• Uncategorized
  • 0

T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় মৌ মধুবন্তী (টরেন্টোর)

বয়েসের বন্ধনী

ফটফটে তাপমাত্রা
সটান করে দিলো কালশীতের পরে- আজকের এই
শনিবার সকাল।
পাশেই রবীন্দ্রনাথ
শুয়ে আছে কবিতা কুন্ডলী পাকিয়ে।
মে মাস।
মা দিবস মাথার ভেতর ঝিম মেরে বসে আছে। খামছে দিচ্ছে
কষ্ট-ব্যথা
আর মা
হারানোর বেদনা।
পাখীর আওয়াজ
কানে আসে,
মনে বসে না,
উড়ে যায়
কত রকম ভাবনা বুকের খাঁচা ভেংগে
দূরে জানালা থেকে দেখা, একফালি নীলাকাশে। তারই নীচে
দোতলা, আন্ত:নগরী ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দের সাথে মিশে আছে
নতুন সবুজের
প্র ল ম্বি ত সবুজ।
আজ কবিদের সাথে আড্ডা হবে,
ঘরময় ঘি এর ঘ্রাণ বৌ-মা বৌ-মা
একটা আবহ ছড়াচ্ছে-
আজকাল ঘুম ভেংগেই তো রেডিও অন করার দিন নয়, তবু ইচ্ছের ঝাঁকে এতো এতো কই ভেসে যাচ্ছে
লতামংগেশ করের
গানের স্রোতে, আকাশবাণী কোলকাতা,
সেই কবেকার কথা, যখন ছোট নয় কেবল
দুইঞ্চি চওড়া জাংগিয়া বয়েস।
তারপর ফ্রক, সেমিজ,ব্রা, পাঞ্জাবী আর জিন্সের সাথে বেড়ে ওঠে দুরন্ত শরীর। সে কখনো ধর্ষণ শব্দের সাথে পরিচিত ছিল না, গ্রামের পিচ্ছিল কাদামাটির রাস্তায় বখাটে, বদ ছেলের কুৎসিত নজর আর লোভাতুর চাহনি
তাকে সচেতন করে
তোলে,
প্রতিবাদী করে তোলে, সাহসী করে তোলে, সমাজের ভেতর
আরো বেশী কঠোর নিয়মতান্ত্রিক বিদ্রোহী সমাজ করে তোলে, তার দেহে জমে পাহাড় সমান বিক্ষুব্ধ মিছিল, হিমালয় সমান স্বাধীন চেতনার ব্দ্বীপ,
গাংগেয় প্রপাত, ব্যাবিলনের শুন্যোদ্যানসহ উত্তরমেরুর অবিচল
-হিমবাহ-
ফুঁসে ওঠা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের
কথা বলাই বাহুল্য।
সেই শরীর এখন অদভূত এক সকাল, যোজন যোজন বিচ্ছেদ বেদনা
কোষে কোষে মগজের কবিতা, সুরে সুরে গীতিকবিতা,
নখে নখে দূরবীন
নেইল পলিশ,
এখনও কিটিক্যাট নাইটি
এখনো নি:শব্দ এক ধ্রুপদ শরীর,
ধামার ঘর- রাগ-রাগীনীর কালোত্তীর্ণ বিহবলতা থমকে থাকা দুটি কক্ষ পা শা পা শি—
কেউ কারো সাথে কথা বলেনা, কথারা নির্বাক।
ফ্লোরে বিছানো কার্পেটের দম্ভ খ্যামটা মেরে পড়ে আছে যেন আজীবনের পণ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেনা, আপ্যায়নে কাউকেই
সে নতুন কোন
সম্বোধনে চমকিত
করবে না,
পুরনো রেশ ধরেই একাকী হোম,
একাকী গার্ডেন
একাকী বিবর্তন।
সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাক, তবু আকাশের মেঘ তাকে ছোঁবে না, কালীমার রঙ নিয়ে
আর সে আঁকবে না কোন নতুন চিত্র, রেনেসাঁ, পিউ কাঁহা,
সা সা সা, মা পা সা
দক্ষিণ মেরুর বরফ ভাংগার চাষীমজুরের কাব্য।
এলোমেলো বিছানা, নাটকের মঞ্চ,
আর বুকের ভেতর
ঝলসিত রোদের
বিরাগ
নিয়ে সেই
দুই ইঞ্চি
জাংগিয়ার শরীর
এখন পাশ বালিশ- দুপায়ের ভাঁজে তার ঐশ্বরিক বার্তা
গলিয়ে দিয়ে
নিথর পড়ে আছে, ঝমঝম করে কাঁপছে
আট ইঞ্চি পুরু ম্যাট্রেসের নীচের
মোটা কাঠের ফ্রেম—
গো ট্রেন বাজিয়ে গেলো বেদনার বাঁশী,
হঠাত একটি কাক
ডেকে ওঠে প্রবাসীকন্ঠে, অবকিল নকল করেছে সুর বাংলা গানের। শ্যামল মায়ের বৈশাখী রূপ ধরে
বারে বারে আকাশ ঝরে অর্গাজমের সিক্ত আনন্দ নিয়ে। হু হু করে কেঁদে ওঠে তার অর্গাজম যেখানে জানালা খোলেনি বহুকাল,
রোদ দেখেনি
আলোর বন্যা,
সময় দেখেনি নিষ্পেষনের
সচিত্র প্রতিবেদন।
উপুড় হয়ে পড়ে আছে অস্ফুট কান্না
চিরকালের অনভ্যস্ত রোদন
ফাঁকা এক অরন্যে, জনমানবহীন অরন্যে।
আধুনিক কসমোপলিটান
শহর এটা নয়।
নাম -না -জানা পাখিটাও ভেঁপু বাজাচ্ছে,
জাহাজ ছেড়ে যাবে নগরের কোলাহল, দেহের গম্ভীরা
মুক্ত স্বাধীন পাথর যুগ
ইয়ামেন বোলতান।
হায় আয়ুষ্কাল!
৫/৫/২০১৮
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।