কথা সাগরে মৎসাপুরুষ গোবিন্দ ব্যানার্জী (ধারাবাহিক ভ্রমণ কাহিনী) – ষষ্ঠ পর্ব

রূপকথার গাঁয়ে পাঁচদিন

সুস্মিতা রাই। এখনও ওদের যৌথজীবন দু’বছর হয় নি। বাচ্ছার মুখ দেখেনি ওরা। ওর বর আগে মানেভঞ্জন-সুখিয়াপোখরি রুটে গাড়ি চালাতো। নিজের গাড়ি। ক’দিন আগেই এখানে ভীষণ ল্যান্ড স্লাইডিং হওয়াতে এখন রিম্বিক রুটে রিজার্ভ গাড়ি চালায়। তাতে বরং বেশী উপার্জন হয়। আর এই গাঁয়ে তার দু’দুটো ঘর। একটা নিজেদের থাকার জন্যে, অন্যটা ট্যুরিস্টদের জন্যে। তবে গ্রামখানা এতটাই নির্জনে এবং অফ রুটে যে এখানে ট্যুরিস্ট আসে খুব কম।

উঠোনের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে সুস্মিতা। ওর হাতে টিমটিম করছে টিনের লম্ফ (ল্যাম্প)। তার আবছা আলোয় চকচক করছে সুন্দরীর নিটোল চোখ দু’টো। কপালের নাদীর্ঘ উপত্যকায় ক’য়েকটা চূর্ণ চুলের গুচ্ছ দুলছে। ঘরোয়া নিতান্ত সালোয়ারে তাকে মনে হচ্ছে পাহাড়ী স্বপ্নের মায়া তরুণীর মত। সে খু ব আলতো কন্ঠস্বরে বলছে… ম্যায় তো নেপালকা লেড়কি হুঁ। আঠারো সালমে মানেভঞ্জন চলে আয়ি, কামকাজ কে লিয়ে। ও তো বর্ডার এরিয়া হ্যায় না। উধার হি প্রশান্ত্কে সাথ মিলজুল হো গয়ে। ব্যস্। শাদিকে বাদ ইধার আ গয়ি। মেরী শাদি আভি তো দো সাল নেহি হুয়া। হোনেবালা…উচ্ছল সুস্মিতার কথাগুলো সুরেলা গানের মত স্বপ্নের দেশে উড়ে যাচ্ছে। সোমনাথ সেই উড়ে যাওয়া স্বপ্নের আবছা রেশ ধ’রে বলছে… আচ্ছাই হুয়া। বহোত আচ্ছা ভি হ্যায় তুম। ঠিক হ্যায়, ফির মিলুঙ্গা…

কিন্তু পা সরছে না। স্ট্যচ্যুর মত তিনটি দীর্ঘ ছায়া আলোর পিছনে চুপ ক’রে অপেক্ষা করছে কি এক রহস্যের। সুস্মিতা বলছে… আজ সুবেমে সৌরভ অর ও লেড়কিকে সাথ হাম উধার নীচে… ঝর্ণাকে পাশ গয়ে থি। ও  নয়া আদমী হ্যায় না… ইসি লিয়ে হাম গয়ি। একদম জঙ্গলকা রোড হ্যায়। রোড আচ্ছা নেহি… উধার রোড হ্যায়ই নেহি। একদম জঙ্গল। জানবার ভি হ্যায়। তুম ভি যাও… লেকিন প্রিয়াকো লে যানা, আপ তো নয়া আদমী হ্যায় না…

সুস্মিতার আন্তরিক কথাগুলো ঘুরছে আমাদের আশপাশে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছি… সুস্মিতা হাতের আলোটা উঁচু ক’রে ধ’রে আছে। যদিও সেই ক্ষীণ আলোর আভাস লাগছে না পাথুরে পথের গহন আবছায়ায়। সামনেই সৌরভদের থাকার ঘর। আর ঘরের সামনে ঘাসময় উঠোন। উঠোনে পৌঁছতেই ঘরের দরোজা খুলে গেল। এক পাহাড়ী যুবকের আপ্যায়ণ আমাদের মুগ্ধ করল মুহূর্তে।… আইয়ে জী। ম্যায় তো প্রশান্ত্ হুঁ। আইয়ে।  তার কথা বলার ভিতরেই সৌরভ বেরিয়ে এলো… আরে আসুন… ওদের থাকার ঘরটা বেশ সজ্জিত। ঘরের বাইরে নীল আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে সোরভের সাথে কিছু কথা বলতে বলতে বিড়ি ধরালাম।

পাহাড়ী বিড়ির তেজ কতটাই বা উত্তপ্ত করতে পারে শরীরের জড়োসড়ো শীতলতাকে। সোমনাথ কাঁপা হাতে মোবাইল স্ক্রিনে গুগল সার্চ ক’রে এক্ষণের তাপমাত্রা জানাচ্ছে… ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আমার ছোটখাটো শরীরটা বুকের ভিতর জাপটে ধ’রে অন্তরঙ্গতার উত্তাপে একটু স্বস্তি নিচ্ছে সোমনাথ। বললাম… কী দারুণ একটা সময়ের যাপন ঘিরে থাকছে আমাদের… পথ উঠে গেছে অন্ধকারের অলিগলি ছুঁয়ে। সরু একটা  সুতোর মত আলো এঁকেবেঁকে চলেছে সেই না-দেখার কাছে আত্মসমর্পণের ভঙ্গীতে। আমরা কথা বলছিলাম না। তবুও রঞ্জিতার ঘরের পাশে পৌঁছতে জানালার টুকরো ফাঁক গলে একটা আপাতঃ বড় আলোকরেখা বাইরে এসে পাথুরে পথে আশাপ্রদ প্রশ্রয় ছড়িয়ে দিচ্ছে। একবার সেই আলো ঠিকরে পড়া জানালার দিকে তাকালাম। বুকের মধ্যে সাহস বেড়ে উঠছে। সোমনাথ লুটিয়ে পড়া আলোর ছবি তুলছে। চারিপাশের অন্ধকারে আর অনেক পুরোনো সবুজ গন্ধের ভিতর গড়িয়ে চলেছে সরু একটা আলোর নদী।

সেই আলোকিত ইশারা ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রিয়ার উঠোনে পৌঁছে গেলাম। রান্নাঘরের দরোজাটা একটু খোলা, ভিতরে সাগর প্রিয়া রাতের খাদ্য প্রস্তুতিতে মগ্ন। রাইশাকের হালকা সবুজ পাতা টুকরো ক’রে ছিঁড়ে একটা  জলপাত্রে রাখছে সাগর। প্রিয়া আমাদের দেখে সারা মুখে হাসি ছড়িয়ে দিল… আ গয়ে… অন্দর আইয়ে না আঙ্কল। চায়ে বনাউঙ্গী… আগুনের ত্যাড়াবাঁকা শিখা উনুনে চাপানো চ্যাপ্টা কড়াইয়ের পাশ দিয়ে ফসকে  উপরে উঠে উল্লাসে ‘আমরা জিতে গেছি’ গোছের ভাব করছে। সেই ছটফটে আলোক শিখার দিকে চেয়ে দু’জনেই শীতে জবুথবু কাতর হাতগুলো বাড়িয়ে দিলাম।

ঘন্টাখানেক আগেই খান পনের ক’রে সুস্বাদু মোমো পেটে সেঁদিয়েছি। তবু জানতে চাইছি রাতের মেনু। প্রিয়া উনুনে চায়ের জলপূর্ণ পাত্র চাপিয়ে বলছে… আপ কে লিয়ে আজ রাইশাক অর আলু সবজি হোগী। রোটি তো হ্যায় হি… অর কুছ্… হাসি ভরা মুখ প্রিয়ার। সোমনাথ বলছে… নেহি নেহি, অর কুছ ভি নেহি চাহিয়ে। উঠে পড়লাম চায়ের রঙিন কাপ হাতে। ঘরে যেতে হবে। এখন সময় একটু বিশ্রাম নেবার। সেই সকাল থেকে চলমান পা-গুলোকে নিস্তার দিতে হবে তো।

বাথরুম পর্ব মিটিয়ে উপরে উঠছি। প্রিয়াও উঠে আসছে সিঁড়ি দিয়ে। বারান্দায় দাঁড়ালাম একটু। দূরের ঘন জঙ্গলের দিকে আঙুল তুলে প্রিয়া শান্ত স্বরে বলছে… তিন সাল প্যাহলে শাদিকে বাদ যব হম ইধার আয়ি, উসি টাইম মে ইধার বহোত বহোত জানবার থা। ভাল্লু তো অগল বগল মে আতাই হ্যায় চিতা ভি আ যাতি… একদম ও বাথরুমকা পিছে। সোমনাথ চাকাপের কিনারে ঠোঁট ছুঁয়ে চেয়ে আছে বাথরুমের পিছনে ঘন ঝোপের ভিতর। আমার মনে হচ্ছে, কিছু একটা নড়াচড়া করছে সেই ঘন ঝোপে। প্রিয়া ঘরে ঢুকে ইতস্ততঃ সজ্জিত শিশু মনরঞ্জক খেলনাগুলোকে একপাশে জড়ো ক’রে আমাদের জন্যে বিছানা গুছিয়ে তুলছে আর বলছে… খানা আভি আভি হো যায়েগা। রুমমেহি ভেজ দুঙ্গী…

রাতের খাদ্যের জন্যে আমাদের তেমন উদগ্র ক্ষুধা ছিল না। তাও… রুটির টুকরোর ভিতর রাইশাকের ঝাঁঝ মুখের মধ্যে ঢুকে অভূতপূর্ব একটা আস্বাদন চাগিয়ে তুলল। সোমনাথ “কিচ্ছু খেতে পারবো না” বলেও খান তিনেক রুটি সাঁটিয়ে দিল। তরকারিটা আলু আর বীনস্ সংযোগে… মোটা মোটা পাহাড়ী লঙ্কা ভাসছে ঘন থকথকে ঝোলের উপর। এই তীব্র শীতটাকে কাবু করার জন্যে যথেষ্ট। সাগ্রহে কামড় বসাতেই কপালে ঘামের বিন্দু ফোঁটা ফোঁটা…

ঘুমের ভিতরে দু’টো কন্ঠস্বরের নরম বাক্যবিনিময়, আর জেগে উঠতে উঠতে নতুন সকালের উষ্ণ এক ঝলক রোদ্দুররেখা… শরীরের উপর থেকে নেমে যাচ্ছে মোটা কম্বলের ওম। যাবতীয় শীতপোশাকে নিজেকে মুড়ে শুয়ে পড়েছিলাম রাতে, তাই আরো একটু কুঁকড়ে পাশ ফিরলাম, গাঢ় আলসেমিটাকে ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। দরোজার ওপাশে এখন প্রিয়া নিঃশব্দ, সোমনাথ বলছে… হাম তো ফির আউঙ্গা, ফির মিলেঙ্গে, লেকিন উসি টাইম মে হাম তুমহারী চাইল্ড দেখনা চাউঙ্গা। একটু নিস্তব্ধতা। এবার প্রিয়া বলছে খুব ধীর ধীরে… ও সাগর তো আচ্ছাই লেড়কা হ্যায়। তব ভি, উনকো বোলনা… তুম শরাব মৎ পিয়ো। আভি তো বহোত পিনেবালা দোস্ত হ্যায় উনকা। ঠিক হ্যায় আঙ্কল, হম যা রহি, চা লেকে আভি আভি আয়ুঙ্গী। আবার নিস্তব্ধতা… সোমনাথের দীর্ঘ ছায়া দরোজার পর্দা সরিয়ে দিয়ে প্রশস্ত রোদ্দুরের আগে প্রবেশ করছে ঘরে। মাশাই.. উঠে পড়ুন। সকাল সাতটা বেজে গেল এইমাত্র।

মুখোমুখি সোফায় ব’সে পড়ল সোমনাথ। পিটপিটে চোখে দেখছি… মাথায় হনুমান টুপি, টুপির উপর কানা উঁচু ফ্যাশানটুপি, গলায় ঠেসে মাফলার আর কলার উঁচু ভারি জ্যাকেট, ডান হাতে টাইট ক’রে আঁটা মোটরসাইকেল চালানোর হাফ গ্লাভস্। ঠিক হোমস্ এর মত মনে হচ্ছে। আর্থার কোনান ডয়াল। বলছে… আমার প্রভাতী পরম্পরা কমপ্লিট। জলে হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না। সকালের শিশিরমাখা ঘাসে একটু হেঁটেও এলাম খালি পায়ে। কিন্তু একটু লেট হ’য়ে গেছে, সূর্যোদয়টা দেখতে পেলাম না। বাইরে প্রিয়া বলছে…আঙ্কল, চা হো গয়ে…আউঙ্গী- সোমনাথ উঠে দরোজার পর্দাটা সরিয়ে দিল। উঠে পড়লাম… কিন্তু ঐ শয়নাসনেই উপবেসিত হলাম।

প্রিয়া সব সময় হাসছে। এই সকালেই পরিপাটি তার পোশাক। বলছে… ব্রেকফার্স্ট ক্যা বনাউঙ্গি.. তারপর নিজেই বলছে উত্তরের অপেক্ষা না ক’রে.. রোটি অর সবজি। স্কোয়াশকা কন্দমূল অর আলু মিশাকে এক সবজি বনাকে দুঙ্গী। সোমনাথ যোগ করল… অর থোড়াসা আচার… ব্রেকফার্স্ট লেকে ইধার উধার ঘুমনে কে লিয়ে নিকলুঙ্গা। আভি সাত হো গয়ে, ন’বাজে ও বন যায়েগা তো আচ্ছা হোগা।

ফাঁকা চায়ের কাপটা টেবিলে না রেখে নীচে নেমে রান্নাঘরের মুখে কাপটা রেখে সোজা বাথরুমে…

পোশাকটা একটু অদল-বদল ক’রে দু’জনেই তৈরী হয়ে নীচে নেমে এলাম। উঠোন জুড়ে ফুলের হাসি। সাগর সকালেই চ’লে গেছে কাজে, ট্যুরিস্ট নিয়ে রিম্বিকের দিকে… রান্নাঘরের মুখে কাঠের চেয়ার দু’টো পাতাই আছে। ভিতরটা ঝকঝক করছে… তাকে তাকে সুদৃশ্য কাঁচের ছোট বড় জারে নানা রঙের আচার। অনেকগুলো হাঁড়ি সাজিয়ে রাখা শুধুমাত্র সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্যে। প্রিয়া আটা মাখছে। উনুনের কড়াইয়ে ফুটছে তরকারী। হালকা একটু কুয়াশার মত বাষ্প উড়ে যাচ্ছে প্রিয়ার মাথাভর্তি সুদৃশ্য কেশগুচ্ছ ডিঙিয়ে… কোন চাকি-বেলুন নয়, দু’হাতের তালু আর আঙুলের কেরামতিতে মোটা মোটা রুটি তৈরী হ’য়ে উঠছে কাঠের উনুনের মুখে। রুটির তাগড়াই চেহারা দেখে সোমনাথ ঘোষণা ক’রে দিল… আমি দু’টো রুটি নেবো… মাশাই… প্রিয়াকে বললাম… হামারে লিয়ে পাঁচ/ছ’ঠো রুটি বনাইয়ে…

স্কোয়াশের মূল আর আলু মিশ্রিত তরকারি যে এত সুস্বাদু হবে… ভাবতেই পারিনি। সঙ্গে আচার, আর পাহাড়ী লঙ্কার কুঁচো। এবং গাঢ় সোনার বরণ চা। রুটির সংখ্যাটা মনে হয় ঠিক রাখা যাবে না। ঠিক তখনই সোমনাথ গলা চড়িয়ে বলল… প্রিয়া… অর রোটি হ্যায় ক্যা… প্রিয়া হো হো ক’রে হেসে উঠল।

যত্নে রাখা বা আগলে রাখা প্ল্যানগুলোকে ছাপিয়ে যাচ্ছে হাজির হওয়া দৃশ্যমান উদযাপন। তাই আর স্বপ্নের ভিতরে পরিকল্পনা না ঢেকে রেখে বললাম… রোডমে কোই আদমী মিল যায়েগা তো ঝর্ণাকে পাশ যাউঙ্গা। প্রিয়া খাদ্যশূন্য পাত্রগুলো গুছিয়ে নিতে নিতে বলছে… আপ তো নয়া হ্যায় না আঙ্কল, ইসি লিয়ে… ও জঙ্গলকা রোড বহোত হি খতরনক হ্যায়। প্রিয়াকে আস্বস্ত ক’রে দু’টো চার পাঁচ ফুটের পাহাড়ী পথচলা সহায়ক লাঠি খুঁজে নিলাম পাশেই অসমাপ্ত একতলা ঘরে স্তুপীকৃত জমায়েত থেকে। সোমনাথ কানের কাছে মুখ নীচু ক’রে বলছে… মাশাই, বেশ বড় একটা ছুরিও নিয়ে নিয়েছি ব্যাগে। জঙ্গলের পথে যদি লাগে…

প্রিয়া উঠোনের ধারে দাঁড়িয়ে হাসিতে মুখমন্ডল আলো ক’রে হাত নাড়ছে। বলছে… সাবধানসে… আমরা নেমে চলেছি ক্রমশঃ উৎরাইয়ের দিকে। এই ঢালু পথটা প্রায় এক কিলোমিটার পেরিয়ে তবে গিয়ে মিশেছে রিম্বিকগামী পথটায়। পাশেই রঞ্জিতার ঘর। যেন একঝাঁক রঙিন প্রজাপতি… উঠোনটাকে ঘিরে যে সীমান্ত… তা গাঁথা হয়েছে নানা রঙে উজ্জ্বল ফুলগাছের বিনুনিতে। তকতকে উঠোনের এপ্রান্ত থেকে ওদিকে ছুটে পালিয়ে গেল এক জোড়া সাদা খরগোশ। সোমনাথ ডাক দিল… রঞ্জি তা … কোন উত্তর নেই। আবার উঁচু স্বরে… র ঞ্জি তা … উল্টো দিকের ঘর থেকে, প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ দরোজার মুখে ব’সে… বলছে… রঞ্জিতা তো ঘরপে নেহি হ্যায়। লকড়ি লানে কে লিয়ে ও গয়ে উপ্পর মে। ও আয়েগা… শাম হো যায়েগা… উপরে তাকালাম। ঐ দূর উঁচুতে পাইন গাছের ঘন জঙ্গল। গতকাল প্রিয়ার রান্নাঘরে দেখেছি ঢাঁই করা কাঠের স্তুপ। জ্বালানী। ঠিক তখনই চা-কাপে ঠোঁট ছুঁয়ে সৌরভ বলছিল… উপরের পাইন জঙ্গলে ঘুরে এসো সময় ক’রে, দেখবে ভালুকের নখ-আঁচোড়ের টাটকা দাগ। মোটা পাইন গাছের শক্ত বাকল ক্ষত- বিক্ষত হ’য়ে গেছে ধারালো নখরে। ঐ বৃদ্ধের দিকে তাকালাম। সকালের রোদ্দুর মাখছে শরীরে। ঘরে কেউ আছে ব’লে মনে হ’চ্ছে না। সোমনাথ বলছে… রঞ্জিতাকা হাসবেন্ড হ্যায় ক্যা…? লোকটি বলছে… ও তো গাড়ি লেকে সুব হি নিকল গয়ে। ব্যাস্। এই যে একটা সকাল হ’য়ে উঠল, এই যে পাহাড়ী গাঁ, জীবনের প্রতিটা দিনের একটা ফ্রেশ কাট আপ… একটা তাস। একটা অনুরূপ গল্পবইয়ের যে কোন একটা পৃষ্ঠা। উড়তে উড়তে চ’লে যাচ্ছে স্বপ্নের মত, আর স্বপ্নেরা অবিরত বুলিয়ে তুলছে পরম্পরাকে।

রূপকথার গাঁ এখন নিস্তব্ধ। মোবাইল ঘড়িতে ঠিক সকাল সাড়ে ন’টা। প্রতিটা ঘরই চুপ ক’রে আছে। ঘরের দরোজাগুলো অধিকাংশই হাট ক’রে খুলে অপেক্ষা করছে, দু’চারটে মুরগী খুঁটে খাচ্ছে পোকা, ঐ যে দূরের উঁচু ঢালে এক মাঝবয়সী পুরুষ কাজে ব্যস্ত। উৎরাইটা শেষ হ’য়ে আসছে। পথপাশের সেই ফুলগাছে মোড়া রঙিন বাড়িটা। কেউ নেই এখন। সবাই গেছে জীবনের রসদ সংগ্রহে।

….. ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *