T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
by
·
Published
· Updated
মালিনী
চৈতী পূর্ণিমা। দখিনা হাওয়া ।রবি ঠাকুর বসে আছেন তাঁর প্রিয় আরাম কেদারায়, শ্যামলীর বারান্দায় , গুনগুন করে সুর বুনছেন। আমি দাঁড়িয়ে অদূরে, লাল সাদা ডুরে শাড়ি, কপালে কাঁচ পোকা টিপ, লাল ফিতের বিনুনি। আমার হাতে তামার রেকাবিতে জুঁই , চাঁপা আর বেল ফুল।ফুলের গন্ধে মুখ তুলে তাকালেন কবি , মৃদু হেসে বললেন — কে মালিনী নাকি? কি এনেছ আমার জন্য ? এই গন্ধ বিধুর সমীরণে..
— দাঠাকুর দ্যাখো কত ফুল
— উঁহু তোমার আঁচলে অন্য কোনো ফুল বাঁধা আছে। মৃদু গন্ধ তার।
— মালতী মালা বিনি সুতোয় গাঁথা।
— আহা, আমার প্রিয় ফুল। ওই ফুল নিয়ে গান গাইছিলেম এতক্ষণ, ওই মালতী লতা দোলে পিয়াল তরুর …
সাদা ধবধবে দাড়ি, মেরুন জোব্বা, জোছনার বড় মায়া … বিমোহিত আমি
গান থামিয়ে তাঁর জাদু আঙুলটি তুলে জিজ্ঞেস করলেন — হাঁ করে আমার পানে কি দেখছো মালিনী? তুমি চতুর্দশী আমি চৌষট্টি , আমি যে এক্কেবারে বুড়োদের দলে।
— তা হোক , তুমি সারা দেশের মুকুটের মণি।দেখে আশ মেটে না আমার। প্রণাম করি একটা দাঠাকুর ? আজ তোমার পায়ে অঞ্জলী দেব মালতী মালা দিয়ে
— না গো নাতনী আমি সে ঠাকুর নই। সারাদিনের সব কাজের ফাঁকে আমার গান গুনগুন করে গেয়ে যাও সেই আমার আসল অঞ্জলি।
বুকের মধ্যে কিসের যেন কষ্ট।চোখ বন্ধ করি আমি।
…….কই পা দু খানি কই, কোথায় শালপ্রাংশু মানুষটি?
জোছনায় ধুয়ে যাচ্ছে চরাচর…..
চা গরম…. নির্ধারিত স্টেশনে ট্রেন থামে। চোখ মেলে দেখি পুব আকাশে আবিরের রঙ…..