সুশীলার ভরাভরি অবস্থা । ৯মাসে সাধ খেতে বাপের বাড়ি যাওয়া হবেনা । কলেরা চারিদিকে । রেডিওতে শুনছে রোজ । উনি গেছেন রাঙা পিসিকে আনতে । সুশীলার বাপের বাড়ি আদ্যাপীঠ মন্দিরের কাছে । শ্যামনগর থেকে গরুরগাড়িতে এক বেলা লাগে । ভোরেই বেরিয়েছেন চিনি । রাতে জিরিয়ে কাল সকালে পিসিমাকে নিয়ে আসবেন । সুশীলা ২৯ বছর বয়েসে ৭মেয়ের মা । প্রথম পোয়াতির মতো ন্যাকা সে নয় । রাতে সবাইকে, খাইয়ে দিয়ে শুতে এলে চিন্তা উনি কাল কখন ফেরেন। বড় মেয়ে খুকু এই ১৪য় পা দিয়েছে, গুছিয়ে কাজ করে আর বোনদেরও সামলায় । সবার আশা একটাই ছেলে হবে । ভোরবেলায় এক কান্ড হোলো সুশীলার ছেলে হোলো , নাড়ি কাটলো পাড়ার কুজোবুড়ি । খুকু তখন পাকাগিন্নীর মতো সব সামলাচ্ছে ।
বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ জ্ঞান ফিরলো সুশীলার । এবারে খুব দূর্বল শরীর । ডাক্তারবাবু আগেই বলেছিলেন সাবধান, বিপদ হতে পারে । আর তাই জন্যেই রাঙাপিসিকে আনতে যাওয়া ওনার । হ্যাঁ রে খুকু তোর বাবা আসেননি এখনও ! হ্যাঁ রে ক’টা বাজে বলতো !
সুশীলার ১৩বছর বয়েসে বিয়ে হয়েছিলো দোজবরের সাথে । প্রথপক্ষ ছেলে বিয়োতে গিয়ে গত হয়েছেন ।সুশীলা রোজ পুকুরপাড়ে নাইতে গেলে ১টা কাক কা কা করে পেয়ারাগাছে ডাকতো, ওর মনে হোতো কাকটা হয়তো মায়ের খবর এনেছে, হয়তো আদ্যাপীঠের কাক। আজ খুব মনে হচ্ছে কাকটাকে পেলে বসতাম ওনার খবর এনে দিতে। একবার যদি বলতে পারতাম, ওগো খোকা হয়েছে । আমি পেরেছি তোমার বংশের নাম রাখতে । তোমার আর আমার জন্য সতীন আনতে হবেনা ।
আরও একদিন পর । সুশীলার বুক হা হা করে । কাক ডেকেই চলে কার্নিশে ।তবে কি উনি বে’ করে আনছে ! আমার মাথা খাও তারকনাথ, এতো বড় সব্বনেশ কোরোনি আমার !
খুকু হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে ঘরের ভিতর । ওরে আতুর রে ! ছুঁসনা রে , ছুঁসনা । পুকুরে ডুব দিয়ে জ্বর হলে বাকিগুলো না খেতে পেয়ে মরবে রে ! খুকু খানিক দম নিয়ে, ওমা ওমা কতো লোক এয়েচে বৈঠকখানায় । বলচে বড়দের ডাকতে । ওমা ওরা বাবার খবর নিয়ে এসছে । সুশীলা কাঁদে আকুলি বিকুলি, তুমি কি করলে ভগবান ! এতো শিবরাত্তির করে জল ঢেলেছি মাথায় , আর তুমি সতীন নিয়ে ঘর করাবে ! এর থেকে আমার ছেলে নাই হোতো ।
বড় জ্যাঠাইমা এসে হঠাৎ বললেন , এত্তো সুখ তোর আর সইলোনা রে! সোয়ামী খেয়েছিস রে হতভাগী !
দুইদিন পর জ্ঞান ফিরলে সুশীলা শুনলো উনি আদ্যাপীঠে গিয়ে কলেরায় কবলিত হয়ে পরে । শবদাহ করতে গেছিলেন রাঙাপিসির, বিকেলে আর ফিরেই উনি ঘরবার করতে থাকেন । একরাতেই সব শেষ।
সুশীলা আট সন্তান নিয়ে ২৯বছর বয়েসে
জমিজমার হিসেব দেখে আর একটাই কথা ভাবে এত সম্পত্তি কি পারতোনা ওনাকে বাঁচিয়ে দিতে, ছেলেটাকে বাবা দেখাতে !
মহামারী কেড়ে নিলো সব , যারা থাকলো তারা শোকে শেষ হবে !