গান আমার প্রাণের সামগ্রী। সেই কোন ছেলেবেলা থেকে নিজের মনে গান গেয়ে আসছি। তখন গান শোনা বলতে রেডিও। অনুরোধের আসর। কাকার, দাদার মেয়েরা সব গান শিখত। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি। শিক্ষকের কাছে শেখা ব্যাকরণসম্মত গান কানে আসত। তার সঙ্গে গলা মেলাতাম। কিন্তু আমার গান গাওয়া আমবাগানে, নদীর ধারে যেখানে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো শ্রোতা থাকতো না।
সবাই তার নিজের নিজের বক্তব্যে, রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন মঞ্চে উঠে গান শুনিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানাত। চিরকালের মুখচোরা আমি রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তি করতেও কখনও সামনে আসি নি। কিন্তু মনে মনে বলতাম তোদের মতো আমারও একজন রবীন্দ্রনাথ আছেন। আমিও তার গান সময়ে অসময়ে গেয়ে মনকে শান্ত রাখি।
রবীন্দ্রনাথের গান সকলের সামনে গাওয়া বলতে যখন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হলাম। অবশ্যই একক কন্ঠে নয়। সকলের সঙ্গে একসাথে। সকলের সঙ্গে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে যখন গাইতাম “তোমারি গেহে পালিত স্নেহে, তুমি ধন্য ধন্য হে” —— মনের মধ্যে একটা অন্যরকম জোর পেতাম। তখন মনে হতো না যে সকলের সঙ্গে গাইছি। মনে হতো কোনো নদীর ধারে অথবা গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আমি একাই গাইছি। চোখ বুজে মন প্রাণ ঢেলে গাইতাম। ওই বয়সে এইরকম জায়গার কথা মনে হতো কেন? কারণ আমার যাওয়া বলতে তো এইসব জায়গাতেই। মনে হতো আমারও একজন রবীন্দ্রনাথ আছেন, যিনি আমার আত্মার আত্মীয়।