সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে গৌর হরি মান্না (ভ্রমণ কাহিনী)
by
·
Published
· Updated
সাতকোশিয়ার সাতকাহন
(চতুর্থ পর্ব)
অরণ্যের প্রতি সখ্যতা যখন নিবিড় হচ্ছে তখন থেকেই চোখের সামনে ভেসে বেড়াতো সাতকোশিয়ার কাল্পনিক চিত্র, আলপনা আঁকতে লেগে গেছে আরো বেশ কয়েক বছর। আসলে সাতকোশিয়া যেন কোন শিল্পীর তুলিতে টানা এক জীবন্ত ছবি। একটা সুরেলা শব্দে সচকিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।সাতকোশিয়া তখন তার হৃদয়ের ওড়না সরিয়ে আবার একটা নতুন দিনের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। তাবু থেকে বেড়িয়ে মহানদীর দিকে তাকিয়ে দেখি বাগানের ঘাসবনে ভিড় করেছে এক ঝাঁক মুনিয়া।
আসলে ঘাসের দানা খেতে ব্যস্ত তারা,ক্যামেরা নিয়ে মনের খুশিতে তুললাম বেশ কিছু ছবি।শীতের সকালে হিমেল হাওয়া বইছে সাতকোশিয়ার গাল ছুঁয়ে। ব্রেকফাষ্ট করে বেড়িয়ে পড়লাম কটেজ থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে টিকর পাড়া কুমির প্রকল্পে।এখানে মহানদীর চর থেকে ঘড়িয়াল ও কুমিরের ডিম সংগ্রহ করে এনে ফুটিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া হয় মহানদীর জলে। সকালের মহানদী যেন তার রূপ উজাড় করে কুল কুল করে বয়ে চলেছে আপন মনে। টিকর পাড়া থেকে যন্ত্র চালিত বোর্ডে করে ঘুরে এলাম বেশ কিছুটা নদীপথ। হলফ করে বলতে পারি এই নদী ভ্রমণ আপনার জীবনের একটা অমূল্য সঞ্চয় হয়ে থাকবে। নদীপথে যেতে যেতে একদিকে পূর্বঘাট পর্বতমালা আর একদিকে সাতকোশিয়া অভয়ারণ্যের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
বোর্ডে করে যেতে যেতে বেশ কয়েকটা কুমির, ঘড়িয়াল ও পাথরের খাঁজে খাঁজে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বসে থাকা কচ্ছপের দেখা মিললো। দেখতে পেলাম পরিযায়ী পাখির ঝাঁক, বিভিন্ন ধরনের সারস,মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া হর্নবিল ও রঙ- বেরঙের মাঝরাঙা। প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশিল হয়ে তার এই অপার্থিব দান সংগ্রহ করে রাখলাম হৃদয় ভরে।