সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ৩৬)

আরশি কথা

আয়নার ভিতরে আর আয়নার বাইরে বাড়ী দুটোর নামই ‘উইসস্পারিং উইন্ডস’, সজারু দুটো আয়নার বাইরে ভিতরে দু জায়গাতেই ছিল, এ কোন জগত ধরা দেয় ঝোরার চোখে বারবার?ঝোরা ভাবতে বসেও ভাবতে পারে না। হৈ ,হৈ করে ঘরে ঢুকে আসেন মেই লিং । “আরে ঝোরা ম্যাডাম, চলুন বেড়িয়ে আসি, এত সুন্দর জায়গায় এসে ঘরে বসে থাকবেন নাকি । “
এরমধ্যে ঝোরা, মেই লিং আর মঞ্জরীর মধ্যে বেশ একটা সখীত্ব গড়ে উঠেছে ।মঞ্জরী যদিও একটু কম কথা বলেন । সিকিমে এসে সবাই যখন দ্বিতীয় দিন রাত্রে মনাষ্ট্রী প্রধানের আমন্ত্রণে মেডিটেশনের ঘরে যায়, তখন মঞ্জরী যান নি । এতে বেশ অবাক হয়েছিল ঝোরা , এত মূল্যবান ,দুষ্প্রাপ্য তথাগতর দর্শন হল সেদিন, অথচ মঞ্জরী কোন উৎসাহ দেখালেন না । আজ অবশ্য বেরিয়েছেন মেই লিং আর ঝোরার সাথে। মেই লিং আর মঞ্জরীর সাথে গেস্ট হাউসের বাগানে আসতে না আসতেই ঝোরার মোবাইল বেজে ওঠে । আকাশলীনা ফোন করেছে।
“বল’
” কি গো কি খবর?” আকাশ জিজ্ঞেস করে ।
” খবর ভালোই ,প্রচূর কাজ, ঘোরাঘুরি চলছে, একটা দারুন জিনিষ দেখার সৌভাগ্য হল জানিস তো “,
“কি গো মা , ইউ মিন দ্য মিলিয়ন ডলার বুদ্ধা ?’ ‘হ্যা রে” , ‘ইউ মিন মায়া তথাগত? কেমন দেখতে গো?’
“সে এক অসাধারণ শিল্পকর্ম, উচ্চতায় ২ ইঞ্চির বেশি নয় , পাশে ড্রাগন দূটি ১ ইঞ্চি করে হবে । তথাগতর সিংহাসনের নীচে দুটি হীরে, একটি চূনী বসান,বুদ্ধের মাথায় একটি হীরে , আর ড্রাগন দুটির চোখে দুটি করে লাল চূণি বসান ,এই লাল চূণীকেই হীরে বলে রেফার করা আছে স্ক্রোলে ।”
”’ স্পীকারে দে, তোর মা কি বলে শুনি” স্থিতধী আকাশের পাশ থেকে বলে ওঠেন। ঝোরা শুনতে পায় ।
“আমরা সবাই শুনি মায়া তথাগত দর্শনের কথা” । স্থিতধী আবার বলেন ।
” হুম সে এক বিরল অভিজ্ঞতা ‘, ” গৌতম অনুভব করেছিলেন সত্য, ব্যাধি ,জরা ,মৃত্যু এই তিনের থেকে নিষ্কৃতি নেই, এই যন্ত্রনার থেকে মুক্তি পেতেই ,সুন্দরী যশোধারা আর শিশুপুত্র রাহুলকে ছেড়ে সংসার ত্যাগ করেন তিনি । প্রবজ্যা নিলেন। বোধি লাভ করলেন । মাথার ওই হীরে বোধি লাভের প্রতীক । তথাগতর মাথার হীরের মূল্য লোভীরা বুঝবে না। সন্ন্যাসী বললেন । মূর্তির কাজটিও নিখুত । ”
” সেকি মা তুমি তো মিলিয়ন ডলার বুদ্ধ দর্শন করে নিলে ” । আকাশলীনা উত্তেজিত হয়ে ওঠে ।
” আরও শোন ওই মূর্তি পাহাড়া দেয় এক মহা পরাক্রমশালী ব্ল্যাক প্যান্থার ” ।
“মানে মনাষ্ট্রীতে ব্ল্যাক প্যান্থার থাকে, বল কি ? ” স্থিতধী বলেন ।
“শুধু মনাষ্ট্রীতে নয় ,গেষ্ট হাউসের বাগানে রাতে ঘুরে বেড়ায় “।
“তুমি রাতে বেড়িও না, যদিও ব্যাপারটা খুবি ইন্টাররেষ্টিং “।
আর দু – একটা কথা বলে ফোন রেখে দেয় ঝোরা ।
ঝোরা মেই লিংদের সাথে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় । বেশ বুঝতে পারে ঝোরা , আগে যখন সে তেল ,সাবানের বিজ্ঞাপন লিখত বাড়ীতে কেউ গুরুত্ব দিত না । এই ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটির ফলে তাঁর গুরুত্ব বাড়ীতে বেড়েছে । সকলে ঝোরার কাজের বিষয়ে বেশ কৌতুহলী হয়ে উঠেছে। মেই লিং আর মঞ্জরীর খাদের পাশের বেঞ্চে বসে পড়েছেন ততক্ষণে । স্লিপিং বুদ্ধার বরফাবৃত শৃঙ্গ দেখা যাচ্ছে । ঝোরা গিয়ে ওদের পাশটিতে বসে পড়ে ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।