• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে মৃদুল শ্রীমানী (পর্ব – ১৪)

আমার কথা

৫৩
সেই যে বরানগরের কুটিঘাট রোড। ডাচদের কুঠিবাড়ি ছিল যে। তাও যে সে কুঠি নয়, একেবারে গভর্ণর হাউস। আজ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর আগেও সেই বাড়ির লাগোয়া রাস্তায় বাবা কিংবা মায়ের হাত ধরেই চলতে হত। দশ বারো বছর হতে যায় এই রাস্তার ধারে পাশে অনুষ্ঠান হলে ডাক পড়ে, রক্তদান শিবিরে, পুস্তক বিতরণী সভায়, পুজোর দিনে দুঃস্থ মানুষকে পোশাক বিলির সভায়। আমাকে মঞ্চে তুলে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। কাঁধে চাপানো হয় দামি শাল। আমি কথা বলতে বলতে দেখতে পাই, সিমলে পাড়ার নরেন দত্ত আমাদের কুটিঘাট রোড দিয়ে দুপুর রোদে হেঁটে যাচ্ছেন। সারাদিন পেটে কিছু পড়ে নি যুবকের। কলের জল খেয়ে পেট ভরাবেন। বিকেলের রোদ মাখতে মাখতে আনমনে চলেছেন গদাধর চাটুয্যে । তখনো কেউ সে রকম তাঁকে চেনে না। ঘুরে ঘুরে লোকের সাথে মেশেন উৎসাহ দেন গুণগ্রাহী মানুষটি। গাড়ি চড়ার পয়সা নেই, তাই হাঁটেন বিস্তর। নাওয়া খাওয়ার সময় বিশেষ পান না। এক উদার জাগ্রত মনুষ্যত্বের স্বপ্ন দেখেন যৌবন গড়ানো লোকটি।

৫৪
স্বামী উচ্চপদস্থ অফিসার। রাজপুরুষ বললে মন্দ হয় না। সেই স্বামীর নিমন্ত্রণ বড়ো লাটের বাড়িতে। ভারতের বড়োলাট। তরুণী বধূ চললেন নিমন্ত্রণ রক্ষায়। কেননা, স্বামী যে অসুস্থ। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে পারছেন না। সম্ভ্রান্ত পরিবারের বধূ নিজের বেশবাস কেমন হবে, সেটা নিজেই ছকে নিয়ে চললেন বড়োলাটের নিমন্ত্রণ রক্ষায়। তিনি জানেন তিনি তাঁর স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী, সহধর্মিণী। ইংরেজিতে বেটার হাফ।
বাড়ির বৌকে সর্বসমক্ষে বের হতে দেখে লজ্জায় মাটিতে মিশে গেলেন আরেক সম্ভ্রান্ত বিত্তশালী পুরুষ।
তরুণী বধূর নাম জ্ঞানদানন্দিনী। স্বামীর নাম সত্যেন্দ্রনাথ। ঠাকুর পরিবারের কথা।
মেয়েদের বাইরে বেরোনোর ইতিহাস এই বাংলায় কম রক্তাক্ত নয়।

৫৫
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সত্যেন বসু একটা উজ্জ্বল নাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিশ্ব পরিচয় গ্রন্থটি এই বরেণ্য বিজ্ঞানীকে উৎসর্গ করেন। কৈশোর শেষ হবার অনেক আগেই বইটি পড়েছি, আর ভালবেসেছি। বাংলায় কিভাবে বিজ্ঞান কে লেখা যায়, সে সুত্রে বিশ্ব পরিচয় গ্রন্থটি দিশা দেখাতে পারে বোধ করেছি ।

৫৬
পাশ করা অ্যালোপ্যাথ ডাক্তারের মেজো মেয়ে ডিস্ট্যান্স এডুকেশন সিস্টেমে বাংলায় স্নাতকোত্তর হয়েছিলেন। সুশ্রী সুরূপা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ” আরণ্যক” পড়েছো ? তিনি পড়েন নি। ” পুতুল নাচের ইতিকথা” ? না, তাও নয়। বাংলায় স্নাতকোত্তর হতে গেলে ওসব কিছু লাগে না। চটি বইয়ে খাস্তা লেখা উত্তর মুখস্থ করলেই চলে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।