কবিতায় পদ্মা-যমুনা তে মু্হাম্মদ রফিক ইসলাম (গুচ্ছ খাজুরাহো)

১| আফটার সিক্সটি

সেকালে কাঁদতাম; একালে কাঁদি।
কাঁদার নিজস্ব ব্যাকরণে
অর্থের ব্যাপার আছে, থাকেই।

সেকালে চোখ কাঁদতো;
নোনাজলে ভাসতো; হালকা হতাম!
একালে মন কাঁদে;
কলিজা পুড়ে, মন পোড়ায়;
স্থায়ী দুর্গন্ধে বুক ভারী ভারী লাগে।

সেকালে স্বজন-প্রিয়জন, সব ছিলো;
মানুষ ছিলো না।
একালে মানুষের ভীড়ে গড়াগড়ি খেয়ে
কোথাও স্বজন দেখি না!

একাল ও সেকালের আমি
এখনো অবুঝ।

২| জলঘড়ি

অতঃপর…
একটা জলঘড়ি।
সোনালি শরীরে শীৎলার বলৎকারে
স্থায়ী কলঙ্ক নিয়ে
কাঁটাগুলো রক্তপানির স্রোতে
বিধৌত হয়…!

চিত্রকরের আজব তুলিতে
ফ্রেমবন্ধি নিয়তি,
জ্বালা-পোড়ার প্রচ্ছদে ভেতরের অবয়ব;
বাহিরে লবণপানির খোদিত নির্যাসে
চোয়ালের ভূমি তুন্দল রুটি!

ঘড়ি।
জমিনে উইপোকা’র বসতি;
উপরে কাঁটা-
ঘূর্ণনে কলিজা, হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে
ফুসফুসে জমে ব্যথার বুদবুদ।

তারপর…
এক এক করে কাঁটাগুলো খসে যায়;
ফুরিয়ে আসে ঘড়ির প্রয়োজন…

৩| পাখিঘটিত ভাবনা

পাখনা গজালে ওড়ার স্বাধীনতা থাকে

এই আকাশে উড়তে না চাইলে
অন্য আকাশে অন্য ভাবে ওড়ো
তবু ওড়ো-

আমিও পাখি হ’বো একদিন-
তোমার আকাশে উড়ার বাসনা নিয়ে…

৪| হাঁটো, পা যেদিকে যায়

ভালোবাসাটা এখনো নতুনত্বের
গল্প বোনে-
বিরামচিহ্নহীন সম্পর্কের দিকে

দিন গড়িয়ে রাত পেরিয়ে
তোমার-আমার সমান্তরাল প্রেমের
পুরাতন চোখ
নীরব-নিস্প্রভ চাহনিতে ভাঙ্গে
হৃদয়ের খানা-খন্দর!

বড্ড আলসেমি পেয়ে বসলেও
ভাবতে হয় ভাবনার স্বভাব দোষে
খড়কুটোর অবলম্বনের কথা;
ব্যর্থতার আপাদমস্তক

প্রচন্ড ঘৃণা হয়
ঘৃণার ছোঁয়াচে জীবাণু
ছড়িয়ে যায় জীবনের অলিতে-গলিতে
অসম ব্যথায়

চাতকের ঠোঁটে এক মুঠো বৃষ্টির
সান্ত্বনা নিয়ে
ফিরে আসবে না জানি সমতায়

তুমি না কি এখন
ধ্বংসের মাতমে
প্রচন্ড খেলোয়াড় বেলা-অবেলায়

৫| কষ্টের আশপাশে কষ্টের ছায়া

একটা কষ্ট আরেকটা কষ্টের পাশে
অনেকটা পথ-
অকারণে ফিরে যায়।

একটা সমান্তরাল সম্পর্ক ঘিরে
ক’ফোঁটা দীর্ঘশ্বাস
ওড়ে,
পড়ে থাকে আগুনপালক!

মেঘের শরীরে
চৈত্রের ঘাস
হাঁটে- হেঁটে হেঁটে ভাবে,
ভাবায়,
বৃষ্টির সারথী আর কতদূর?

কষ্টের পায়ে কষ্টের পথ মাড়িয়ে
পাহাড়ের পাশে একদিন-
আমি ঝর্ণা হ’বো!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।