সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মধুমিতা রায় (পর্ব – ৬)

এই জীবন…


বুড়ো শিবের মন্দিরের বকুল গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে ছিল অরিত্র।ঘুমোয়নি নাকি সারারাত! ক্লান্ত লালচে চোখ,এলোমেলো চুল। মনিমালা এগিয়ে গেল।

” চলো ওখানটায় বসি”… মন্দির লাগোয়া পুকুর ঘাটটার দিকে দেখালো মনিমালা।
সাইকেলটা লক করে অরিত্র এগিয়ে গেল পুকুরঘাটের দিকে।মনিমালার থেকে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসলো।
তারপর তাকালো।

কেঁপে উঠলো মনিমালা।এমন করে কেউ ভালোবাসে! যা বলবে বলে গুছিয়ে এসেছিল সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।
” তুমি আমার সাথে তোমার জীবন জড়িও না অরিত্র।তোমার সামনে এখন পুরো জীবন।তুমি তো বোঝো আমাদের সম্পর্কের কোন পরিনতি নেই।শুধু কষ্ট ছাড়া আর… ” গলা ধরে এলো মনিমালার।নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগলো।মাথা নিচু করে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করল মনিমালা।

” একবার তাকাও”… অরিত্র বলল।

মনিমালা বাধ্য মেয়ের মত চোখ তুলল।
” পরিণতি মানে তুমি কি বোঝ! একসাথে থাকতে পারলেই সব পূর্ণতা! জানি ভালোবাসা স্পর্শ চায় আমাদের ত্যাগ করতে হবে সে চাওয়া এটুকুই তো! তুমি বোঝ না তুমি আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছ! “

মনিমালার মনে হল সেই যেন ছোট।ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। ইচ্ছে করলো এলোমেলো চুলটা আরও এলোমেলো করে দেয়।হাতের মুঠোয় হাত নিয়ে বলে… থাকবে তো সারাজীবন?

” সবারই একজন মানুষ চাই যাকে সে সব বলতে পারে আনন্দ দুঃখ পাপ পুন্য সব,যার কাছে কোন সংকোচ থাকে না, মনের আরাম থাকে তুমি আমার সেই মানুষ হবে? আমার বকুল গাছ? আমাদের সম্পর্কের কোন নাম নাই রইল,শুধু ছেড়ে যাওয়ার কথা বোলো না কখনও।”

অরিত্রর গলা ধরে এল।

মনিমালা হাসল মেঘছেঁড়া চাঁদের মত।তারপর বলল…

“ছেড়ে আর যাবো কোথায়! চলো এবার উঠি।পড়াশুনায় ফাঁকি দিও না যেন।রেজাল্ট খারাপ হলেই কিন্তু আড়ি জম্মের।মনে থাকে যেন”

অরিত্র এতক্ষণে হেসে উঠলো। কি মিষ্টি লাগে হাসলে ওকে!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।