।। স্বদেশ সংখ্যা ।। কবিতা গুচ্ছতে ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল

জয় হিন্দ্

রাত পড়ে আছে জ্যোৎস্না মেখে।
নদীও নীরব হয়ে অপেক্ষায়
তুমি এখনো রয়েছো সীমান্তে।
স্মৃতিমাখা বাঁশবন , ধানক্ষেত, সাইকেল
বলেছিলে , মনে পড়ে সব একান্তে।
চোখ জুড়ে রাত ঘুম বর্ষায়
ঘরবাড়ি হৈ হৈ সজ্জন
কান চেপে বসে থাকি শয্যায়
চারিদিকে বলহরি গর্জন।
কাঠের বিছানায় তোমার সযত্ন ঘুম
দেখোনি কেমন করে কেঁদেছিল
তোমার ছোটোবোন
বাবার চোখের জল মুছে ছিল
কিছু টাকা
দেখোনি তোমার ধানক্ষেত
কত একা
ভোরের কাগজে ফুলে ঢাকা কত ছবি
তুমি বলেছিলে কবিতা লিখে পাঠিও প্রিয় কবি।
তোমার জন্য লিখেছি দুটি লাইন —
আবার এসে
সীমান্তেই দিও প্রাণ।
জয়হিন্দ্

জনগনমন, হামারা হিন্দুস্তান

আজ ১৫ই আগস্ট
৭৫তম স্বাধীনতা দিবস
এ আমাদের লকডাউনের পরাধীন স্বাধীনতা।
এমন কখনো হয়নি
স্বাধীনতা মানে অনন্ত স্বাধীনতা,
শাশুড়িমা চাইতেন অন্তত এই একটি দিন
আমি ভোরবেলায় ভাত না চাপিয়ে
স্কুলে যাই পতাকা তুলতে।
আমিও খুশিতে সবুজে কমলায় রাঙা হয়ে
সকাল ৬.২০-র লোকাল ধরতে দৌড়োতাম।
দেখতাম অত সকালে স্টেশনে
স্বাধীনতা হয়ে গেছে,
ধ্বনি উঠছে ‘ বন্দেমাতরম ‘ ।
ট্রেনে উঠলাম। ট্রেনে আজ গান বাজছে
‘ উর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল, নিম্নে উতলা ধরণীতল ‘………
আমার পা তালে তাল দিচ্ছে।
ভুলে যাচ্ছি সংসারের পাওয়া না-পাওয়ার কথা,
আমার মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে
মাতঙ্গিনী, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, বীর সুভাষ।
ট্রেন এসে দাঁড়ালো। নামতে ভুলে গেলাম।
আমি তখন সত্যাগ্রহে, লবন আন্দোলনে,
বিনয়-বাদল-দিনেশের বোমার দড়িতে
পাক খাচ্ছি।
তখন আমি স্কুলের দিদিমণি নই,
রোজ সকালে শাশুড়িমার আদেশে
ভাত বসানো গৃহবধূ নই, দু’মাইল
রুক্ষ প্রান্তর ভেঙে মাথায় হাঁড়ি নিয়ে
জল আনা অত্যাচারিত গুর্জরী শাড়ি নই।
তখন আমি জাতীয় পতাকা, শস্য শ্যামলাং
তেরঙ্গা প্রকৃতি আর স্বাধীনতার সূর্য।
সঙ্গে বাঁধা দেশভাগের কষ্ট, বাবাদের
রিফিউজি হওয়ার অনিশ্চিত হাঁটা পথ।
স্বাধীনতা তখন চার দেওয়াল ভেঙে বেরোনো
দুরন্ত গঙ্গানদী,
তিস্তার বালুচর, পাহাড়ের চা বাগান,
বন্ধ কারখানা ভেঙে ফেলা দুর্দম উচ্ছাস
অসহায় মানুষের পাশে রাখা হাত।
স্বাধীনতা স্কুলের ছেলেমেয়েদের প্যারেডের তালে
মাইকের সুরে বাজা ‘ কদম কদম ‘ গান।
আবার এসেছে বছরের স্বাধীনতা
শ্রাবণধারায় ভেজা মাঠ ঘাট
বাতাসের সুরে দোলে প্রাণ
দেশোয়ালি ভাই বলে
জনগনমন, হামারা হিন্দুস্তান।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।