সাপ্তাহিক গল্প নেই-তে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – ২

গল্প নেই – ২

নাম মালতী,বাসন্তী বা চাঁপা যাই হোক কিছু একটা হতে পারে।নাম নিয়ে অযথা মাথা ঘামানোর দরকার নেই।মেয়েলোকটির দিকে একবার তাকিয়ে দ্বিতীয়বার তাকানোর ইচ্ছেও হবে না আপনার।যদি মেয়েটি ডবকা সুন্দরী হত আর চেহারায় থাকত খানিকটা আলগা চটক,তবে ভিড় বাসে উঠতে না পেরেও আপনি বিরক্ত হতেন না।অন্য বাসের জন্য খুশি হয়েই অপেক্ষা করতেন।ততক্ষণে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আপনার চোখের খানিকটা আরাম হত।
অফিস টাইম।বাস আসার যেমন বিরাম নেই তেমন সেই বাসে ওঠারও কোনো উপায় নেই।এত ভিড়।আপনি তো একটার পর একটা বাস ছেড়ে অপেক্ষায় আছেন।যদি একটা কম ভিড় বাস আসে আপনি সেটায় যাবেন।আপনার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।মুখে পান।এতদিনের চাকরি জীবনে আপনি বাসের মতিগতি বুঝে গেছেন।আর এই মেয়েলোকটির অবস্থা দেখুন একটা বাস এলেই ছুটে যাচ্ছে,আর ফিরে আসছে ধাক্কা খেয়ে।কোলের বাচ্চাটির দু’টো লিকলিকে পা দুলে উঠছে।বাচ্চাটির মাথার চুল দেখে মনে হচ্ছে কেউ খাবলা খাবলা করে তুলে নিয়েছে।দু’নাকের ফুটো দিয়ে সিকনি ঝরছে।মাথাটি মেয়েলোকটির কাঁধের সঙ্গে লেপটে আছে।মনে হচ্ছে তুলবার ক্ষমতা নেই।
আপনি ভাবছেন বাসে ওঠার ক্ষমতা নেই তবু উঠতে চাইছে কেন!ওই যে কোলে বাচ্চাটিকে দেখছেন কয়েক মাস ধরে ভুগছে।একটা ছোটো জামা কুঁচকে উপরের দিকে উঠে আছে।বুকের কাছে বোতাম নেই।খালি পাছায় পাঁচড়া অথবা ফোঁড়ার দাগ।তুকতাক দিয়ে চিকিৎসার শুরু তারপর হোমিওপ্যাথি।তাতেও রোগ সারেনি।ছেলেপুলে ভালো থাকুক এ সবাই চায়।পয়সা না থাকলে যা হয়।ঝিয়ের কাজে পয়সা পাওয়া যায় বটে তবে তা দিয়ে ছেলেপুলের রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা হয় না।
গাঁয়ের লোকের পরামর্শে সকাল বেলায় রওনা দিয়েছে মেয়েলোকটি।কিছু খাওয়া হয়েছে কি?বাচ্চাটাকে খাইয়েছে?তা আপনিও জানেন না আমিও জানি না।থাক ওই প্রসঙ্গ।
হাসপাতালে যাবার জন্য বাসে উঠতে পারছে না।কণ্ডাক্টার ধমকাচ্ছে।বাসের যাত্রীরাও জানালা দিয়ে বলছে,‘কেন যে এরা এই অফিস টাইমে বেরোয়।আশ্চর্য!’
মেয়েলোকটি কি সহজে উঠতে পারবে বাসে?ও তো ভাবছে বাসে উঠে হাসপাতালে যেতে পারলে ছেলেটার একটা হিল্লে হয়ে যাবে।কেউ কি বলে দিয়েছে হাসপাতালের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে হবে,তারপর আরও লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর ডাক্তার দেখাবার সুযোগ পাবে।তারপর ওষুধ।
মেয়েলোকটি কি জানে এর জন্য ওকে কত কষ্ট সহ্য করতে হবে।হয়রানি হতে হবে।সত্যি সত্যি কতটুকু চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা আছে ওর জন্য।
চিকিৎসা হোক বা না হোক, মেয়েলোকটি বাসে উঠতে পারুক বা না উঠুক এ নিয়ে আপনার আমার মাথা ব্যথা করার দরকার নেই।আসুন ততক্ষণে আমরা হাওয়ায় বিজয় নিশান ওড়ানো ফ্লেক্সগুলি দেখি কাকে কী বলতে হবে,বললেই নাকি সব সমস্যার সমাধান।অথবা কোনো মজাদার খবর।আমাদের তো হাজির হতে হবে সেই মোচ্ছবে যেখানে দুঃখও নেই মৃত্যুও।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।