এখন মেঘবাড়িতেই থাকি।বেশ কিছুদিন। আশেপাশে আরো কয়েকটি মেঘবাড়ি।ওখানে আমার মতো বাসিন্দারা থাকে।আমার মতো মানে কী?
অনেক নীচের শহরে পড়ে আছে পুরোনো কাঠামো।খর আর মাটি।তিল,অন্ন।
আমি সাঁতরে এসেছি বাতাসে ভর দিয়ে এই অনন্তে।
অনন্তর খোঁজ পাওয়া কঠিন।প্রথমে জানতে হবে পুঁজ রক্ত অস্থির কথা,ঘাঁটতে হবে কামনার পাঁক,তারপর ধীরে ধীরে নামতে হবে জলে।সেখানেও সাপ।ধর্মের উপাচার পেঁচিয়ে ধরবে তোমার পা।আসক্তি র মেঘ।কচুরিপানার জটে আটকে আছে অনেক মানুষ।নিস্তার নেই।এক যদি চকচকে মৌরলা থেকে হয়ে যেতে পারো সুখপাখি তবেই উড়াল মেঘের দেশে।
সাদা মেঘ কখনো ঐরাবত কখনো দানব।
পেনটা নামিয়ে রেখে তাকিয়ে থাকি নীল ঘন নীল আকাশে।ঘর থেকে বারান্দা এভাবেই কেটে যাচ্ছে বছর।অকাল বোধনের অকাল বার্ধক্য আসবে যেন।
কোথাও কোনো কাশফুলের চিহ্ন নেই। কোথাও শিশির নেই ভোরের আলোয়।
মহালয়ার দেরি নেই।
আমাদের দেশে মহালয়া মানেই দুর্গাপুজো এটা কবে থেকে আর কেন জানা যায় না।
আমাদের এই নশ্বর পৃথিবীর প্রথম ধূসর পাণ্ডুলিপি ঋক-বেদ কথক সেই নারী দেবী সূক্ত বা আত্মা সূক্ত,ঋষি আম্ভৃণ কন্যা আমৃণী বা বাক্ ঋগ্বেদের প্রথম থেকে অষ্টম সূত্র গুলির রচয়িতা।
বেদ দুহিতা সেই নারী কিন্তু নাম বলেননি দুর্গার।আছে শুধু এক নারী শক্তি র কথা।
মেঘের ঘরে তালা দিয়ে ভাবতে বসি প্রাচীন কথা।
মহালয়ার কথা আছে পুরানে, আছে মহাভারতে।
কথিত মহাবীর কর্ণের মৃত্যুর পরে স্বর্গে তাঁকে স্বর্ণ ও রত্ন খেতে দেওয়া হয়।কর্ণ বিস্মিত হলে যমরাজ তাঁকে বলেন যে কর্ণ মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রয়াত পিতৃপুরুষকে খাদ্য প্রদান করেননি তাই তার জন্য এই ব্যবস্থা।কর্ণ বিমর্ষচিত্তে জানান যে মাত্র মৃত্যুর পূর্বে জানতে পারেন তাঁর পিতৃপরিচয়।একথা শুনে যমরাজ তাঁকে একপক্ষকালের জন্য মর্ত্যে ফেরত পাঠান পিতৃপুরুষকে খাদ্য দান করার জন্য।অমাবস্যার এই তিথিতে পিতৃপুরুষের তর্পণ করেন।সেই দেখে মর্তবাসীরাও ওই দিনটিকে পিতৃপুরুষের স্মরণে পালন করতে থাকেন।
পুরানে অবশ্য বলা হয় এই অমাবস্যার দিন মহিষাসুর বধ করার দ্বায়িত্ব পেয়েছিলেন দুর্গা।
সাধারণের কাছে মহা+আলয় বা মহালয় চণ্ডিপাঠসহ একটা অনুষ্ঠানের দিন।শুধু কি চণ্ডীপাঠ!নাতো:আছে যে ঋগ্বেদের স্তোত্রোও।
ওই ছোট্ট মেঘটা বলল আমি ওই চাঁদের মাথায় বসব।আর গড়িয়ে পড়ব জ্যোত্স্না হয়ে।ওর মা ওকে নিষেধ করে ।মেঘরাজ্য সব সময় ধুন্ধুমার কাণ্ড। অশুভ অর্থাৎ দানব ধেয়ে আসে বড়ো সড়ো গম্ভীর বিরাট মেঘ সকাশে।
দানব কাকে বলে মা?আমাদের গল্পের দনুর পুত্র দানব কেন?দানব একটি ক্রিয়াবাচক শব্দ।যে অস্বাভাবিক। যে কিনা সমাজের রীতিনীতি মেনে চলে না।দানব মানে সে বিকৃত,নীচু শ্রেণী অথবা রূপান্তরকামী!
অসুর আবার বিশেষ্য।পারসিক ও বেদে অর্থ,
আসুর >আহুচ>দেবতা।
একরাশ মেঘ আমাকে টেনে নিয়ে যায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে।শুভ মেঘ অশুভ মেঘ।লড়াই হতে হতে মিলেমিশে এক।শেষে আদিভৌতিকের হাত ধরে ফোঁটা ফোঁটা ……
মহিষাসুর এক দানব।আমাদের দুগ্গা মা যত পুজো পান তাতো ওই পায়ের কাছে দানবকে বাদ দিয়ে নয়।যতদিন মা ফুল পাবেন ততদিন আমাদের দনুর ছেলেও পুজো পাবে।
সবাই তো প্রজাপতি পিতার সন্তান কেই বা মানব আর কে দানব আজ!!
অথচ কী অদ্ভুত কথা দানব শব্দটা যে ক্রিয়াবাচক এসেছে গ্রিক মোনিও (moneo) থেকে।আরো এক মহিষাসুর কাহিনী গ্রিক পুরানে,
যেখানে ক্রিটের রাজা মিনোসের স্ত্রী পাসিফাই প্রেমাসক্ত সমুদ্র দেবতা সাদা ষাঁড় পসিডনের আর জন্ম দেন ষাঁড়ের মাথাওলা সন্তান।একেবারে আমাদের মহিষাসুর।
মেঘ বলল ,আমাদের সব কথাই এক গো।যে দেশেই যাও মেঘবাড়িতে সব সময় হুল্লোর সাদা মেঘে কালো মেঘে মাখামাখির চল।
আমার এই মেঘরাজ্য এক মহা আলয়।মা থাকেন।শাসন করেন অবাধ্য অসুরকে কিন্তু কাছ ছাড়া করেন না কখনো।আমাদের মেঘবাড়ির মা সতের ও মা অসতের ও মা। দেহকাচ ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেলো এক দল শরৎ কালের মেঘ।
সমাজনীতির মানে না দানব,মানব গোপাল সুবোধ বালক।
মানব আর দানবের বংশধরেরা কবেই মিলেমিশে জন্ম দিয়েছে নিও- নর্মাল সন্তানদের।
এক সময় আমিও হয়ে যাই আমৃণী বজ্রনির্ঘোষে আকাশ থেকে ঘোষনা করি আমিই সব আমি সেই নারী যে পরমা।আমিই সেই যা বলব তাই অবিনশ্বর।আমি বাক্ আমি আমৃণী।
সৃষ্টি, স্থিতি বা প্রলয় আমিই রচনা করব।
মেঘ বলল শোনো,ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের দশম অনুবাদকের ১২৫ নং সূক্ত মনে রেখো,ওটাই দেবী সূক্ত বা আত্মা সূক্ত।আমি ভেসে যাই দূরে,মেঘ বলে ,প্রথম আর তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্লোক কিন্তু ত্রিস্টুপ ছন্দে আর শুধু ওই দ্বিতীয় সূক্ত জগতী ছন্দে লেখা গো।এই শ্লোক ই আত্মাকে উৎসর্গীকৃত সেই শ্লোক;আমি উড়ে যাই,
আসছে মহালয়া প্রারব্ধ মনে রাখি। স্মরণের ডালি রাখি পূর্ব পিতা আর আদি মাতার জন্য।