সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ২১)

মজুর মার্ক্স ও মে দিবস 

 

আপনারা মালিকরা সব হিপোক্রিট (সভাস্থলে গুঞ্জন শোনা যায়। অস্বস্তি ঘনিয়ে ওঠে।) কান খুলে শুনুন, প্রত‍্যেকটা পুঁজিপতি ব‍্যবসাদার এক একটা হিপোক্রিট। সব কয়টা ব‍্যবসার নামে ভাঁওতাবাজি করে, নোংরা, অনর্গল মিথ‍্যে কথা বলে, যত্ত ঠগবাজ সব। আর শ্রমিকগণ! আপনারা এই মিথ‍্যাবাদী ভাঁওতাবাজ লোকগুলোর ব‍্যক্তিস্বাতন্ত্র‍্য নিয়ে চিন্তিত, তাই না? আর আপনারা শ্রমিকরা, আপনাদের গোটা শ্রেণীটাকেই তো মেশিন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে! লোহালক্কড়ের মেশিনের সঙ্গে দিনের পর দিন দশ থেকে বার ঘণ্টা জুতে থেকে হাড়ভাঙা খাটুনির পর আপনার মধ‍্যে চিন্তা ভাবনা মতপোষণ আর মতপ্রকাশের কতটুকু সামর্থ্য অবশিষ্ট থাকে? এই জায়গায় যারা আপনাদের ঠেলে দিয়েছে, সেই পুঁজিমালিকদের ব‍্যক্তিস্বাতন্ত্র‍্য রক্ষার জন‍্য আপনারা দুশ্চিন্তা করছেন!

আমার নামে রটানো হয়েছে, আমি না কি এদেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করবার জন্য পয়লা মে তারিখে সামাজিক বিপ্লব বাধিয়ে তোলার ডাক দিয়েছি। আমি না কি সমাজকে ধ্বংস করে নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি! কিন্তু আজ আমার কথাগুলি শোনার পরেও কি আপনাদের সেটাই মনে হচ্ছে? আমার তো তা মনে হয় না। তাহলে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা মানে সমাজের ধ্বংসসাধন নয়। সমাজতন্ত্র একটি সদর্থক, ইতিবাচক ও গঠনমূলক বিষয়, এটা একটা বিজ্ঞান, আর এই বিজ্ঞান মানবকল‍্যাণের লক্ষ্যে কাজ করে। সমাজতন্ত্র কোনো ভাল কিছু ধ্বংস করতে চায় না।

যেখানে পুঁজিবাদ, ধনতন্ত্র, সুবিধাভোগী শ্রেণীর লোকদের স্বার্থে সাধারণ গরিব মানুষকে রোজ রোজ নিংড়ে ছিবড়ে করে ছাড়ছে, যেখানে পুঁজিবাদী ব‍্যবস্থার অর্থনৈতিক দর্শন কি করে কাঙালের ধন চুরি করা যায়, তার মতলব শেখাচ্ছে;সেখানে সমাজতন্ত্র শেখাচ্ছে সবাই কি করে ভাল থাকবে, সবার ঘরে কেমনভাবে হাসি ফুটবে, আলো জ্বলবে।

সমাজতন্ত্র বলছে, সকল মানুষ সততার সঙ্গে পরিশ্রম করে নিজের রুটির যোগাড় করবে। মালিক সংগঠনের শ্রদ্ধেয় কর্তা সেজে পরের পরিশ্রমের পয়সায় ফুর্তি করবে না, অতি শ্রদ্ধেয় বড় ব‍্যবসাদার বা ব‍্যাঙ্কার সেজে, বড়লোকের তাঁবেদারি করতে জুরি সেজে আমাদের ফাঁসিতে ঝোলাতে উঠে পড়ে লাগবে না। বাড়ি থেকেই এরা মনস্থির করে এসেছে যে আমাদেরকে ফাঁসিতে ঝোলাবেই ঝোলাবে। যুক্তি নেই, তথ‍্য নেই, প্রমাণ নেই, তলিয়ে ভাবার বোধটুকু পর্যন্ত এদের নেই, শুধু মতলব কখন ব‍্যাটাগুলোকে ফাঁসিতে ঝোলাব। অল্প কথায় সোশ‍্যালিজম, সমাজতন্ত্র হল সহযোগিতা ও সহভাগিতার একটা বিশ্বব‍্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ও উদ্যোগ। সমগ্র মানবসমাজকে একটি অখণ্ড অচ্ছেদ‍্য পরিবার হিসেবে বিবেচনা করে সভ‍্যতার গতিপথে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, যা কিছু সম্পদ গড়ে উঠেছে, তাকে সর্বমানবের প্রাপ্তিযোগ‍্য করে তোলা।

বিপরীতে, পুঁজিবাদী ব‍্যবস্থায় একটা অতিরিক্ত সুবিধাভোগী শ্রেণী সমাজের সর্ববিধ সম্পদ একচেটিয়া ভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছে। সমাজের সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, যা জন্মগতভাবে সকলের, তাকে তারা সর্বমানবের কাজে লাগতে দিতে রাজি নয়, শুধুমাত্র শোষকশ্রেণীর ভোগে লাগবে বলেই তারা হিংস্রপন্থায় সেগুলির দখল নিয়ে নিয়েছে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।