গল্প গাথায় গৌতম তালুকদার

ঢাকের বাদ্য

সেদিন একটি সাহিত্য সভায় যায় সপ্তদীপ, দেখে বেশ কয়েকজন লেখক বসে কথা বলছেন। কয়েকটা চেয়ার খালি থাকায় ও গিয়ে একটি চেয়ারে বসে। ওদের আলোচনায় মন দেয় দেখে একজন সপ্তদীপকে জিজ্ঞাসা করেন
আপনি কি, লেখা-লেখি করেন?
সপ্তদীপ বলে- লিখি, একটু আধটু, চেষ্টা করি লিখতে।
অন্য আর এক জন মুচকি হসে বললেন- লেখেন তা শোনান আপনার একটি লেখা। সপ্তদীপ নিজের লেখা একটি কবিতা পড়ে শোনায়। লেখক মহাশয় কিছু সময় চুপ থেকে ওকে জিজ্ঞাসা করলেন-
তা পড়া শোনা কত দুর মানে স্কুল কালেজ, সাহিত্য জগৎ এর কার কার লেখা পড়েছেন বা পড়েন ?
সপ্তদীপ একটু চিন্তা করে, বলে-খুব বেশী কিছু পড়িনি সামান্যই পড়েছি যেমন রবীন্দ্র নাথ, বঙ্কিম চন্দ্র, শরৎ চন্দ্র, থেকে সুনিল, জয় গোস্মমী তাও তেমন বলার মতো কিছুই পড়িনি।
ও আচ্ছা। তা এখন যারা লিখছেন তাদের কারো লেখা পড়েন না ?
এখন বলতে রিসেন্ট যারা লিখছেন তাদের লেখাও পড়ি মাঝে মাঝে। লেখক মহাশয় একটু
গুছিয়ে বসলেন জিজ্ঞাসা করলেন-
কার কার লেখা পড়েন? এদের মধ্যে আপনার
প্রিয় কবি, সাহিত্যিক কে বা কারা?
না তেমন বলার মতো কে-ই বা লিখছে ?
কেন, বিকাশ বন্দ্যেপাধ্যায়ের লেখা পড়েন না ?
না কখনো পড়ি নি বা এই নামের কোন লেখক আছেন তাও তো জানি না।
লেখক মহাশয় যেন বিরক্ত হলেন !
তা জানবেন কি করে রবীন্দ্রনাথ থেকে জয় পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েক জন তাও আবার বলছেন তেমন কিছুই পড়েন নি, এই বিদ্যা নিয়ে কি আর লেখক হওয়া যায়। আগে পড়ুন, পড়াশোনা করুন তারপর লেখক হবার স্বপ্ন দেখবেন।
সপ্তদীপ বেশ বুঝতে পারে  উনি ওকে পছন্দ করছন না ওকে চাটতে চাইছে। একটু চিন্তা করে বলে,
আপনারাই বলুন কার লেখা পড়লে লেখক হওয়া যাবে?
আপনাকে আর কি বলবো আপনি তো বিকাশ বন্দ্যেপাধ্যার লেখা বা নাম কোনটাই শোনেন নি বললেন । যে বর্তমানে তিনটে পুস্কার পেয়েছে, যার বাংলার বাইরেও প্রচুর পাঠক ভক্ত। তার লেখাই পড়েন নি মশাই।
পাশের অন্য এক জন বলেন ,ইনি যার কথা বলছেন আপনার সৌভাগ্য তাকে দেখার সুযোগ পেলেন আপনি।
তাই কোথায়? কোথায় তিনি?
আরে মশাই এই তো বিকাশ বন্দ্যেপাধ্যায়।
সপ্তদীপ এবার বুঝতে পারে। একটু ভেবে বলে,
আপনি তাহলে সেই লেখক যার লেখা না পড়লে লেখক হওয়া যায় না। বেশ ভালো তাহলে আমি কেন আপনার নাম জানতেও পারলাম না লেখাও পড়লাম না বলুন তো? অথচো ‘রবীন্দ্রনাথ থেকে জয় গোস্মামী’ এদের নাম জানলাম সামান্য হলেও পড়লাম। আসলে কি জানেন তো পুরুস্কার আর গাদা গাদা বই তো টাকা খরচ করতে পারলেই হাতের মুঠোয়। তাইনা ? তারপর এখন তো অনলাইনের যুগ নিজের ঢাক নিজেই পেটাবার একটা বড় মাধ্যোম ।
সপ্তদীপের কথা শুনে বিকাশ বাবু বেশ চটে গেলেন
সপ্তদীপ বাঁকা ঠোঁটের হাসি দিয়ে বলে,
রাগ করছেন কেন ? আপনারা বসুন আমি যাই একটু পড়া শোনা করি গে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।