ধারাবাহিক বড় গল্পে গৌতম বাড়ই (পর্ব – ১৫)

স্মৃতিকথার ঝিকিমিকিরা
সেই বর্ষার সেবক পাহাড়

করোনেশন ব্রিজ। ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই
ছাতিফাটা রোদ মাথায় নিয়ে,বর্ষা বাদলের ভেজা গায়ে, মানে এই গ্রীষ্মের রোদ্দুর গায়ে মেখে, কী এই ভিজতে ভিজতেই বড় হয়ে ওঠা– টের পাবেনা কিস্যু কখন বড় হয়ে উঠলে! সবকথাই তখন আমার মতন স্মৃতিকথার দলে এসে ভিড় করবে। তবে বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু, এই প্রিয় ঋতুকে নিয়ে এ পর্বেও কিছু লেখার ইচ্ছে হল।
“ধুয়ে যায় যত তাপ জর্জর গ্রীষ্মের,
ধুয়ে যায় রৌদ্রের স্মৃতিটুকু বিশ্বের।
শুধু যেন বাজে কোথা নিঃঝুম ধুক্ধুক্,
ধরণীর আশাভয় ধরণীর সুখদুখ।”
ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই
আবারও সেই সুকুমার রায়ের শ্রাবণে কবিতা আওড়াতে হল। আসলে ছোটোবেলার পাঠ্যবইয়ে এই কবিতা পড়বার পড়ে, একেই আমার বর্ষার সেরা কবিতা বলে মনে হয়েছে। বাইরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হলে আমার এই কবিতা মনে পড়বেই। তোমাদেরও নিশ্চয় এমন কোন ভালোলাগা কবিতা রয়েছে। কিছু বর্ষার ছড়া পাঠাতে পার এই সময় শ্রীতন্বী দিদির কাছে তোমাদের হৈ চৈ পত্রিকাতে। বর্ষার ছড়া বা বর্ষার ছবি। আর বর্ষা যখন, তখন বাঙালির খাওয়া- দাওয়া না থাকলে কেমন হয়! খিচুড়ি আর এই নানারকম ভাজাভুজি কেমন লাগে এই বৃষ্টিমাসে? বেশ জমবে বল। এবার আমি আবার গল্পে ফিরি। বর্ষার গল্পে। বৃষ্টির গল্পে। শুনতে পেলাম এরকম প্রবল বৃষ্টিতে সব পাহাড়ী নদীগুলি জলের তোড়ে ফুঁসছে। আর রেডিওতে নিয়ম করে ( তখন দূরদর্শন আসেনি) প্রতি বর্ষায় যেন একই খবর শুনতাম- “আকাশবাণী কলকাতা, খবর পড়ছি, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের বিশেষ বিশেষ খবর হল- উত্তরবঙ্গের প্রবল বর্ষণে শিলিগুড়ি থেকে সিকিম এবং দার্জিলিং – এর যোগাযোগ ব্যাবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে, পাহাড়ী রাস্তায় যোগাযোগ বিপর্যস্ত ধ্বসের কারণে।” আরও কত কী নদীতে লাল সংকেত, হলুদ সংকেত লেগে থাকত।
ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই
রাস্তায় তবুও মানুষকে বেরোতে হয়। হাট- বাজারে যেতে হয়। ছাতা আর বর্ষাতি পড়ে কত লোকজন রাস্তাঘাটে। মহাবীরস্থানের ট্রাকস্ট্যান্ডে থিকথিকে কাদা। কাজের সময়টুকু আর সন্ধের মুখে সব শুনশান। পাড়ায় রাতের নিস্তব্ধতা। নদীর দু’পাড় উপচে যেত জলে। ঘোলা জল মহাকলরবে বিপুল উচ্ছ্বাসে ছুটে চলেছে ঘূর্ণি তুলে। নদীর চলার পথে সেই যে পাগলপারা চলা, আজ সেই রিভার- বেডে লাখো- লাখো লোকের বসতি। নদীও শীর্ণকায়। যদি কখনও আবহাওয়ার পরিবর্তনে বিপুল পরিমাণে বৃষ্টি হয় তাহলে এক বিরাট বিপর্যয় দেখা দেবেই। সেই বৃষ্টি ভেজা সন্ধের রাতগুলো খুব মনে পড়ে। ঘরের জানালা দিয়ে চুপিসারে বাইরে বর্ষাতি ছাতা মাথায় গামবুট পরা কোন আগন্তুক- কে ঐ সন্ধে রাতে রাস্তার হাল্কা আলোয় যেতে দেখলে মনে হত গোয়েন্দা গল্পের কথা। আমাদের ঐ কিশোর বয়সে স্বপনকুমারের সেই চটি চটি গোয়েন্দা গল্পের বই খুব বিক্রি হত। সুবিধে ছিল বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে পড়া যেত। জানিনা এখন সে বই পাওয়া যায় কিনা? গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জী আর সহকারী রতনের কত ঘটনাই না পড়েছি। বইয়ের ওপরে লেখা থাকত কলেজ স্টুডেন্টদের জন্য। বুঝতেই পারছ, সে বই প্রকাশ্যে পড়া যাবে না। আমার আবার কোন বাছাই ছিল না, বই পেলেই একটু বোধগম্য হলেই পড়ে ফেলতাম। সে গোয়েন্দা হোক বা ভূতের গল্প।
এর মাঝে এক বর্ষাকালে একদিন সেবক পাহাড়ে বাসে চেপে গিয়েছিলাম। তখনও সেবক পাহাড়ের কালিবাড়ির তেমন প্রচার এবং প্রসার ঘটেনি। বাঘপুল পেরিয়ে ওপারে ডুয়ার্সের রাস্তায় হেঁটে যেতেই কলকল ধ্বনি তুলে ঝর্ণার জল দেখতে পেয়েই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। পাহাড়ের উপর থেকে পাথর ভাঙ্গা সেই জলের তোড় নিচে তিস্তা নদীতে আছড়ে পড়ছে। সেবকের এই তিস্তানদী, ঋতু বদলে তার ভোল বদল করে। একদিন সারাটা দুপুর তোমরা এমন বাদলা দিনে বর্ষার মেঘ গায়ে মেখে সেবকে কাটিয়ে এসো। এখন তো কত বাস কত গাড়ি, সেবকবাজারে খাবারের দোকান, হোটেল- মোটেল কত কী! শহরের উইক এন্ডে টাইমপাসের ভাল জায়গা। রাস্তাঘাট ও সুন্দর।
ফটো সৌজন্য: গৌতম বাড়ই