• Uncategorized
  • 0

|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় জয়িতা ভট্টাচার্য

অভিনয়

এখন আর অস্বস্তি হয় না। লকডাউনের সুযোগে বেসরকারি কর্মী অরিন্দমের চাকরিটা চলে গেল।আট মাস যাবৎ, তবু সকাল আর রাতের অভিনয় ,অফিসের তাড়া যেন কত! ধোপদুরস্ত জামা…
কাছেই চার্চের ঘন্টা, রোদ চিকচিকে ঢেউ। দক্ষিণ থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদহ। ব্যস হারিয়ে যাওয়া জনসমুদ্রে। বিপর্যস্ত পার্ক, ছাওয়া ঘেরা ফুটপাত। নাহলে সেতু পেরিয়ে ট্রেন ধরে ব্যাণ্ডেল।কোভিড পর্বে একটা সুবিধে মাস্ক।চিনতে পারে না সহসা কেউ।ছেলেবেলার মাউথ অর্গানটা কাজে আসবে ভাবেনি।আপন মনে বাজাতে বাজাতেই চোখ পড়ে সামনে জড়ো হচ্ছে পয়সা কড়ি।সংকুচিত মন একটু হোঁচট।ভালোই। লজ্জা কিসের।ছেলেটার দুধের কৌটো যদি আসে…মাস যায় মাইনে আসে না। বিছানায় শীতল। জিজ্ঞেস করে উত্তর নেই।পম্পা জেনে আসে কলকাতা গিয়ে, তার বরের কাজ নেই।চুপ, অরিন্দম জানতে না পারে। জানতে না পারে মাসের পর মাসের ভাড়ার টাকা স্বার্থহীন মাফ করে দিচ্ছেন যে দেবতা ,যে দেবতা নিয়ম করে চাল ডাল প্রয়োজনে পাঠিয়ে দেন আরো কত কী, অভাবী সংসারে । কখনো চৌকাঠ পার হয়নি নবীন। পম্পা লেখাপড়া শেখেনি তবু বলেছিল কিছু কাজের কথা নবীনবাবুকে।-“একরত্তি ছেলে ফেলে কোথায় যাবে।”এই নিয়ে কথা হয়নি।সন্ধ্যাই হলে না জানা আর না বোঝার অভিনয় অস্বচ্ছ ঘরে। সেও তো আর করুণা নিতে অপরাগ।পম্পা অস্থির কৃতজ্ঞতার ভারে।এক দুপুরে তাই নবীন চৌকাঠ পার হয় নারীর আহ্বান-আমন্ত্রণে।আর কী দিতে পারে পম্পা। একটু সুখ।দীর্ঘ বিপত্নীক জীবনে। যদি না হঠাৎ এক বৃষ্টি দুপুরে ফিরত, অরিন্দমও জানতে পারত না… প্রাণপণ অভিনয় ছাড়া আর কী করতেই বা পারে সে। প্রতি সন্ধ্যায় তাই পর্দা ওড়ে ,ভাতের ধোঁয়া, দুধের গন্ধ নিয়ে অভিনীত হয় পুরোনো নাটক। অভিনয় নিত্য।আবহমান সংসারে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *