সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ১২)

কেউ কথা রাখে নি

নরম হলুদ পশম পশম রোদ্দুর জড়ির শাল জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বারান্দার ওপারের গাছগুলোকে জড়িয়ে। ঝুপসি আম গাছটার ঘুম ভাঙতেই চায় না।নিম গাছটায় এসে বসে লাল ঝুঁটি কাঠঠোকরা ‘রক্তিমা’ আর নীল পশমিনা বুকে জড়িয়ে ‘নিলাঞ্জনা’ মাছরাঙা। রুদ্রপলাশ গাছের উপর জমে থাকা কুয়াশা সরিয়ে নিলাঞ্জনা ডেকে ওঠে।
নিলাঞ্জনা ঃ কেমন বুঝছ হালচাল?
রক্তিমাঃ কেমন আর বুঝব। সব গুলিয়ে গেল যে।
নিলাঞ্জনা ঃ তা যা বলেছ । সুয্যি মশাইয়ের রাগের চোটে খাল বিল পুকুর শুকিয়ে একাকার ।
পুকুর থেকে সব ব্যাটা মাছ হাওয়া ।

রক্তিমা ঃ তা বটে আমাদের কাঠগুলো পুড়ে এক শা। পোকা অবিশ্যি ছিল। তা রোদ ফূড়ে চোখে দেখলে তো। আজ তাই এখানেই এলেম। নিম গাছের ভেষজ খানিক খেয়ে বেরবো।
নিলাঞ্জনা ঃ কোন পানে যাবে ভাবছ?
রক্তিমা ঃ দখিন পানে যাব ভাবছিলাম।
নিলাঞ্জনা ঃ তা যাই চল। রুদ্রপলাশ ফোটার সময়টাও জানতে হবে।

এই বলে দুই সখী ডানা মেলে। আমি বলি ” ও ভাই নিলাঞ্জনা, রক্তিমা আমি তো যেতে পারি নে। আমার যে ডানা নেই। একটু দখিনের খবর আমিও শুনব যে’ । ‘ আহ এই বেরনোর মুখে জ্বালিও না তো। বিকেলে বলে যাব’ বলে তাঁরা। ঘড়িও বকা দেয়। ‘ছোট ছোট টিক টিক’।

শেষ দুপুরে ইস্কুল থেকে ফিরে গড়াচ্ছিলাম। আমাদের জানলায় ছাতারেরা সভা বসিয়েছে তখন। একটা নাম না জানা শিস শুনলাম। পশম পশম রোদ্দুর তখন হালকা লাল গোলাপি আদর গাছে গাছে মাখিয়ে বিদায় নিচ্ছে ।

নিলাঞ্জনা , রক্তিমা বিকেলে আসে নি। কেন এল না ওই নাম না জানা, অদেখা শিস দেওয়া পাখী কে জিজ্ঞেস করেছিলাম । সে ধমক দিয়ে বললে “জানো না কেউ কথা রাখে না”।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।