কবিতায় মধুসূদন দরিপা

জোনাকি

দার্জিলিং থেকে ফেরার সময় ঘুম থেকে
কার্তিকের মেঘ রোদ জল মাখা বাতাসিয়া লুপ
উপহার দিলেন কবি মনপ্রসাদ সুব্বা

তাঁর পাইন গাছের বাড়ির খোলা ছাদ থেকে
ঝলমলে সোনায় মোড়া ঘুমন্ত বুদ্ধ
এঁকে দিলেন আমাদের চোখে
মিরিকের কবি অনিল মনি প্রধান

আর

বক্সা জয়ন্তীর বনানী পূর্বরাগ কোলে
লবটুলিয়ার গন্ধমাখা এক আঁচল বিভূতিভূষণ
ঢেলে দিলেন আলিপুরদুয়ারের
তরুণ কবি কৌশিক রায়

এবার তো ক্ষান্ত হও হে সমতল
এবার তো শান্ত হও হে কোলাহল
এবার তো ফিরিয়ে দাও নির্জনতা
দু’দণ্ড শান্তি আর বনলতা সেন

কত কত দিন হ’ল দেখিনি
রঞ্জনার মুখ
কত কত দিন হ’ল কথা হয়নি
নন্দিনীর সাথে
সাধারণ মেয়েগুলি সব সেক্টর ফাইভে গেছে ঢুকে
আমি দৈনিক না পড়ে পিছিয়ে পড়ি রোজ
মনুমেন্টের নিচে বসে বোকা বোকা চোখে লুকিয়ে তুষার রায় পড়ি
অথচ পাশেই দ‍্যাখো গঙ্গা
কেমন অনায়াসে
লুই পাদ বিদ‍্যাপতি নিয়ে
সুবোধ সরকারের সঙ্গে আড্ডা দ‍্যায় আউট্রাম ঘাটে

এ জীবনে কিসুই হলো না অমলকান্তি
দপ্ করে জ্বলে ওঠা বিরসা
দুম করে ফেটে পড়া আলিপুর বোমা
কিংবা নিদেনপক্ষে একটা গঙ্গা ফড়িং
লাফিয়ে লাফিয়ে ছোঁয়া ঘাসের উপরে থাকা শিশিরবিন্দু গুলি সব
অথবা অতলান্ত জলের গভীরে নেমে ক‍্যাট ফিশ হয়ে শুনে নেওয়া
ভূমিকম্পের আগে কতটা কম হার্জ হতে পারে শব্দের ইশারা

এমন ব‍্যস্ত ত্রস্ত জনপদে বসে
কীকরে কবিতা লেখো কবি
কীভাবে গান গাও কানে তুলো নাকে তুলো গুঁজে
এতো আলো এতো অন্ধকার কালো
বাংলার গ্রাম থেকে মফস্বল ভেঙে
কীকরে কীকরে জ্বলে ওঠে জোনাকির মতো
টিপ টিপ টিপ টিপ কবিতার তারা
নিঝুম আকাশে

মহানগরীর এই উপকূলে বসে
বেশ বুঝি বেশ বুঝি
ওহে নগর নাগরী বাবু বিবি
শাদা পায়রার ডানায় নিজের নামটি লিখে
যতই উপমা লেখো বহমান নদী
আদতে জীবন মানে শুধু
জোনাকিই এক
তোমার আমার
আমার তোমার।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।