• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক বড় গল্পে গৌতম বাড়ই (পর্ব – ২০)

স্মৃতিকথার ঝিকিমিকিরা

(সব ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই)

ইতিহাস কাকু

ইতিহাস বলতে কী কী বোঝায়? আর্য্যদের আগমন থেকে ব্রিটিশদের নির্গমন এই তো নাকি? আরও কিছু? ইতিহাস মানে সিন্ধু সভ্যতা, হরপ্পা আর  মহেঞ্জোদারো, নালন্দার ভাঙ্গাস্তূপ থেকে পোড়ো মন্দির কতকিছু। ইতিহাস মানে যুদ্ধ, ইতিহাস মানে রক্তারক্তি হিংস্রতা। ভুলে যাওয়া ভালো , তবুও বড়রা বলে দেখবে– এম্মা! তুই ইতিহাসটা- ও জানিস না? কে কবে কার মাথার দিব্যি দিয়েছে ইতিহাস জানতে হবে! আমাদের তোমাদের মতন এই বেলায় কিছু জনপ্রিয় ছড়ার প্রচলন ছিল, কে যে লিখেছে কেউ জানেও না। অথচ মুখে-মুখে ঘুরত। এই যেমন–
ইতিহাসে পাতিহাঁস
অঙ্কতে গোল
ভূগোলেতে মাথা নেড়ে
হয়েছি পাগল।
এখন ইলিশের ভরা মরসুম শুরু হবে। আশাকরছি ইলিশমাছ তোমাদেরও খুব প্রিয়মাছ। একটা ছড়া শুনেছিলাম এই ইলিশ নিয়ে, খুব মনে পড়ে।
ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা
বোয়ালমাছের দাড়ি
ইয়াইয়া খান ভিক্ষে করে
মুজিবরের বাড়ি।
কে মুজিবর আর কেই বা ইয়াইয়া খান বলব না। আগ্রহ থাকলে জানবার ময়দানে খেলতে নেমে যাও। সেরকম আর একটি ছড়া খুব জনপ্রিয় ছিল–
পেন পেন পেন
পাইলট পেন
প্লেন থেকে নেমে এলেন
সুচিত্রা সেন।
ওপেনটি বায়স্কোপ কিংবা আপন বাপন চৌকী চাপন, এরকম কত ছড়া সেই ছোটোবেলার মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে এর সঙ্গে মনে পড়ে সেই ইতিহাস কাকুর কথাটাও। যে ইতিহাস নিয়ে এ লেখার গোড়ায় শুরু করেছিলাম। আমাদের ছোটোদের খেলার মাঠের ধারে এক ইতিহাস কাকু আসতেন। অবশ্য ইতিহাস কাকু নামটা আমরা সবাই ওনার আড়ালে বলতাম। খেলার মাঠে ঢুকে পড়ে বলতেন আজ তোমাদের সাথে একটু ইতিহাসের গল্প করব। খেলার শেষে কেউ বাড়ি চলে যাবে না। আমাদের মধ্যে স্রেফ দু- তিনজন ঐ ইতিহাস কাকুর গল্প শুনতাম, বাদবাকি কেটে পড়ত।

আমি কিন্তু বেশ গভীর মনোযোগ সহকারে তার বলা ইতিহাসের গল্পগুলি শুনতাম। একদিন, দু- দিন, তিনদিন হয় এভাবে দিন গুনতে গুনতে বছর শেষ হয়ে গেল ইতিহাস কাকুর আর দেখা পেলাম না। ইতিহাস কাকু নিজেই ইতিহাস হয়ে গেলেন। এ পর্যন্ত গল্পটা একদম সিধেসাদা। এ ধরণের কতগল্প সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে তাই কোন আহামরিত্ব নেই। কিন্তু চমকটা এরপর এবং সবার শেষে।তবে ইতিহাস কাকুর কাছ থেকে শোনা এই ছড়াটিও বলছি এবার–
সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি
বোমা ফেলেছে জাপানি
বোমের মাঝে কেউটে সাপ
ব্রিটিশ বলে বাপরে বাপ!
গুয়াহাটিতে ট্রেনে চলেছি। মালিগাঁওতে উত্তর- পূর্ব রেলের সদর দপ্তরে রেলের চাকরির জন্য পরীক্ষার কেন্দ্রে। ট্রেনে যেতে যেতে এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হল, একমাথা সাদাচুল। সফেদ মাথার ওনাকে এমনিতে মুখ দেখে চিনতে পারছিলাম না অথচ কথা বলবার সময় এতটাই চেনা লাগছিল যে মনে করবার চেষ্টা করছিলাম। পরিচয় হবার পর জানতে পেরেছি উনি বরপেটা কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক। তাহলে কী ছোটোবেলার সেই ইতিহাস কাকু! জিগ্গেস করতেই অস্বীকার করলেন। আমিও মেনে নিলাম আমার ভুলটা। আর এ তো হতেই পারে। গুয়াহাটির ঘন্টা দু- আড়াই আগে বরপেটায় নেমে গেলেন তিনি। তবে নামবার আগে তার সেই অমোঘ বাণীটি এখনও ভুলিনি। চমকে তো ওখানেই। বলে গেলেন—
” কিছু ভুল, ভুল নয়। বেশি কৌতূহলে এগিয়ে গেলে অনেক জানা বাকি থেকে যায়। ইতিহাসের যাদু রহস্য হল , আসল রহস্য! তবুও বলছি ইতিহাসে বুঁদ হয়ে থেকো। ইতিহাসের মতন ইতিহাস কাকুও এক মৃত অধ্যায়। জানবে বেশি, বলবে কম। বলবে আরও বেশি, নিজেকে জানাবে আরও কম। বেশ তবে চলি। আসছি।আর হয়ত এ জীবনে দেখা হবে না। দেখা হওয়াটা নির্ভর করে দু- জনের প্রবল ইচ্ছের ওপর এবং তা ভীষণভাবে সত্যি!”

আমার এইসব কথায় মাথাটা আরও বেশি অদ্ভূত রকমের চক্কর দিতে শুরু করেছিল। কী? বুঝলে কিছু তোমরা?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।