• Uncategorized
  • 0

গদ্যের পোডিয়ামে মালা মিত্র

মরণ রে তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান

নশ্বর এ পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী নয়। তাইতো জন্ম হলেই একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়,অন্তে আবারো যে দেশ থেকে আসা সেখানে ফেরত যেতে হয়। তবুও মানুষ তার এত কম আয়ু নিয়ে বিবাদ বিসম্বাদে মহার্ঘ সময় অতিবাহিত করে দেখে,কখন যেন তার সময় ফুরিয়েছে,যাবার বেলা দোড়ে কড়া নাড়ে।
অন্তদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ নিজের মত করে মৃত্যু ভাবনাকে ভাবতে পারেন।
তাইতো মধু কবির অমর সৃষ্টি,’জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা ভবে,চির স্থির কবে নীড়,হায়রে জীবন নদে’,এই ভাবনা।
সৃষ্টিশীল মানুষেরা যেমন কবি সাহিত্যক শিল্প সাহিত্য, দেশপ্রেমিক, যে কোন শাখার মানুষ জনেরা তার কাজের মধ্যে দিয়ে অমরত্ব লাভ করেন।ইতিহাসে স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকে সে নাম।
বিকশিত হবার আগে অসময়ে কারও মৃত্যু বেদনাদায়ক।
কথায় বলে আজ মরলে কাল দুদিন,সত্যিতো প্রিয় মানুষ কে দিনের পর দিন না দেখতে দেখতে ক্রমশঃ তারা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যান।
কিন্তু মানব কল্যাণে যার কিছু অবদান আছে তাকে মানুষ পুরোপুরি ভুলে যায় না।
মরণের জয়গান করে রবি কবি বলেন,’মরণ সাগর পারে তোমরা অমর,তোমাদের স্মরি’।
আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের কাছে মৃত্যু সে তো অজ্ঞাত।মৃত্যু কবিতায় কবি বলেন,’মৃত্যু অজ্ঞাত মোর আজি তার তরে,ক্ষণে ক্ষণে শিহরিয়া কাঁপিতেছি ডরে,এত ভালবাসি বলে হয়ছে প্রত্যয়,মৃত্যুরে আমি ভালবাসিব নিশ্চয়’।
দর্শনের মর্মবানী’ইশা মিদং যৎ কিঞ্চিত জগতাং জগৎ,(অর্থাৎ এই গতিশীল বিশ্বে যা কিছু চলমান তা ঈশ্বরের বাসের নিমিত্ত মনে করিবে)
কবি তার গভীর উপলব্ধি থেকে লেখেন,’তোমার মহা বিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু,আমরা অবোধ অন্ধমায়ায় তাইতো কাঁদি প্রভু’।
আসলে ব্রহ্মসাগরের আমরা এক একটি ঢেউ,ব্রহ্মের নিমিত্ত,তাঁর নির্দেশে জগতে আসি,কাজ ফুরোলেই তাঁরই নির্দেশে আবার ব্রহ্মসাগরে মিশি।
তাই তো কবি শুনতে পান,’ওই মহা সিন্ধুর ওপার থেকে কি সঙ্গীত ভেসে আসে’।
মৃত্যু যন্ত্রণা কে আত্মীকরণ করে কবি লেখেন,’আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে,তবুও শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে’।
কচু পাতায় জলের মত জীবন আজ আছে কাল নেই,কিন্তু মহাবিশ্ব তার আপন ঢঙে বহমান।
অনন্তের জীব অনন্তে মিলায়,আমরা কেঁদে মরি,জন্মের মত হারিয়ে ফেলার ব্যথা তো থাকেই,তাই তো কেঁদে বলি,’শূণ্য এ বুকে পাখী মোর আয় ফিরে আয় ফিরে আয়’।
কাঁদন সার হয় পাখী ফেরেনা,সে যে অমৃত লোকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।
যখন হৃদয়ের বুলবুল পাখীটি হটাৎ না হয়ে যায়,কবি তার কান্না কলমে ব্যক্ত করেন,’ঘুমিয়ে গেছে ক্লান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি,’প্রিয় বুলবুলি যখন আর গান গায় না,কান্না কলমে উথলায়,’বুলবলি নিরব নার্গিস বনে ঝরা বন গোলাপের বিলাপ শোনে’।
পরের পর প্রিয় জনের মৃত্যু দেখে,ব্যথিত কবি লেখেন,’এ বিশ্বেরে ভালবাসিয়াছি,এ ভালবাসাই সত্য অম্লান হয়ে,মৃত্যুরে করিবে অস্বীকার ‘।
যখন কবি বোঝেন জীবন মৃত্যু একসাগরের দুই কূল,তার উদার নির্ভিক মন মৃত্যুকেও আপনার ভেবে প্রণাম জানিয়ে বলেন,’তোমার অসীমে প্রাণ মন লয়ে যতদূরে আমি ধাই,কোথাও দুঃখ কোথাও মৃত্যু কোথা বিচ্ছেদ নাই ‘।
কালের সাগরে প্রতিনিয়ত জন্ম মৃত্যর খেলা,ঠিক রিলে রেসের মত,যখন একজন তার পরিক্রমা শেষে ব্যাটন অন্য আর একজনের হাতে তুলে দেন,এভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে চলে জীবন মৃত্যুর খেলা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।