রম্য রচনায় ইন্দ্রানী দত্ত

বাইসাইকেল এক প্রেমকাহিনী
ইয়ে মানে বলছিলাম কি হাফ প্যাডেল সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়ার গল্প আমার আপনার এক কি বলেন! মানে গরমের ছুটিতে বাবার সাইকেলে নিয়ে সাইকেল শেখা ঠিক এই জৈষ্ঠ্য এর দুপুর রোদে । মা পৈ পৈ করে বকলেও কথার অমান্য তারপর পড়ে যাওয়া হাঁটু টু কুনুই ছড়ে যাওয়া কিন্তু বাড়িতে বললে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে আবার ঘা কতক পিঠে।
এই গল্প সাইকেল এর । সাইকেল পরিবহন টি নস্টালজিক । এ পরিবহন এর জুড়ি মেলা ভার ।
দূষণহীন এই পরিবহন এর মজা হলো সরু গলি থেকে রাজপথ স্যাট করে চলে যাওয়া যায়।
ও হ্যাঁ গরমের ছুটির কথা বলছিলাম ,পরের বছর ক্লাস প্রমোশন এর সাথে সাথে হাইট বাড়ে আর হাফ প্যাডেল থেকে সিটে বসে অনায়াসে প্যাডেলে পা পৌঁছায়।
মফস্বলে সাইকেল ছিল ছাত্রছাত্রীদের স্কুল , টিউশন, যাওয়ার মেন ট্রান্সপোর্ট, বাবাদের অফিস যাওয়ার সাধন সাইকেল।
বাজারের ব্যাগ সাইকেল এর হ্যান্ডলে ঝুলে কতো তাজা শাকসব্জি ,মাছ দুলে দুলে বাড়ি আসতো। বাবার সাইকেল এর ঘন্টির ক্রিং ক্রিং শুনে কতোবার উল্টো পড়ার ব ই নিয়ে বসে পড়েছি এমন কতোবার হয়েছে।
আমার বাড়িতে কাজ করতো বাসন্তী দিদি ওর কাজ শেষ হলে আমাদের মালী ওকে সাইকেল এর সামনের রডে বসিয়ে ফি শুক্রবার হাটে নিয়ে যেতো চুড়ি,ফিতে কিনে দেওয়ার জন্য।
সেই দৃশ্য ” এই পথ যদি না শেষ হয় ,তবে কেমন হতো তুমি বলো তো !!” গান এর থেকে ও চরম প্রেম । সেখানে নয় মহানায়ক ও মিসেস সেনে মোটরসাইকেল আরোহী মিছিমিছি বাইক চালানোর অভিনয় আর এ একেবারে ষোলআনা সত্যি প্রেমের সম্পর্ক। সাক্ষী ঐ সাইকেল।
আমারা নয় তৃতীয় বিশ্বের জনতা । বিদেশে সাইকেল এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে এখনো । সাদা চামড়ার মানুষরাও এই পরিবহনের প্রেমে মজেছেন সেই কোন কাল থেকে ।
ভুপর্যটক দের মতো আগে খুব শোনা যেতো ননস্টপ সাইকেল চালিয়ে কাশ্মীর টু কন্যাকুমারী যাবে। সাইকেলে নাওয়া খাওয়া চান এভরিথিং । উফ্ কি থ্রিলিং।
তার গলায় লোকজন আনন্দের চোটে গাঁদার মালা দিয়ে বরণ করে নিত।
তবে একটা কথা মানতেই হবে স্কুটি, স্কুটার ,বাইক যা বাজারে রমরম করে দুই পায়ের বাহন চলুক না কেন সাইকেল এর ক্রেজ কিন্তু এখন রয়েছে।
দূষণ হীন এই যান এর উপকারিতা ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতিবছর তেসরা জুন বিশ্ব সাইকেল দিবস এর উদযাপন।
তাই সাইকেল চালান নিজের ছেলেবেলায় ফিরে যান ।