুব অল্পক্ষেত্রে এই ধাঁচের টীকাকরণ থেকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটত। চীন দেশের লেখক ওয়ান কুয়ান (১৪৯৯ – ১৫৮২) তাঁর ‘দাউঝেন ঝিনফা’ নামে বইতে আরেক ধরনের টীকাকরণ সম্বন্ধে তথ্য দিয়েছেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে। সেই বইতে পাওয়া যায়, স্মলপক্সের পুঁজসমেত গুটি সংগ্রহ করে, তা থেকে নস্য বানিয়ে, লোকে নাকে প্রবেশ করাত। এর ফলে রোগ হত, কিন্তু তাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকত যথেষ্ট কম। ঊর্ধ্বপক্ষে শতকরা দুইজনের মতো। এইসব তথ্য ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ লণ্ডনে রয়্যাল সোসাইটি দ্বারা গৃহীত হয়। ১৭৬৮ সাল নাগাদ ইংরেজ ডাক্তার জন ফিউস্টার ( ১৭৩৮ – ১৮২৪) লক্ষ্য করেছিলেন যে, কোনো ব্যক্তি গো-বসন্তে ভুগে থাকলে, তার শরীরে স্মলপক্সের প্রতিরোধ বা ইমিউনিটি গড়ে ওঠে। এ বিষয়টি কিন্তু ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই ইংল্যাণ্ড ও জার্মানির কোনো কোনো চিকিৎসক লক্ষ্য করছিলেন। কিন্তু ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার এই জ্ঞানকে একটা বৈজ্ঞানিক কাঠামো ও বিশেষায়িত রূপ দিয়ে দাঁড় করালেন। জেনার লক্ষ্য করেছিলেন, সাধারণতঃ যাঁরা নিজের হাতে দুগ্ধদোহন করে থাকেন, তাঁদের স্মলপক্স হয় না।
এ থেকে জেনার ধারণা করলেন যে, গো-বসন্তের পুঁজভরা গুটির ভিতর এমন কিছু থাকে, যা স্মলপক্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। দিনের পর দিন ডাক্তার জেনার নিজের এই ধারণা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন ও ফলাফল নথিভুক্ত করেছেন।
১৭৯৮ সালে এডওয়ার্ড জেনার তাঁর সমস্ত গবেষণাপত্রগুলি গ্রন্থবদ্ধ করেছিলেন। জেনার তাঁর এই বইয়ের নাম দিয়েছিলেন ‘ইনকুইরি ইনটু দি ভ্যারিওলা ভ্যাকসিন নোন অ্যাজ কাউপক্স’। এতে তিনি তেইশটি কেস স্টাডি প্রকাশ করেছেন। এমনকি নৈর্ব্যক্তিক মানসিক গঠনের প্রমাণ দিয়ে নিজের এগারো মাস বয়সী পুত্রসন্তান রবার্টকে এমন টীকা দিতে দ্বিধা বোধ করেন নি। কিন্তু প্রথমে এই বই রয়্যাল সোসাইটি প্রকাশ করতে রাজি হন নি। এমনকি চিকিৎসক সমাজ গো বসন্তের টীকা নিয়ে জেনারের নতুন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিকে উপহাসাস্পদ গণ্য করেছিলেন। সকলে জেনারকে ব্যঙ্গ করত। গো বসন্তের বীজ প্রয়োগে মানুষের চেহারা গরুর মতো হয়ে যাচ্ছে, এমন ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হচ্ছিল। দীর্ঘদিন ধরে যে সব চিকিৎসক গুটিবসন্তের বীজ দিয়ে টীকাকরণ করতেন, তাঁরা বাজার হারানোর আশঙ্কা থেকে জেনারের নামে কুৎসা রটনা করতে শুরু করলেন। এর উপর একদল ধর্মধ্বজী লোক আবার “কেন গরুর থেকে বীজ সংগ্রহ করে মানুষকে দেওয়া হবে” এ নিয়ে তোলপাড় শুরু করে দিল।
সব মিলিয়ে জেনার তাঁর গবেষণার প্রথম দিকে বিরাট বিরুদ্ধতার শিকার হন। ব্যথিত মনে তিনি নিজের গ্রাম গ্লসেস্টারশায়ারের বার্কলেতে ফিরে যান, আর সেখানেই চিকিৎসক পেশার কাজ চালিয়ে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করে যেতে থাকেন।
এডওয়ার্ড জেনার ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দে ১৭ মে তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা রেভারেণ্ড স্টিফেন জেনার বার্কলেতে ভাইকার পদে ছিলেন। ফলে একটা ভাল পরিবারের মধ্য থেকে বড় হবার সুযোগ তাঁর ছিল। কিন্তু জেনার তাঁর পাঁচ বছর বয়সে পিতৃহারা হন। তাঁকে সহযোগিতা করেন তাঁর দাদা। পিতৃহারা বালক জেনার চৌদ্দ বছর বয়স থেকে কৃতবিদ্য চিকিৎসক ড্যানিয়েল লুডলোর অধীনে শিক্ষানবিশি শুরু করেন। ১৭৭০ সালে বছর বাইশের তরুণ জেনার লণ্ডনের সেন্ট জর্জেস হাসপাতালে বিখ্যাত স্কটিশ সার্জন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী জন হান্টার ( ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৭২৮ – ১৬ অক্টোবর ১৭৯৩) এর কাছে পড়াশুনা করতে থাকেন। হান্টার ছিলেন বৈজ্ঞানিক। মেডিসিন ও সার্জারিতে বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণা প্রয়োগে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। যৌনরোগ যেমন গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি কেন হয়, কিভাবে সারানো চলে তা নিয়ে তিনি চর্চা করেছেন। মাতৃগর্ভে শিশু বড় হবার সময় মায়ের রক্ত সংবহনতন্ত্র আর গর্ভস্থ শিশুর সংবহনতন্ত্র যে আলাদা আলাদা ভাবে থাকে, তা নিয়ে তিনি আলোকপাত করেছিলেন। এই হান্টার সাহেবের কাছে পড়াশুনা করায় জেনারের মনে যুক্তি দিয়ে তলিয়ে ভাবার চেষ্টা গভীরভাবে শিকড় ছড়িয়েছিল। ওই গভীর পড়াশুনার দৌলতে জেনার সেন্ট অ্যানড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ মেডিসিন উপাধি লাভ করেন।
১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকেই এডওয়ার্ড জেনার নিজের গাঁয়ে, বার্কলেতে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। তখন তাঁর তেইশ বছর বয়স। কিন্তু ১৭৯৬ এর পরে টীকাকরণ বিষয়টা তাঁকে এত গভীরভাবে পেয়ে বসে যে, তিনি সাধারণ ডাক্তারিতে আর মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। টীকাকরণ নিয়ে নানাভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা, আর তার রিপোর্ট লেখা, এই করতে গিয়েই তাঁর সমস্ত সময় ব্যয় হয়ে যেত। পেশাদার ডাক্তার হিসেবে রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করে দর্শনী আদায় করে যে রোজগার, তা তাঁর লাটে উঠল। তখন বন্ধু বান্ধব শুভানুধ্যায়ীদের দানে তাঁর দিন কাটত। শেষ অবধি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে জেনার তাঁর সংসার খরচ চালাবার জন্য অর্থসাহায্যের আবেদন করলেন। ১৮০২ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে দশহাজার পাউন্ড দান করে গবেষণা চালিয়ে যেতে বলেন। এর বছর পাঁচেক পরে, ১৮০৭ সালে চিকিৎসকদের রয়্যাল কলেজ জেনারের ইঞ্জেকশনের কার্যকারিতা লক্ষ্য করে মান্যতা দিলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আরো কুড়ি হাজার পাউন্ড অর্থসাহায্য করেন।
ডাক্তার জেনারের খ্যাতি ক্রমে এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সেই সময় যে নেপোলিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের যুদ্ধ চলছিল, তিনি পর্যন্ত বলেছিলেন, ডাক্তার জেনার মানবসমাজের এতবড় শুভচিন্তক যে তাঁকে অদেয় আমার কিছুই নেই।
এটা ঠিক যে টীকাকরণ ব্যাপারটি জেনারের অনেক আগে থেকেই ছিল। এমনকি জেনারকেও ছোট বয়সে গুটিবসন্তের বীজ থেকে টীকা দেওয়া হয়েছিল। তা জেনারকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে ছিল এটা বাস্তব সত্য। গো বসন্তের মধ্যে গুটিবসন্তকে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে দেবার আয়োজন আছে, এও জেনারের আগেই অনেকে জানতেন। তাহলে জেনারের কৃতিত্ব কোথায়! তাঁকে ইমিউনোলজির জনক হিসাবে আখ্যায়িত করার যৌক্তিকতা কী? এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সিস গ্যালটন ( ১৮২২ – ১৯১১) এর একটা মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। গ্যালটন বলেছিলেন যে, বিজ্ঞানে কার মাথায় প্রথম একটা আইডিয়া এল, সেটা খুব বড় কথা নয়। কে সেটা নিয়ে দিনের পর দিন নাওয়া খাওয়া ভুলে লড়ে গেল, এবং মানুষকে বোঝানোর জন্য সর্বস্ব পণ করল, সেটাই আসল ব্যাপার। গ্যালটন বলছেন, প্রণাম তাঁকেই জানাতে হবে।
ডাক্তার এডওয়ার্ড জেনার তিয়াত্তর বৎসর বয়সে ১৮২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রয়াত হন।
কিন্তু তাঁর লড়াই তাঁর মৃত্যুর পরেও জারি ছিল। তাঁর মৃত্যুর দেড় দশক পরে ১৮৪০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্মলপক্সের বীজ নিয়ে পুরোনোপন্থী টীকাকরণ নিষিদ্ধ করে দেয়। আর তাঁর মৃত্যুর তিন দশক পরে, ১৮৫৩ সালে গো বসন্তের বীজ নিয়ে টীকাকরণ বাধ্যতামূলক করে।
জেনারের গ্রামের বাড়ি, গ্লসেস্টারশায়ারের বার্কলেতে একটি ছোট মিউজিয়াম হয়েছে। সেখানে সারা গোয়ালিনীর যে গরুর দুধের বাঁটের গো বসন্ত থেকে জেনার প্রথম টীকা তৈরি করেছিলেন, সেই “ব্লসমস” নামে গরুর শিং সংরক্ষিত আছে। আর সেই গরুটির চামড়া সংরক্ষিত আছে সেন্ট জর্জ মেডিক্যাল স্কুলের লাইব্রেরিতে।
গুটিবসন্তের বিরুদ্ধে জেনারের টীকা তৈরি হয়েছিল ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে, আর ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, হু, পৃথিবীকে গুটিবসন্ত থেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন। জেনারের দেখানো পথেই এই শত্রু জয় করা সম্ভব হয়েছে।