ধারাবাহিক বড় গল্পে গৌতম বাড়ই (পর্ব – ১৬)

স্মৃতিকথার ঝিকিমিকিরা
বর্ষা শেষে শরৎ আসে

ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই
আমরা যা দেখি তাইতো মনে রাখি। হয়ত তার থেকে কিছু স্মৃতির ছবি ফিকে হতে হতে ক্রমশঃ হারিয়ে যায়। তারপর কোন একদিন, কোন এক বিশেষ মুহূর্তে বিশেষ কিছু কারণে দেখবে সেই ফিকে হয়ে যাওয়া স্মৃতি বেশ মনে পড়ল। তবে কখনো ভাবতে বসলে পুরোনো স্মৃতির পথ ধরেই কিছু কিছু জিনিস বেশ স্পষ্ট মনে পড়ে যায়। ঐ যে আমরা হঠাৎ করে বলিনা কোন সুন্দর এক সকালে, আজ যেন পুজোর মতন রোদ উঠেছে। পুজো কবে রে? বন্ধুরা একে ওকে পরস্পরে জিগ্গেস করি।
ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই
সত্যি কেউ যেন সফেদ কটন বা তুলো নীল আকাশের গায়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ভাসিয়ে দিয়েছে। আজ আকাশটার নীল রঙ বড়ই সুন্দর। ঘাড় তুলে আকাশের নীলে ভাসিয়ে দি মন। এ নীল নাকি আসমানি বাহার। নীলেরও কত বৈচিত্র্য। প্রকৃতি যেন রঙ দিয়ে রাঙানো। যেমন সবুজের কত বৈচিত্র্য, হাইওয়ে ধরে যেতে যেতে দেখবে মাঠের ফসলের সবুজের বিভিন্ন বাহার। গাছের সবুজের বিভিন্ন বাহার। নীলের ও অনেক বাহার। কবি তাইতো গেয়ে ওঠেন- “নীল আকাশে কে ভাসালে শাদা মেঘের ভেলা”। উত্তরে তাকিয়ে চমকে উঠি নীল পাহাড় যেন নাকের কাছে নেমে এসেছে। ঝর্ণার সাদারেখা অগুনতি। আলোছায়া খেলা। শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা নয়, আরও কিছু গিরিশৃঙ্গ দেখা যায়। মন আনন্দে নেচে উঠে। শরৎকাল এসেছে আবার প্রকৃতির রূপ বদলাচ্ছে। এক- একটা দিন এমনি হয়, আনন্দে চোখের কোণ বেয়ে জলের ধারা নামে। তোমাদের হয়? বর্ষার শেষে ঋতুরাজ শরৎ আসে। আমাদের বড় উৎসবের কালয়বা সময় এসে গেল। ঢাক কাঁসর ঘন্টা শিউলি কাশ নতুন জামা কাপড় ইত্যাদি ইত্যাদি ঋতুরাজ সঙ্গে নিয়ে আসে। প্রকৃতি যেন রঙে আর শব্দে ধ্বনিময় হয়ে ওঠে।
ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই
আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!
শহরের রাস্তাঘাট সব ভরে যাবে আশপাশের চা-বাগানের আর পাহাড়ের লোকজনে। বাজার গমগম করে উঠবে। এমন এক শরৎ ঋতুর ছুটির দিনে– দুপুরের হাল্কা রোদ লেগে রয়েছে আর বিকেল হবো- হবো, সেই বিনের আওয়াজ। ” মন দোলে রে ” ( এর পরেই বড় হতে হতে সবাই যেমন জানে আমিও জেনেছিলাম, বিখ্যাত গায়ক সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরারোপিত ‘ নাগিন’ সুপার ডুপার হিট সিনেমার গান এটি। পরে যা সাপুড়েরা নিজেদের একচ্ছত্র অধিকারের পেটেন্ট বানিয়েছিল), ছুটে জানলায় এলাম। দেখলাম এক সাপুড়ে সাপখেলা দেখাচ্ছেন। সব সাপুড়েকে তখন বাবুরাম সাপুড়ে মনে হত। ফনাতোলা গোখরো তারপর দু- মুখো( যদিও তা হয় না) কালনাগিন এইসব সাপ সব দেখেছি তখন সামনাসামনি ঐ সাপুড়েদের কল্যাণে।এখন তো নিষিদ্ধ। যেমন নিষিদ্ধ কালো ভাল্লুক নিয়ে খেলা। ভাল্লুকের জ্বর দেখাতেন বাজিকর। বাঁদর ও থাকত তাদের সাথে। তাদের নাম বৈজয়ন্তীমালা আর দেবানন্দ। এখন তারাও নেই। এইভাবে বহুযুগ ধরে প্রত্যেকের শৈশবের কিছু জিনিস চিরতরে হারিয়ে যায়। আর যাবেই। এটাই কালের তথা সময়ের নিয়ম। তবে ঐ সাপ নিয়ে ছোটোবেলা থেকেই কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানো আছে, একে গুজব বা অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি বলব। বিনের ঐ সুরে সাপ দোলে না, কারণ সাপ কানে শুনতে পায় না। সাপের জিভ চেরা, ঐ জন্য দুধপান করবার মতন চোষ্য ক্ষমতা সাপের নেই। মানুষের ভয় থেকে রহস্যবাদ থেকে পৃথিবীতে আদিকাল থেকেই ভ্রান্ত অমূলক চিন্তাধারা চলে এসেছে। তোমাদের চিন্তাধারায় একটু শান দিলেই এ বুঝতে পারবে, যুক্তিবাদী হওয়া ভাল ঐ কুযুক্তির উপর ভর করে না থেকে।
ফটো সৌজন্য: পাপুন ভট্টাচার্য