সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র – ৩১)
by
·
Published
· Updated
যাপন চিত্র – ৩১
ভ্রমণের সাতকাহন
কিছু খারাপ সময় সবার লাইফেই আসে
একটা কিছু ঘটে গেলে সবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখবেন যেটা হয়েছে সেটা পরিবর্তন করার সুযোগ আছে কিনা যদি সুযোগ থাকে এবং সেটা জেনেও দেয়ালে পিঠ চাপড়ানোর মানে হল আপনি সেই সুযোগটাও নষ্ট করে ফেলছেন আর যদি ঘটনাটা পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নাই থাকে তাহলে নিজেকে এভাবে বোঝাবেন যে আমি এটা পরিবর্তন করতে পারব না আমি এটা পরিবর্তন করতে পারব না বাক্যটি বারবার নিজের ভেতরে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই দেখবেন বাক্যটি আপনাকে আমি এটা মেনে নিয়েছি র কাছে পৌঁছে দেবে ৷৷আপনি যখন মেনে নিতে শুরু করবেন তখনই কষ্ট গুলো কমতে শুরু করবে কেননা কস্টগুলোর জন্ম হয়েছিল আপনার মেনে নিতে না পারা থেকে ৷ দু বছর ধরে পেনাডামিক পরিস্হিতির জন্য বেশীর মানুষই চরম ডিপ্রেশনের স্বীকার হয়েছেন আবার কেউকেউ সোস্যাল মিডিয়ার চরম ব্যবহার করেছেন রান্না থেকে গান,নাচ ,কমেডি দেখে বা পোস্ট করে ৷ কিন্তু যাদের পায়ের তলায় সর্ষে অর্থাৎ ভ্রমণ পিপাসুরা হাঁফিয়ে উঠেছেন ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে ৷ শুধু তারাই নয় প্রায় সবাই একটু খোলা আকাশ-বাতাসের জন্য মুখিয়ে আছেন ৷ আর
বিষাদগ্রস্ত দিন গুলো মানুষের মনে কষ্ট বাড়ায় ৷
কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার সব চাইতে সহজ উপায় হল কাজের মধ্যে ডুবে যাওয়া ,নিজেকে চরম ব্যস্ত করে তোলা আর আত্মীয় বন্ধুদের সাথে মন খুলে জমিয়ে আড্ডা মারা আর উপায় থাকলে নিজের কাছের লোকেদের সাথে কোথাও বেড়িয়ে আসা ৷কিছু কষ্ট তো থাকবেই আপনার জীবনে সারাজীবন সামান্তরাল ভাবে তবে সময়ের সাথে সাথে তাতে নদীর পলি মাটির মতো প্রলেপ পড়ে আর আমরাও মানিয়ে নিই ৷তবে আমার মনে হয় যখন খুব কষ্টে থাকি বা হাঁপিয়ে তখন উচিৎ আমাদের উচিৎ একটু ব্রেক নেওয়া ৷ কাছে বা দূরের কোনো জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসা ৷ তবে
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল কতজন বেড়াতে যাচ্ছেন এবং কে কে যাচ্ছেন। ভুল সঙ্গী নির্বাচন একটি ভালো ট্যুরের বারোটা বাজাতে পারে।
অনেকেই হয়ত একা একা ফ্যামেলি নিয়ে কোথাও বেড়ানোর থেকে পরিচিত কিছু ফ্যামেলি বা বন্ধুবান্ধবের সাথে ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন।
এতে সুবিধা একটা আছে, ভ্রমণকালে একটি বড় গাড়ীতে সবাই উঠতে পারলে গাড়ী ভাড়ার খরচটা এক একজনের কাছে অনেকটাই কমে যায়।
সবাইমিলে একটা হইহই ব্যাপার থাকে।আবার এই একসাথে যাওয়ার ঝক্কিও কম নয়, একএক সময় এই ঝক্কি এতটাই বেড়ে যায় যে বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। তবে আমি যেহেতু ঘুরতে ভালোবাসি তাই বলবো এমন কারোর সাথে ঘুরতে যান যাদের সাথে আপনার বন্ডিংটা দারুন। আমরা অনেক ট্যুর করেছি, দারুন আনন্দের ছিল সেই ট্যুর ৷,দলের মধ্যে বন্ডিংটা খুব প্রয়োজন সব জায়গায় মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এমন লোকেদের সাথেই ঘুরতে যান ৷বেড়ানোর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল টাইমে ঘুম থেকে ওঠা এবং টাইমে রেডি হওয়া ৷তবে বর্তমানে বেড়াতে গেলে আরো একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে সেটা হল হাইজিন ৷ অন্যসময় যেখানে যেমন খাবার পাই সেটা খেয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু খাবারটি অবশ্যই টাটকা এবং হাইজিনিক হওয়া চাই। সঙ্গীদের পছন্দ ও এক হতে হবে ৷ শান্ত নিরিবিলি পাহাড় বা জঙ্গল বা সমুদ্র ৷ সঙ্গী ঠিক থাকলে সারাদিন ট্রেকিং, ঘোরাঘুরির পরও অজানাকে জানার নেশায় এতটুকু ভাটা পড়েনা। সবথেকে বড় কথা হল বেড়াতে গিয়ে যেটুকু দরকার সেটুকুই শপিং করে বাড়তি এতটুকুও না ৷লাগেজ যথাসম্ভব কম করতে চেষ্টা করতে হবে ৷একবার
পাকেচক্রে পড়ে আমার পছন্দের বন্ধুদের গ্রুপ ছাড়া দুটি চেনা জানা ফ্যমিলির সাথে একটি ট্যুুরে গিয়েছিলাম, সেই অভিজ্ঞতাই আজ বলব।
তো সেই ট্যুরে সমস্যাগুলি ছিল এইরকম——
ভ্রমনের দিন যত সামনে আসবে এনাদের টালবাহানা শুরু হবে, মনে হয় যেতে পারবনা টাইপের কথা বলে আপনার হার্টবিট বাড়িয়ে দেবে যেহেতু আপনি দায়িত্ব নিয়ে সব বুকিং করেছেন, তাই তাদের থেকে আপনার চিন্তা বেশি। ভ্রমন নিয়ে এনাদের তেমন কোনও মাথাব্যাথা নেই, ট্রেন ছাড়লেই সিগারেট কিভাবে লুকিয়ে খাওয়া যাবে সেই টেনশন বেশি।
ট্রেন/ প্লেন থেকে নেমে আগে থেকে বুকিং করা গাড়ীতে উঠে ড্রাইভারের কাছে এমন হামবড়াই ভাব দেখাবে যেন ট্যুরের সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে উনিই এনেছেন, তারপরই ড্রাইভারকে বলবে আগে দারুকা দুকান হ্যায়? বিয়ার লেনা পড়েগা ।হোটেলে পৌঁছানোমাত্র এনারা দৌড়বেন ভালো রুম কোনটা দেখতে, আপনি রিসেপসনে কাজ মিটিয়ে দেখবেন নিজের ফ্যামিলি রয়েছে শুধু, বাকি সব বহুক্ষন সেধিয়ে গিয়েছে রুমে। রাতে ডিনারের সময় সবাইকে বলে দিলেন কাল একটু সকাল সকাল বেরোতে হবে নইলে সব স্পট দেখা যাবেনা, তাই সবাই যেন ঠিক সময়ে রেডি হয়ে থাকে। ডিনারের পর আপনি শুয়ে পড়লেন তাদের পার্টি চলল মধ্যরাত পেরিয়ে। ফলস্বরূপ পরদিন সকালে আপনি যথাসময়ে রেডি হয়ে দেখলেন বাকিসব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুরতে বেরোলেন তিনঘন্টা লেটে, মেজাজটাও সারাদিন রইল বিগড়ে। লান্চ হোক আর ডিনার খাবারের অর্ডার দেখলে বেড়ানো কম বিয়েবাড়ি বেশী মনে হবে। ফলস্বরুপ কারও পেট গুড়গুড় কারও বমি। মিনি হাসপাতাল সামলে কি আর বেড়াবেন!!যেখানেই খাবার খাবে খাওয়ার পর আর নট নড়নচড়ন, আরে ওঠো সবাই ঘুরতে এসে এরকম বসে থাকলে চলে সামনের স্পট টা দেখতে হবে তো! আরে আর একটু দাঁড়াওনা খাওয়াটা একটু বেশী হয়ে গেছে, একটু ভাতঘুম দিলে ভালো হত!!সারাদিন যত ভালো ভালো স্পটই ঘুরে বেড়ান না কেন মুখ যেন সব সময় ব্যাজার, আর ছোট খাটো ট্রেকিং থাকলে তো কোনও কথাই নেই, কিছুটা উঠেই তোমরা যাও বুঝলে কষ্ট করে এত উপরে যাওয়ার কোনও মানেই হয়না। নীচে ফিরে দেখবেন তাদের সেল্ফি পার্টি চলছে, এতেই তাদের আনন্দ। কোনও প্রকৃতির কোলে হোমস্টে বুক করেছেন , অসাধারন পরিবেশ, সন্ধ্যেবেলায় ব্যাজার মুখ করে এসে বলবে জায়গাটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা কোনও জমজমাট জায়গায় হোটেল বুক করলে পারতে!!প্রধান আকর্ষণ প্রকৃতি নয়, মদ্যপান আর চর্ব্যচোষ্য না পেলে যেন এনাদের সেই দিনটাই বৃথা।
না এগুলো বলে কাউকে ছোট করা বা আঘাত করার উদ্দেশ্যে আমার নয় এমন অনেক বেড়ানোর গ্রুপ রয়েছে যাদের মধ্যে বন্ডিং খুব ভালো। যারা সফল ভাবে বহু ট্যুর ঘুরেছেন এবং ঘুরছেন।
আমি শুধু আমার একটি গ্রুপ ট্যুরের অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম। ভালো থাকবেন সকলে ৷ প্রাণ খুলে কথা বলবেন আর হাসবেন ৷ আর সময় আর সুযোগ পেলেই অক্সিজেনের জন্যে ছোটো বা বড়ো টুরে বেড়িয়ে পড়বেন পছন্দের সঙ্গী বা একাই ৷অনেক সময় নিজেকে টাইমদিতে একলাও ঘুরতে যেতে হয় ৷