• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে কুণাল রায় (পর্ব – ১২)

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা

তৃতীয় অধ্যায়ে তৃতীয় এবং অন্তিম ভাগ: কর্মযোগ

ভগবান অর্জুনকে বললেন যে অজ্ঞান মানুষ কর্মে আসক্ত হয়ে যে রূপে কাজ করেন, জ্ঞানী ব্যক্তিরাও ঠিক সেই রূপেই কাজ করেন।
তবে কর্মের ফলের আশা করে যাঁরা কর্ম করেন, তাঁদের কোনোভাবেই ভুল পথে যাওয়া উচিত নয়। জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাঁদের জ্ঞান ও বুদ্ধির সাহায্যে সকল কর্ম করেন এবং অজ্ঞান ব্যক্তিদের দিয়েও কর্ম করাতে সক্ষম হন।
এই প্রকৃতির সত্ত্ব, রজ ও তম গুণ মানুষের সকল কর্মের পেছনে এক সক্রিয় ভূমিকা থাকে। কিন্তু অহংকারে বশীভূত হয়ে ব্যক্তি মনে করেন যে তিনিই সব কিছু করছেন।
আত্মা সম্পূর্ণ রূপে পৃথক গুণ ও কর্মের থেকে। এক সত্য। এই সত্য যিনি উপলব্ধি করেন তিনি বুঝতে সক্ষম হন যে ইন্দ্রিয়গুলো কিছু করে না, আত্মাই সব করে। অহংকার কোনোভাবেই জ্ঞানী ব্যক্তির মন মস্তিস্ক গ্রাস করতে পারে না।
অন্যদিকে যে সকল ব্যক্তিরা এই প্রকৃতির কর্মকে আপন কর্ম বলে মনে করেন, তাঁরা প্রকৃত অর্থে নির্বোধ। তবে জ্ঞানী ব্যক্তিরা কখনও তাঁদের ভুল পথে নিয়ে যান না।
তাই শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর সকল কর্মের ফল তাঁর পায়ে সমর্পন করতে বলে, যুদ্ধের জন্য অনুপ্রাণিত করেন।
তাই যে সকল মানুষরা তাঁর কথা বিশ্বাস করেন এবং কোন দোষ ত্রুটির সন্ধান না করে, সদা তাঁর কথা মত চলেন,তাঁরা কর্ম বন্ধনে বাঁধা পড়েন না। এর বিপরীত মানুষের পতনকে আহ্বান জানায়।
জ্ঞানী ব্যক্তিরা আপন স্বভাব অনুযায়ী কর্ম করেন। এক চিরন্তন সত্য। তাই ইন্দ্রিয়গুলোকে নিগৃহীত করবার চিন্তা ত্যাগ করা উচিত।
সকল ইন্দ্রিয়ের স্বভাব এক। ভালো ও মন্দ লাগবার মাঝে তাঁদের অস্তিত্ব। দুটিই মুক্তির বাঁধা। সুতরাং এদের বশে আসা উচিত নয়।
নিজের ধর্মে ত্রুটি থাকলেও, তা পর ধর্মের অপেক্ষায় শ্রেয়। আপন ধর্মে থেকে মৃত্যুও ভাল। কিন্তু পরধর্মে করতে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার।
অর্জুন ভগবানকে জিজ্ঞাসা করলেন যে পাপ না করলেও, কে বা কারা জোর করে পাপ করায়!
ভগবান বললেন যে মানুষের কাম তাঁকে দিয়ে সকল পাপ করায়। এই পাপ বাঁধা প্রাপ্ত হলে, ক্রোধ রূপে প্রকাশ পায়। রজগুণের সন্তান। কোনোভাবেই একে সন্তুষ্ট করা যায় না। অত্যন্ত প্রবল, ভয়ঙ্কর এবং মুক্তির সর্বোত্তম অন্তরায়।
যেমন ধোঁয়া আগুনকে আবৃত রাখে, আয়নার ওপরে ময়লা জমলে মুখ দেখা যায় না, গর্ভের শিশু চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে, তেমনি এই কাম জ্ঞানকে আবৃত রাখে।
তাই এই কাম চিরকালের শত্রু। কোনোভাবেই সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। কাম এক উষ্ণতা প্রদান করে। জ্ঞানকে আবৃত রাখে, চিরতরে। ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি ও জ্ঞানকে আবৃত করে, কাম আত্মপ্রকাশ করে। মানুষের বিবেক ধ্বংস করে। মোহগ্রস্ত করে রাখে।
শরীরের চেয়ে ইন্দ্রিয় বড়, ইন্দ্রিয়ের চেয়ে মন বড়। মনের থেকে বুদ্ধি বড়। এবং বুদ্ধির থেকেও আত্মা বড়।
তাই মহাবীর অর্জুনকে ভগবান বললেন যে তিনি নিজের বুদ্ধির সাহায্যে মনকে স্থির করে, এই ভয়ঙ্কর শত্রু কামকে নির্মূল করেন।

তৃতীয় অধ্যায় সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *