• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – পঁয়ত্রিশ

টুকরো হাসি – পঁয়ত্রিশ

লেংচে হাঁটছে

হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। সুজয় দেখল অচেনা নম্বর। সে ধরল না। আজকাল অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে ভয় করে। তার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে কিছু সন্ত্রাসবাদী ধরা পড়েছে। কেউ ভুয়ো অফিসার পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়েছে। আর অনায়াসে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া ও বোনাস পাওয়ার খবর তো আছেই। করোনা এসে যা যা দিচ্ছে তার ঠেলাই এখন সামলান মুশকিল। তার উপর এসব বাড়তি উপদ্রব।
পর পর পাঁচবার একই নম্বর থেকে মোবাইল বাজতে মনে হল নিশ্চয়ই চেনা কেউ। তা না হলে এতবার ফোন করত না।
ফোন তুলে বলল, ‘কে বলছেন?’
‘এই বলছেন মানে কি? চিনতে পারছিস না?’
কণ্ঠস্বর চেনা চেনা লাগছে তবুও বুঝে উঠতে পারল না সুজয়। বাড়িতে বসে থেকে মাথাটা কেমন ভেবলে গেছে। বলল, ‘এই নম্বরটা আমার কাছে নেই। তাই বুঝতে পারছি না আপনি কে বলছেন।’
‘আমি বিনোদ বলছি। এবার চিনতে পারছিস?’
‘তাই বল। আমার আগের ফোনটা আচমকা দেহ রাখল। আর একটা কিনতে হল। সব নম্বর সেভ করা হয়নি।’
‘ঠিক আছে। অত কথা ছাড়। তুই কি বাড়ি থেকে বেরুচ্ছিস?’
‘না না অফিসের কাজ তো বাড়িতে বসেই করছি। বেরোই না আর। ইচ্ছে করে না। তোর খবর কি বল। কিছু হল?’
‘একটা কাজ জুটেছে। তবে বাড়ি বসে করতে পারি না। আমাকে অফিসে যেতেই হয়।’
‘তুই চাকরি পেলি আর জানালি না? শুনলে খুশি হতাম। ভ্যাকসিন নিয়েছিস?’
‘হ্যাঁ। অফিস থেকে ব্যবস্থা করে দিয়েছে।’
‘সে কীরে! কোন ভ্যাকসিন? কোনো ভুয়ো ভ্যাকসিনের পাল্লায় পড়িসনি তো?’
‘না না। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে একটা দাড়িওয়ালা সার্টিফিকেট পেয়েছি। সবাই বলল ওটা ঠিক আছে।
‘যাক নিশ্চিন্ত।’
‘তুই নিয়েছিস?’
‘এখনও নিতে পারিনি। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পাইনি। আর যেতে ইচ্ছে করেনি। গেলে হয়তো ভ্যাকসিন এর বদলে ফ্রিতে করোনা নিয়ে আসতে হবে। যাক ওসব বাদ দে। তুই চাকরি পেয়েছিস এটা নিয়ে যে একটু উল্লাসে বসব তার উপায় নেই। এমনই বিটকেল দিনকাল।’
বিনোদ বলল, ‘আর উল্লাস। চাকরি পেয়ে আমার মনে কোনো আনন্দ নেই।’
‘কেন? চাকরি চাকরি করছিলি এখন তা পেয়ে আনন্দ নেই কেন?’
‘আমার একটা বস জুটেছে। খুব জ্বালাচ্ছে। কিছু বলতে পারছি না। খুব অশান্তিতে আছি। তোকে ফোন করলাম যদি একটা বুদ্ধি দিতে পারিস।’
‘চাকরি পেয়েছিস যে কাজ করছিস আনন্দের সঙ্গে কর। আমাকে বাড়িতে বসে কাজ করতে হচ্ছে। ভালো লাগছে না। তবু মানিয়ে নিয়েছি।’
‘কাজে আমার তো আপত্তি নেই। অফিসে যেতেও তো খারাপ লাগছে না।’
‘তবে?’
‘আমাকে দিয়ে বস সবজি কেনাচ্ছে। সিগারেটের প্যাকেট আনাচ্ছে। দেশলাই। একদিন তো দুটো স্যানিটাইজারের বোতল আর মাস্ক কিনতে হল। এতে আমার যদিও আপত্তি ছিল না। কিন্তু…’
‘তোর কি সরকারি অফিস?’ সুজয় জিজ্ঞাসা করল।
‘না রে। তবে তো ইউনিয়নে চাঁদা দিয়ে ঝান্ডা হাতে নিয়ে কাজ না করে ব্যাটাকে বোঝাতাম মজা। এটা প্রাইভেট চাকরি। বসকে চটালে নট হয়ে যেতে পারে।’
সুজয় বলল, ‘চাকরি যখন পেয়েছিস ওটা মন দিয়ে কর। বসের জন্য ওরকম কাজ একটু আধটু করতে হয়। সরকারি চাকরির জন্য অপেক্ষা করে তো পেলি না। শুনছি চাকরি পাওয়ার বয়স অবশ্য বাড়িয়ে দেবে।’
‘সেখানে তো পরীক্ষা দিয়েছি। অপেক্ষায় আছি।’
‘ও চাকরি পেতে পেতে ঘাটে যাওয়ার সময় হয়ে যাবে।’
‘তুই আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছিস? আমার অবস্থায় পড়লে তোর মাথা গরম হয়ে যেত।’
‘রেগে যাস না। আসলে অনেকদিন বাদে তোর সঙ্গে কথা হচ্ছে তো, তাই হয়ত বেশি বলে ফেলেছি। বল কি হয়েছে?’
‘কিছুদিন ধরে বস আমাকে দিয়ে ওর টিফিনবক্স পরিষ্কার করাচ্ছে। ন্যাকামো করে বলছে, বাড়িতে গেলে ওনার মিসেস নাকি ওটা দেখে। পরিষ্কার করা হয়নি এটা দেখলে খুব মেজাজ করবে। বলল, তোমার তো বেশি কাজ নেই। তুমি আমার টিফিনবক্সটা রোজ যদি একটু মেজে পরিস্কার করে দাও তাহলে বাড়িতে গিয়ে মিসেসের গঞ্জনা শুনতে হয় না। বহুদিন হল আমি ওই লোকটার টিফিনবক্স সাফ করছি। আমি কি এই জন্য এম এ পাশ করেছিলাম?’
সুজয় বলল, ‘তুই এমন ভাবে বলছিস যে আমি যেন তোর জ্যাঠামশাই। তোর অফিসে গিয়ে ওই লোকটার কান ধরে ওঠবোস করাব।’
বিনোদ কাতর হয়ে বলল, ‘কিছু একটা পরামর্শ তো দে। আমি আর পারছি না সহ্য করতে।’
সুজয় বলল, ‘তবে যা বলছি মন দিয়ে শোন। ফোনটা রাখার আগে বলল, ‘যা বললাম ঠিক ঠিক তাই করিস। তারপর কি হল আমাকে জানাস।’
দু’দিন বাদে বিনোদের ফোন এল। একটা জরুরি কাজ ফেলে সুজয় ফোনটা ধরল। বলল, ‘বল কি খবর? যেমন বলেছিলাম তেমন করেছিস?’
সুজয় বলল, ‘হ্যাঁ।’
‘কি করলি? পরপর বলে যা।‘ সুজয় উত্তেজিত হয়ে বলল।
‘আমি বসের টিফিনবক্স মেজে দিলাম।’
‘ওফ। ওটা তো রোজই করিস। আসল কথাটা বল। তারপরে কি হল?’
‘তুই যেমন বলেছিলি তেমন একটা চিঠি লিখলাম।’
‘চিঠিতে কি লিখেছিস সেটা বল।’
‘লিখেছি, আমার সন্টু সোনা, তোমার জন্য দুটো চকোলেট দিলাম। এই দু’টো তুমি রাতে খাবে, আর আমার কথা ভাববে। তুমি কিন্তু ভুলেও এক টুকরো চকলেটও তোমার ওই পেতনির মতো দেখতে রাক্ষসী বউকে দিও না। তবে আমি তোমাকে আর ভালোবাসব না। ইতি-তোমারই আমি।’
সুজয় বলল, বাহারে বাহা। শুধু এইটুকুই লিখেছিস?’
‘না। আরও একটু লিখেছি। পুনঃ- তুমি অনেক অনেক চুমু নিও। তুমি শুধু আমার।
সুজয় বলল, ‘আর কথা হবে না। তারপর আর কি করলি?’
বিনোদ বলল, ‘লিখতে লিখতে মুড এসে গিয়েছিল। তাই চিঠিতে আরও একটা কথা লিখলাম। সন্টু সোনা, তুমি রাতে যখন আমার কথা ভাববে তখন তোমার ওই হুমদো বউটাকে লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিও। এটা লিখে ওই চিঠি আর দু’টো চকলেটের প্যাকেট বসের টিফিনবক্সে রেখে দিলাম।’
‘ওরে তুই তো কামাল করে দিয়েছিস।‘
বিনোদ উৎসাহ পেয়ে বলল, ‘চিঠিতে আমি সবুজ টিপ আটকে দিয়ে ছিলাম আর লাল কালিতে একটা ঠোঁট এঁকেছিলাম।’
সুজয় বলল, ‘আজ অফিসে গিয়েছিলি?’
‘হ্যাঁ।’
‘বস তোকে টিফিনবক্স মাজতে বলল?’
‘না। বসের ঘরে একাউন্টের একটা কাজ নিয়ে গিয়েছিলাম। গম্ভীর হয়ে সেটা দেখে সই করে দিল। দেখলাম একটা চোখ ফুলে কালশিটে মেরে আছে।’
সুজয় বলল, ‘ব্যাস এইটুকু? আর কিছু দেখলি না?’
বিনোদ বলল, ‘আরেকটা ব্যাপার দেখলাম।’
‘কি দেখলি?’ সুজয় বলল।
বিনোদ বলল, ‘অফিস ছুটির পর বস যখন বেরুল দেখলাম লেংচে হাঁটছে।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *