• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে জয়িতা ভট্টাচার্য (পর্ব – ১)

অন্তর্ধান – ১

এমন যে কিছু হতে পারে এমনকি সকালেও বোঝা যায়নি। বেশ ঝকমকে আকাশ,রকমারি মেঘ আর বাইরে রিনরিনে হাওয়া।মনটা ভরাট রবীন্দ্রগানের মতো পরিপূর্ণ।
কবিতার পঙ্ক্তির মতো গাছের ছন্দবদ্ধ পয়ার।
সকাল কোনো পূর্বাভাস দেয়না রাতের।
এখন রাত্রি আটটা হাইওয়ে ধরে গাড়ি পূর্ণ গতিতে।
ডি ডি ডিপার্টমেন্ট এর আরো দুই অফিসার সহ পুলিশের গাড়ি আগে পরে।
খুনটা সত্যি খুব অদ্ভুত।
এতো যে সে খুন নয়।আপাতত প্রেস চুপ থাকবে চব্বিশ ঘন্টা! তার মধ্যেই মূল কাজগুলো সেরে নিতে হবে।
শহর ছেড়ে নবাবগঞ্জ ঢুকতেই থমথমে চারিদিক।শুনশান পথ।জনহীন।
অলিখিত বন্ধ্। সকালের কবিতার পরের পাতায় শুধুই রক্ত। এত নৃশংস খুন সচরাচর ঘটেনি।ভোটের অনেক দেরি। রাজনীতি তো গার্হস্থ্য অন্তরালেও। তবে সংগঠিত এই হত্যালীলা চমকে দিয়েছে সকলকেই।
দেবলীনা মুর্মু থানার মেসেজ,ফ্যাক্সে চোখ বোলাচ্ছে।
“প্রাইমারি এভিডেন্স”
আছে স্যর
” সীমান্ত সিল করা হয়েছে তো।”
ইয়েস ম্যাডাম।
অনেকবার বললেও এই প্রবীণ সাব ইন্সপেক্টর স্যর বলতে ভুল করেন।
সজনী বাবু এমনিতে কাজের।কিন্তু উত্তেজিত হলেই অযথা ইংরেজির খই ফোটে।
ছোটো নবাবগঞ্জ নামে ছোটো হলেও কাজে ছোটো নয়। দশটি ব্লকের এই একটি থানা।
ছোটো ছোটো ব্যবসাপাতি, ছোটো খাটো স্মাগলিং আর অল্পসল্প গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব হেতু কাজের অভাব নেই।
রিপোর্ট আসতেই থাকে।
হাওড়া জেলা শহর ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার হাইওয়ে ধরে গেলে থানা হাবিবপুর।
বনজ সংসার পেরিয়ে ফের লোকালয়। মাঝে মাঝে মজা গঙ্গা, ভাঙা ব্রিটিশ স্হাপত্য, সব মিলিয়ে
একটু বড়ো সংসারেই প্রবেশ করেছিল প্রথম পোস্টিং,ওসি হিসেবে দেবলীনা মুর্মু, আই পি এস।
নবাবগঞ্জে আজ রাত নেই।ভিড় নিয়ন্ত্রণ করে যখন গন্তব্যে পৌঁছনো গেল ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলার নির্দেশ দিয়ে দেবলীনা একপ্রকার কার্ফিউ পরিস্থিতি ঘোষণা করে দিলো।মোটামুটি হালকা।দূরে দূরে লোকের জটলা। অবচেতনে মানুষ কাঁচা রক্ত আর সন্ত্রাস ভালোবাসে যতই সভ্যতা নামের গাড়ির চাকা এগোক।
দেবলীনা দুই এস আই আর ইন্সপেক্টর সমেত সদর দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ে ঝকঝকে তিন তলা অট্টালিকায়।
সমানেই কারা যেন এক বালতি রক্ত ঢেলে রেখেছে।আর তারপর চারিদিকে রক্ত,দেওয়ালে….। দোতলার তিনটি শোবার ঘরে চারটি লাশ।
সকলকেই নৃশংস হত্যা করা হয়েছে।
মিউনিসিপ্যালিটি চেয়ারম্যান মোহিনী মোহন ভট্টাচার্য খাটের ওপর পড়ে মাথাটা মাটিতে।গলায় গভীর পোঁচ।
স্ত্রীকে কুপিয়ে কাটা হয়েছে ,পরের দুটি ঘরের একটিতে একইভাবে কেটে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ছেলে বউকে।শেষ ঘরটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে একবৃদ্ধা।সম্ভবত ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
ধস্তাধস্তির চিহ্ন স্পষ্ট চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর দেহে।
ফরেনসিক এসে পৌঁছে গেছে।
ইন্সপেক্টর সেন ঘাবড়ে গেছেন বোঝা যাচ্ছে।
—সাংঘাতিক কাণ্ড স্যর
— পরিকল্পনা মাফিক খুন মিঃ সেন। দুটি নারীর কেউ ধর্ষিত নয়
— দামী জিনিষপত্র সব ঠিকঠাক আছে,বলে সাব ইন্সপেক্টর রজত।
ওসি দেবলীনা মুর্মু ট্রেনিং শেষ করে এখানেই প্রথম পোস্টিং।
রজতকে তার সেনের থেকে বুদ্ধিমান ও চটপটে মনে হয়।সেও এখানেই প্রথম পোস্টিং পেয়েছে।
দেবলীনা “ম্যাডাম” বলা পছন্দ করেনা কর্মক্ষেত্রে। জয়েন করে প্রথম দিনেই সে একথা জানিয়ে দিয়েছে।
কাজটা লিঙ্গ ভিত্তিক নয় যখন।লিঙ্গ প্রভেদ নিজস্ব পরিধিতেই রাখতে চায় সে।
একের পর এক ছাপ উঠছে।দেবলীনা গ্লাভস পরিহিত লাশগুলো নেড়েচেড়ে একবার দেখে নেয় চাক্ষুষ জখমগুলো। তার পর্যবেক্ষণ বলছে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে ঘটেছে এই হত্যালীলা।
নবাবগঞ্জ এর ফাইলে থেকে মনে জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠছে তিনটে নাম।
একমাস আগে ছাড়া পাওয়া আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে থেকে।
এক এক করে দেহগুলি চলে যাচ্ছে মৃতবাহী বিশেষ গাড়িতে মর্গে।
–“ছবি প্রতিটা ঘরের কোনে কোনে ,বাথরুম, দুটি কিচেন,কোনোটাই বাদ যাবে না”
–“জী স্যর ” আসিফ এক নাগাড়ে কাজ করে যাচ্ছে।
দেবলীনা কিচেনে। সমস্ত হাতের ছাপ তুলে নিচ্ছে ফরেন্সিক টিম।
বয়েমে চানাচুর, বিস্কুট,
আধ শেষ ডাল ,হাঁড়িতে ভাত।
রাত সাড়ে বারো।
ক্ষিদে পাচ্ছে দেবলীনার।
এরাও কেউ খায়নি।
ফ্রিজ টা খোলে …

ক্রমশঃ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।