হৈচৈ ছোটদের গল্পে মোঃ আব্দুল রহমান

সোহার জয়
সোহা ছোট থেকে বাড়ির পাশের মাঠে একাকি ঘুরে বেড়াত। প্রকৃতির প্রতি সে ভীষণ আকৃষ্ট ছিল। তার একটি ছোট্ট বকুল গাছের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দুজনে রোজ বিকেলে খেলে আর আনন্দ করে। তাদের খুশির সীমা নেই।
সোহা! সোহা! উচ্চস্বরে তার মা ডাকল।
সোহার সেদিন বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হল। তার মা ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ল। বিকেল বেয়ে সন্ধ্যে নামল।
মা, আমার এক নতুন বন্ধু হয়েছে; সোহা তার মাকে বলল। সোহার মা তার কথায় কর্ণপাত না করে কষিয়ে এক থাপ্পড় দিল গালে। “কতবার বলেছি মাঠে যাবি না;” রুনা লাইলা বিবি বললেন। আজ থেকে তোর বাইরে যাওয়া বন্ধ। সোহা ভীষণ কাঁদতে লাগল।
তিনদিন হল সোহা বাইরে বেরোয় নি। তার ভীষণ মন খারাপ। তার বন্ধুর কথা মনে পড়ছে ভীষণ। আজকে সবাই এসেছে সেখানে হয়তো, কেবল মাত্র সোহা যেতে পারেনি।
বকুল গাছটিতে বিভিন্ন পাখিদের কোলাহল: গাছটির নীচে ছোট ফুলগুলোতে মৌমাছিদের গুঞ্জন, গোধূলির লগ্নে মৃদু বাতাস, শান্তিময় পরিবেশ, এক কথায় প্রশান্তির নীড়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সব যেন ভাঁটা পড়ে গেল। বকুল গাছটির ভীষণ মন খারাপ, সবার মন খারাপ কারণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে সকলে।
এদিকে সোহাকে জোর করে রুনা লাইলা বিবি ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখেছেন, বাইরে বেরোতে দেননি এক সপ্তাহ। সোহার শরীর ঘরের মধ্যে থাকলেও মন পড়ে আছে ঐ বকুল তলায়।
সোহার বাবা আরজোম আলি সেখ সুগারের রুগী। একদিন হঠাৎ করে হিমোগ্লোবিনের অভাবে সোহার বাবা অসুস্থ হয়ে অবচেতন হয়ে পড়লে, বাড়িতে হৈচৈ পড়ে যায়। ডাক্তার বলে শরীরে রক্তের প্রয়োজন। সোহা তার মাকে বলে; “মা, আমি পাপার রক্ত এনে দিতে পারব।” এই কথা শুনে সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়।
সোহা স্কুলের বইয়ে পড়েছিল কুলেখাড়ার রস খেলে শরীরে প্রচুর রক্ত উৎপন্ন হয় এবং শরীরে রক্তের অভাব মেটায়। সপ্তাহ খানেক পর সে এখন রোজ বিকেলে কুলেখাড়ার পাতা আনতে যায় সেই বকুল তলায়। সোহাকে ফিরে পেয়ে তার বন্ধুরা ভীষণ খুশি, সোহাও ভীষণ খুশি বকুলের কাছে আসতে পেয়ে। প্রকৃতি যেন তার চিরসুখ আবার ফিরে পায়।
সোহার বাবা এখন অনেক সুস্থ আছে। সোহার মা সোহাকে বকুল তলায় যাওয়ার জন্য আর বকে না, বরঞ্চ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে এবং জিজ্ঞেস করে তোর বন্ধু কেমন আছে।
আজকে সোহা মহা ধুমধাম করে নবমতম জন্মদিন উদযাপন করছে বকুলতলায় প্রকৃতির বন্ধুদের সাথে। প্রকৃতির সকল বন্ধুরাই ভীষণ খুশি ও আনন্দিত। সোহার পরিবারও পরম সুখ অনুভব করছে।