লেখালেখি সেই ১৯৮৯ সালে কলেজ পত্রিকা থেকে। দেশ, বিদেশের বহু নামী ও সমৃদ্ধ পত্র - পত্রিকায় বহু কবিতা প্রকাশিত। দুটি কাব্য -সংকলন কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত।। "ঊনবিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবিতা" ও "একশো কবিতার প্রেম" কাব্যগ্রন্থে বহু নামী ও বিখ্যাত কবিদের সাথে ওনার লেখাও ঠাঁই পেয়েছে।। পরবর্তীতে আত্মমগ্ন কবি অর্বাচীন, দিনাজপুর ডেইলি', দেশ, শিকড়, নাটোরকণ্ঠ, লেখালেখি সব বাংলায় , কৃত্তিবাসী, শহর, ইচ্ছেনদী, সৃজনী, শব্দদ্বীপ, স্বরধনি ছাড়াও আরো বহু পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন নিরন্তর ।।
সাতাশ বছর পর একটি কবিতা যখন গল্প হয়ে চলে যায়….
চোখে চোখ পড়তেই
“কোথায়? বর্ধমান! ”
ইতস্তত
নীরবতা
দীর্ঘশ্বাস
একটা ঝাঁকুনি। মনে।
“হুঁ”
নীরবতা
আনন্দ উচ্ছ্বাস
ইতস্তত
“খুব চেনা লাগছে ”
ইতস্তত
মুখ ঘুরিয়ে নিল। ” এই যে বাদাম।”
দীর্ঘশ্বাস
“হতে পারে ”
উপেক্ষা! ঘৃণা! না কী যন্ত্রনা!
দীর্ঘশ্বাস
নীরবতা
“আপনি কি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন?”
নীরবতা
অগোছালো খুচরো চুল। সরালো।
মাথা ঝাঁকুনি। বিনুনিটা একটু নড়লো।
“হ্যাঁ”
চোখ ওভারব্রীজে।
এপার ওপার লোকের আনাগোনা
একটা সাঁকো।
নীরবতা
“90 -92 সেশন! ”
নীরবতা
“মনে নেই ঠিক। ”
একটা ছোট ইঞ্জিন
সামনে দিয়ে সাঁৎ করে বেরিয়ে গেল।
নীরবতা
লোকজনের হুড়োহুড়ি
ট্রেন এসে গেছে
“চলুন। যাবেন তো!”
নিরুত্তর।
কাঁধের ঝোলা চেপে ধরে চড়ে গেল
“বসুন”
নিরুত্তর
নীরবতা
জামা ব্লাউজ ক্রমাগত ছুঁয়ে আছে পরস্পর!
“একটা কথা জিগ্যেস করার ছিল.”
আলতো করে এক একটা শব্দ অনেকদিন বলিনি।
চশমার কাঁচ শাড়ীর আঁচলে মুছলো
গলায় জমে থাকা ঘামও।
সামনে কলেজমুখো ছেলেমেয়ে মোবাইলে ব্যস্ত।
“আপনার নাম কী সু -জা -তা!
ইতস্তত
নীরবতা
চোখ বাইরে
ছোটছোট ঘরবাড়ী, গাছপালা ক্রমাগত পেছনে
“মানে..
সাতাশ বছর..
তাই..”
নীরবতা
“এখন আমাকে সবাই দিদিমণি বলে।”
একটা গোটা বাক্য। অনেক লম্বা।
শুনে
মনে হোল
অফিস ফেরতা ঘেমো জামা খুলে
ফ্যানের তলায় বসে ফুরফুরে হাওয়া যেন!
জানালা দিয়ে সূর্যের আলো হঠাৎ মুখে এসে পড়লো।
“আমাকে চিনতে পারছো! ”
কেউ চেন পুল করেছে মনে হোল
লম্বা লম্বা হুশ হুশ করে ট্রেন থেমে গেল।
নীরবতা
সামনের দুটো ছেলে, মেয়েটার হাঁটু চেপে
জানলায় মুখ সাঁটিয়ে দেখল কী ব্যাপার।
ঝোলা থেকে পুরোনো সেভেনআপ এর বোতল বার করে দু ঢোক জল খেল।
পুরোনো কালো বেল্ট খুলে ঘড়ি মুছলো।
ট্রেন খুলেছে আবার।
একটা ছেলে সীতাভোগ বিক্রি করছে।
সুজাতা, সীতাভোগ আর বর্ধমান
সে এক অমোঘ টান!
“বললে না? চি – ন – তে..”
সামনে বসা ছেলেমেয়ে গুলো সলমান – ঐশ্বর্যার প্রেমের গল্প ভাইরাল হয়েছে নেটে এদ্দিন পর তার গপ্প জুড়েছে। “শ্লা কী কান্ড মাইরি! “
মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।
“ইংরেজি সাহিত্যের ক্লাস…!”
বর্ধমান এসে গেছে হয়তো,
একজন কোমরের বেল্ট ঠিক করতে করতে উঠে দাঁড়াল।
” সৌমেন দা, চলুন।”
মেয়েটি আমার হাঁটু ছুঁয়ে উঠে গেল।
বাইরে এক ভদ্রলোক জানালায় উঁকি মারলো।
” সুজাতা, এই যে”
নেমে গেল
জানালার বাইরে থেকে একটা ছেলে
তারস্বরে বলে উঠলো” দাদা, আপনার সীতাভোগ!”
“না আমার প্রয়োজন নেই ”
” আরে দাদা,
দিদিমণি পয়সা দিয়ে তো আপনাকেই দিতে বলল।”