শিশু কোল চায়। শিশু আদর চায়, শিশু চায় স্নেহ,ভালোবাসা, সঙ্গ। শিশুর মন বোঝা খুব কঠিন। কিন্তু প্রতিটা শিশুর সাথে থাকতে থাকতে জানতে পারি কোন শিশু কেমন, কোন শিশু কি চায় সেই মতো মনের দোরগোড়ায় ,মনের অন্তঃস্থলে আমরা পৌছে যেতে পারি। শিশু স্নেহ ভালোবাসা অবশ্যই চায় কিন্তু সেই স্নেহ ভালবাসার সাথে শিশুর সর্বাঙ্গীণ বিকাশ এর দিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার। কথায় আছে শাসন করা তার ই সাজে সোহাগ করে যে।
শিশুর যখন উশৃংখলতা বাড়ে, বদমেজাজি হয় তখন তাকে ভালবেসে সেই অংশটা থেকে বার করা যায়।
যে ভালোবাসে সে তার কথা শুনতে পছন্দ করে অর্থাৎ আদরে আবদারে তার মনকে মাখিয়ে নেওয়া যায়। অতিরিক্ত চাহিদা যেমন পূরণ করা উচিত নয় তেমনি অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন সেটা হল শিশুর মনের আঙিনায় পৌঁছে যাওয়া। তাকে গল্প বলা ,তার সাথে তার মতো করে খেলা, খেলার ছলে পড়ানো, তার মনের খোঁজ নেওয়া তার ভালোলাগার বিষয় গুলো জানতে চাওয়া। অতিরিক্ত মারা বকা তথা প্রহার শাসন কোনোটাই শিশুর বিকাশের উপযুক্ত নয়। শিশুরাও বোঝে কে তাকে ভালোবাসে, শিশুরা কিন্তু তার ঘেঁষা হয় ।পড়াশোনার সময় মনোযোগ দেওয়ার জন্য নিজেকেও তার পাঠ এর প্রতি মনোযোগী হতে হবে। নিজের ফোনে আসক্ত হয়ে অন্যমনস্কতার সহিত যদি শিশুকে পড়ানো হয় শিশু কখনো উপযুক্ত পাঠে আগ্রহী হয় না ।শিশুদের মনটাকে বুঝতে হলে তাদের মনের গভীরে ঢুকতে হবে ।কখনই পরীক্ষায় খারাপ ফল এর জন্য তাকে কি করা উচিত নয়, তাকে বোঝানো উচিত ।খারাপদের সাথে তুলনা করে তাকে ভর্ৎসনা করলে তার মনে যেমন কুপ্রভাব পরে ভালোদের সাথে তুলনা করে মনের মধ্যে সরসতার বীজ বপন করলে তাদের মনে আস্তে আস্তে উৎসাহ-উদ্দীপনার বীজ বপন হয়। তাকে আদরে আবদারে বোঝালে যতটা কাজ দেয় প্রহার করলে বিপরীত ফল পাওয়া যায়।
নিজের যা আছে তাই যদি তাদের মাধ্যমে একটু আধটু গরিব দুঃখীর কে দান করানো যায় তাদের মনেও ছোটবেলা থেকে সহানুভূতিশীলতা তৈরি হবে। গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করানো,নিজেই তাদের সামনে প্রণাম করা, বড়দের শ্রদ্ধা ও সম্মান দিয়ে কথা বলা, নিজেও তার সামনে করলে শিশুরা অনুকরণ করে অবশ্যই তা রপ্ত করতে পারবে। আন্তরিকতা সবার উপর দেখালে শিশুরাও সেই বোধ অর্জন করবে। কারো বিপদের সময় পাশে দাঁড়ালে শিশুরা উদ্দীপিত হবে। আমরা যদি ছোটবেলা থেকে যেগুলো আমরা শিশুদের কাছে চাই তাদের নজরে এনে আমরা যদি সেই কাজে ব্রতী থাকি শিশুরা অবশ্যই তা শিখতে পারবে। বাড়ির যেকোনো ছোটখাটো কাজে শিশুদের হাত লাগাতে উৎসাহ দেওয়া ,প্রশংসা করা ইত্যাদি করলে ধীরে ধীরে তারা সহযোগী মনোভাবাপন্ন হবে ।ভবিষ্যতে উপযুক্ত ভাবে সহনশীল হয়ে উঠবে।
বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে আমরা যদি যান্ত্রিক হয়ে উঠি শিশুদের মনের দোরগোড়ায় না পৌঁছাই
তাহলে শিশুদের আয়ত্তে আনা কখনোই সম্ভব নয়। নানা রকম খেলনা পাতি কিংবা মোবাইল গেম শিশুকে যান্ত্রিক তৈরি করবেই। আমরা যদি পারিবারিক ও শারীরিকভাবে তাদের মনের দোরগোড়ায় পৌঁছাই ও সাহচর্য দিতে পারি তাদের কিন্তু প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো এই আশা রাখতেই পারি।