সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ৮)

তোমার সামনে নতজানু আমি…..
আজকে ইস্কুলের পরীক্ষা চলছে. আমার ডিউটি নেই, ফলত আমি বন্দি না হয়ে বাড়ীতে। ২০২০ র এই সময়টা একটা ভয়ঙ্কর ছুটি ঘোষনা হয়েছিল । ২৭ সে মার্চ থেকে ভারচুয়ালি ক্লাস নিতে শুরু করেছিলাম, বাকিটা ইতিহাস। সময় নিজের স্রোতে বয়ে একের পর এক ঢেউয়ের ধাক্কা দিতে দিতে আজকে এই তটে দাঁড় করিয়েছে। বাড়ীর ছাদটা সঙ্গ দিয়ে গেছে অকৃত্রিম বন্ধুর মত । ছাদে অজস্র বেল, জুঁইফুল অকৃপণ সৌরভ ঢেলে যাচ্ছে । গরমের ফুল. একটা কাঁচের পাত্রে একটু জলে ভিজিয়ে রাখলে তো কথাই নেই । নিজেরা ফুটছে, সময়ে ঝরে পড়ছে কোন নালিশ নেই কারুর কাছে ।
গাছেদের সাথে কথা বলতে বলতে একটা সুর কানে আসে। তাকিয়ে দেখি কতগুলো ছেলেমেয়ে এই ১৮ থেকে একুশের মধ্যে হবে । তারা আজ বিশ্বনাট্য দিবস উপলক্ষ্যে নিজেরা কোরিওগ্রাফ করে, অভিনয় করে ভিডিও বানাচ্ছে । গানটার একটা লাইন আমাদের আপাতস্তব্ধ পাড়ার রুদ্রপলাশ, ফাগুন বৌ এর ডালে বসা দুর্গা টুনটুনি কে ছুঁয়ে, বেল, জঁুইদের বলে যাচ্ছে ‘আমি অন্য কোথাও যাব না আমি এই দেশেতেই থাকব’। আমি ওদের নাচ, অভিনয় মুগ্ধ হয়ে দেখি. অচেনা ছেলেমেয়েগুলো তাও আমি জোড়ে হাততালি দিয়ে বলি ‘প্রাউড অফ ইউ’ । ওদের হাসি বেল, জুঁইয়ের সৌরভের মতই ছড়িয়ে পড়ে.। ছাদের আলসের গা ঘেষে এসে ওরা আমার অভিবাদন গ্রহণ করে । পরম উৎসাহে পুরোটা আরেকবার অভিনয় করে, নেচে দেখায়. আমিও দেখি, আবার বলি খালি ছাদে দাঁড়িয়ে গাছেদের সাথে ‘এ বিগ রাউন্ড অফ এপ্লোস’, গাছেরা মাথা দোলায়, ছেলেমেয়েগুলো নিজেরা হাততালি দিয়ে প্রত্যুত্তর দেয়. আমার গল্পের ঝুলি কানায় কানায় ভরে ওঠে । আরেকবার নতজানু হই জীবনের কাছে । না চাইতে জীবন উজার করে দিয়ে যায় বারবার এইভাবেই ।