সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব – ৩)
by
·
Published
· Updated
কলকাতার ছড়া
কলকাতা আক্রমণকালে নবাব সিরাজদ্দৌলার ভয়ে ওয়ারেন হেষ্টিংসের কাশিমবাজারে কৃষ্ণকান্ত নন্দীর ( কান্তবাবু ) গৃহে গোপনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই কৃষ্ণকান্ত নন্দী ছিলেন তৎকালীন অন্যতম অভিজাত ব্যক্তি। তিনিই কাশিমবাজার জমিদারীর প্রতিষ্ঠাতা। আগে মুদীর ব্যবসায়ী ছিলেন বলে মানুষ তাঁকে কান্তমুদী নামেই চিনতেন। ওরারেন হেস্টিংসের সৌজন্যে তিনি বাহারবন্দ পরগনার জমিদারী লাভ করেন। ১৭৯৪ সালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন। কলকাতা আক্রমণকালে নবাব প্রায় ৩০০০০ সৈন্য নিয়ে চিৎপুরের দিক থেকে শহরে প্রবেশ করেন। ঘাঁটি তৈরি করেন একেবারে ফোর্ট ইউলিয়ম দূর্গের মুখ্যদরজার সামনে। ততক্ষণে দূর্গের সেনাধ্যক্ষ জেফানিয়া হলওয়েল সাহেব সমেত গুটিকয়েক ইংরেজ মেজর ও সৈন্য বাদে সকলেই প্রায় কলকাতা ত্যাগ করেন। এমনকি পালিয়েছিলেন কোম্পানির গভর্নর ড্রেক সাহেবও। লালদিঘির (বর্তমান বি বা দি বাগ) পাড়ে দুর্ধর্ষ যুদ্ধের পরে কেল্লার দখল নেন নবাব।
সেইদিন রাতেই দূর্গের মধ্যে ঘটে সেই বিখ্যাত অন্ধকূপ হত্যার ঘটনা যেখানে প্রায় ১২৩ জন ইংরেজকে একটি ছোট ঘরে হত্যা করেন নবাব। যদিও বহু ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে এই ঘটনা হলওয়েল সাহেবের মস্তিষ্কপ্রসুত এক গল্পমাত্র। সেইরাতে জয়ী নবাব নিশ্চিন্তে যখন ঘুমোচ্ছিলেন তখন দূর্গের মধ্যে দুইদলের সেনার মধ্যে হওয়া এক বচসাকেই অন্ধকূপ হত্যার রূপ দেন বুদ্ধিমান হলওয়েল। শুধুমাত্র নবাবের বদনাম করাই ছিল এর উদ্দেশ্য বলেই মনে করেন অনেকে। কারণ একটি ২৪ ফুট/১৮ ফুট ঘরে এতজন সৈন্যকে ঠাঁই দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। আর তাছাড়া সেদিন সকলে দূর্গ ত্যাগ করার পর দূর্গে মোট ৬০-৭০ জন সেনার বেশি মানুষের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ পাওয়াই যায় না। সেক্ষেত্রে অন্ধকূপের ঘটনা কেবল একটি অতিরঞ্জিত গালগল্প বলেই বেশিরভাগ গবেষকরা মনে করেন। যাই হোক, সেইদিন নবাবের ভয়ে হেস্টিংসের কান্তমুদীর গৃহে আশ্রয় নেওয়া প্রসঙ্গে রসসাগর কৃষ্ণকান্ত ভাদুড়ী নিম্নলিখিত কবিতাটি লিখেছিলেন।
“হেষ্টিংস্ সিরাজ ভয়ে হয়ে মহাভীত,
কাশিমবাজারে গিয়া হন উপনীত |
কোন্ স্থানে গিয়া আজ লইব আশ্রয়,
হেষ্টিংসের মনে এই নিদারুণ ভয় |
কান্ত মুদি ছিল তাঁর পূর্ব্বে পরিচিত,
তাঁহারি দোকানে গিয়া হন উপস্থিত |
নবাবের ভয়ে কান্ত নিজের ভবনে
সাহেবকে রেখে দেয় পরম গোপনে |
সিরাজের লোকে তাঁর করিল সন্ধান,
দেখিতে না পেয়ে শেষ করিল প্রস্থান |
মুস্কিলে পড়িয়ে কান্ত করে হায় হায়,
হেষ্টিংসে কি খেতে দিয়া প্রাণ রাখা যায় ?
ঘরে ছিল পান্তাভাত, আর চিংড়ি মাছ
কাঁচা লঙ্কা, বড়ি পোড়া, কাছে কলাগাছ |
কাটিয়া আনিল শীঘ্র কান্ত কলাপাত,
বিরাজ করিল তাহে পচা পান্তা ভাত |
পেটের জ্বালায় হায় হেষ্টিংস তখন
চব্য চুষ্য লেহ্য পেয় করেন ভোজন |
সূর্য্যোদয় হল আজ পশ্চিম গগনে,
হেষ্টিংস্ ডিনার খান কান্তের ভবনে |”