T3 || বর্ষ শেষে বর্ষবরণ || সংখ্যায় মিঠুন মুখার্জী

নববর্ষের আনন্দ 

নববর্ষ বাঙালির কাছে খুব আনন্দের। বিশ্বের সকল জাতির আনন্দের দিন যেমন ইংরেজি নববর্ষ, তেমনি বাঙালির কাছে বাংলা নববর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরন করার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমি নবীন যাদব। আমি বাঙালি নই ,কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে থাকতে থাকতে আমি মনে প্রানে বাঙালি হয়ে উঠেছি। আমার বাড়ি বিহারের পাটনায়। কর্মসূত্রে আমি কলকাতার বেহালায় থাকি। আমি একজন স্টেশন মাস্টার। বারাসাতে আমার পোস্টিং।
বাঙালি মানেই বারো মাসে তেরো পার্বণ।তারা আনন্দ করতে খুব ভালোবাসেন। তাই প্রত্যেক মাসেই কোনো না কোনো উৎসবে মেতে থাকে। এখানে কুড়িবছর থাকার ফলে আমি মাঝে মাঝে ভুলে যাই আমি বিহারী না বাঙালি। দীর্ঘ দিন এখানে থাকার ফলে আমি ও আমার পরিবার ভালোই বাংলা শিখে গেছি।প্রত্যেক নববর্ষে আমার বাঙালি কলিগরা ও বাঙালি বন্ধুরা আমাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। আমাকে কেউ মিস্টির প্যাকেট আবার কেউ লাড্ডু ও ক্যালেন্ডার দেন। আমার খুব ভালো লাগে।এমন কি কোলাকুলিও করেন। বেশিরভাগই পাঞ্জাবি ও পাজামা কিংবা ধুতি পড়েন। দারুন লাগে দেখতে।
বারাসাত থেকে মিনিট চল্লিশেক সময় লাগে গোবরডাঙায় যেতে। প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখ থেকে দশ দিন “গোবরডাঙা ঐতিহাসিক স্মৃতিরক্ষা কমিটি”র পরিচালনায় একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেখবার মতো মেলা। পয়লা বৈশাখের দিন ভোরবেলা থেকে মসলার মেলা চলে এখানে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসলা নিয়ে আসে বিভিন্ন লোক। আমি প্রত্যেক বৎসর আমার এক কলিগের বাড়িতে এই সময় যাই। গোবরডাঙা রেলস্টেশনের কাছাকাছি তার বাড়ি। সেখানেই থেকে পয়লা বৈশাখ ও দোসরা বৈশাখ এই মেলার আনন্দ উপভোগ করি আমি। এত অসাধারণ লাগে আমার, তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আমি বিহারের পাটনার সন্তান কিন্তু সেখানে এরকম মেলা পাইনা। কত দোকান, নাগরদোলা, কত মানুষের ভিড়, জায়গায় জায়গার জলসত্র— সে এক কথায় মহাযজ্ঞ। আমার বন্ধু সুজনের কাছ থেকে শুনেছি— “গোবরডাঙা একটি ঐতিহাসিক জায়গা। জমিদারদের আমল থেকেই এই মেলাটি চলে আসছে। প্রায় দুশো বছরের কাছাকাছি এই মেলার বয়স‌।” শুধু গোবরডাঙার মেলাই নয়, সুজনের সঙ্গে আমি কয়েকবার গোবরডাঙার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেরিয়েছি। সত্যি আমার খুবই ভালো লেগেছে। এখানকার মানুষগুলো খুবই অতিথিপরায়ন। যার বাড়িতেই গেছি তাদের আপ্যায়নে আমি অভিভূত। একবারও মনে হয়নি আমি আগন্তুক বিহারী সন্তান।
করোনার এই দুই বৎসর প্রতিটি মানুষই খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদই বড় হয়ে উঠেছিল সকলের কাছে। দুটি নববর্ষ বাঙালির কাছে খুব একটা ভালো যায়নি। কারো মনে দুঃখ ছিল, কারো আক্ষেপ। আমারও গত দু’বছর গোবরডাঙা যাওয়া হয়নি। এই দু’বছর হয়তো অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। বাঙালির এই নববর্ষের আনন্দের আমিও একজন শরিক হতে পেরে নিজের প্রতি গর্ব বোধ করতাম। আমার নিজেরও খুবই খারাপ লেগেছে জীবন থমকে যাওয়ায়। অনেক প্রাণ চলে গিয়েছে এই দু বছরে। তবে পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে আবার নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আবারো নববর্ষের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি। শুনেছি এবার নাকি নববর্ষের আনন্দ সব জায়গাতেই মহাসমারোহে পালিত হবে। আবার বাঙালিরা ফিরে পাবে তার পুরনো ছন্দ। আবার বলবে— “আমরা বাঙালি। আমাদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। আমরা উৎসব প্রিয় বাঙালি।”এবার আবার গোবরডাঙায় যাব। মেলার আনন্দ উপভোগ করব। বাঙালির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাব। নববর্ষের নবীন আলোয় নবীন যাদবের জীবনের পুরাতন সব অন্ধকার দূর হয়ে যাবে। আমি চিৎকার করে দু হাত তুলে বলব —“বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল—/ পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।”

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।